বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তারুণ্যে ভরপুর মাশরাফি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তারুণ্যে ভরপুর মাশরাফি

প্রশ্ন খুব সহজ। উত্তরটা আরও সহজ। অবলীলায় উত্তর দিয়ে দিবেন যে কোনো ক্রিকেটপ্রেমী। কোনো পেসার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কখনো ইনজ্যুরিতে পড়েননি? উত্তর, ভারতের সাবেক অধিনায়ক কপিল দেব। আরও একটি প্রশ্ন। তবে বিস্ময়মাখা! কোনো পেসার ছয় ছয়টি সার্জারি নিয়ে এখনো দাপুটে ক্রিকেট খেলছেন? উত্তর, বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-২০ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০০১ সালে ক্যারিয়ার শুরু। ২০১৬ পেরিয়ে যাচ্ছে। ১৫ বছর পেরিয়েছে। এখনো খেলছেন মাশরাফি। শুধু খেলছেন বললে ভুল। খেলছেন, খেলাচ্ছেন এবং দেশকে জয়ের আনন্দে ভাসাচ্ছেন। ছয় ছয়টি সার্জারির পরও মাশরাফি যে খেলছেন, এটাই এখন বিস্ময়। বয়স ৩৩, অথচ খেলছেন তরুণদের মতো। দেশের লাখ লাখ কিশোরের আদর্শ মাশরাফি কোথায় থামবেন? সময় বলবে। কিন্তু তার আগে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, বাংলাদেশ গত দুই বছর যে ক্রিকেট খেলছে, তার সোনার কাঠি, রুপার কাঠি কিন্তু মাশরাফি।

২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক। বয়স তখন ১৮। উচ্ছল, টগবগে তরুণ। গতিতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতায় মাশরাফি হয়ে উঠলেন দেশের এক নম্বর পেসার। কিন্তু ভাগ্য খুব বেশি সহায় না হওয়ায়, ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে পড়তে হলো ইনজুরিতে। তখন থেকেই ইনজুরি হয়ে উঠল মাশরাফির বন্ধু। পিছিয়ে পড়ল ক্রিকেট। কিন্তু অদম্য মাশরাফি থামতে রাজি নন। হিমালয়সম দৃঢ়তা নিয়ে ফিরলেন ক্রিকেটে। আবারও বাদ সাধলো ইনজুরি। ফের থমকে দাঁড়াতে হয় দেশসেরা পেসারকে। দুই হাঁটুতে সার্জারি হলো। তাতে যে কোনো সুস্থ ব্যক্তিরই যেখানে থেমে পড়ার কথা। কিন্তু মাশরাফি ফিরেছেন এবং খেলছেন। তারুণ্যের সেই তেজ না থাকলেও অভিজ্ঞতায় আরও ক্ষুরধার হয়েছেন। হয়েছেন তরুণ ক্রিকেটারদের আদর্শ। 

২০১৪ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা যখন তলানিতে, হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখনই ক্রিকেট বোর্ড যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়। টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই অধিনায়ক প্রথা চালু করে। টেস্টে মুশফিকুর রহিমকে অধিনায়ক রেখে ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে নেতৃত্ব তুলে দেয় মাশরাফির হাতে। মাশরাফি অবশ্য এর আগে আরও দুবার অধিনায়ক ছিলেন। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ইনজুরিতে পড়ে নেতৃত্ব হারান। এরপর ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে ফিরে পান নেতৃত্ব। ফের অধিনায়কত্ব হারান ইনজুরিতে। তখন মনে হয়েছিল, নেতৃত্ব বোধহয় ঠিক মানাচ্ছে না মাশরাফির সঙ্গে। কিন্তু তিনিই যে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হবেন, সেটা কে জানতো। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয়বারের মতো যখন অধিনায়ক হলেন মাশরাফি, পাল্টে যেতে লাগলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। দ্রুত উপরে উঠতে থাকল বাংলাদেশের সাফল্যের গ্রাফ। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে শুরু। এরপর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট শক্তিকে পেছনে ফেলে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। এরপর ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০৬ সালের পর জায়গা করে নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বদলে দেওয়ার নায়ক মাশরাফি ইনজুরিতে না পড়লে ৩৬ টেস্টের জায়গায় হয়তো খেলতে ৭০-৭৫টি টেস্ট। ১৬৬ ওয়ানডের জায়গায় খেলতেন ২৫০ টেস্ট। ৭৮ টেস্ট উইকেটের জায়গায় সেটা ২০০ হতে পারতো। ২১৬ ওয়ানডে উইকেটের জায়গায় সেটা হতে পারতো ৩০০-৩৫০ উইকেট। হয়নি। ইনজুরি হতে দেয়নি। আক্ষেপ রয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে মাটি চাপা দিয়ে এখন বর্তমানটাকেই  উপভোগ করছেন, ‘আক্ষেপ করে কোনো লাভ নেই। এখন সময়টাকে উপভোগ করছি।’ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ে ছিলেন। ভারতকে প্রথম হারানোর নায়ক মাশরাফির এখন স্বপ্ন আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বের পরাক্রমশালী দল হবে, ‘গত দুই আড়াই বছর ধরে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর