শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আফ্রিদি-আরাফাতে রঙিন রংপুর

মেজবাহ্-উল-হক

আফ্রিদি-আরাফাতে রঙিন রংপুর

শহীদ আফ্রিদি আর আরাফাত সানি। কাল বিপিএলে রংপুরের হয়ে অসাধারণ বোলিং করেন দুজনে। মূলত তাদেরই দাপটে খুলনা মাত্র ৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায় —রোহেত রাজীব

‘নিষিদ্ধ’ হওয়ার পর তাসকিন আহমেদকে নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে তার বিন্দু পরিমাণও হয়নি আরাফাত সানিকে নিয়ে। ভক্তদের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা- বিসিবিও যেন আরাফাতের বেলায় খানিকটা সৎ মায়ের ভূমিকা পালন করেছিল। তাই তো দেখা যায় বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার আগেই তাসকিনকে দলে রাখা হয়, আরাফাতকে বিবেচনা করা হয় না। তাসকিনের সঙ্গে একই সময়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, একই সময়ে নিজেকে ‘বিশুদ্ধ’ হিসেবেও প্রমাণ করেন সানিও। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড সিরিজের মতো নিউজিল্যান্ডের সফরের দলেও উপেক্ষিত সানি। আর সেই উপেক্ষার জবাবটা মঞ্চ হিসেবে বিপিএলকেই যেন বেছে নিয়েছেন। রংপুর রাইডার্সের জার্সিতে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ১৯ রানে এক উইকেট নেওয়ার পর গতকাল খুলনা টাইটানসের বিরুদ্ধে আরাফাত সানি মহানাটকীয় এক ঘটনার জন্ম দিলেন। ২.৪ ওভার বোলিং করে কোনো রান না দিয়ে তিন উইকেট। ১৬ বলে করে ১৬টি ডট। টি-২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

রংপুরের সবচেয়ে বড় তারকা পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচে কাকতালীয়ভাবে ১২ রানের বেশি দেননি। তবে আগের ম্যাচে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র একটি। গতকাল ৪ উইকেট নিয়ে ভেঙে দিয়েছেন খুলনার ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড। ওয়ালেস, অলক কাপালি, শুভাগত ও নুর আলমকে ফিরিয়ে দিয়েছেন পাক তারকা।

গতকাল রাতে আফ্রিদি-আরাফাতের আলোয় রঙিন হয়ে যায় রংপুর রাইডার্স। দুই স্পিনের ঘূর্ণি বিষে চরম লজ্জায় পড়ে যায় খুলনা। মাত্র ৪৪ রানেই অলআউট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এটিই এখন সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা ছিল বরিশাল বুলসের। গত আসরে তারা সিলেট সুপার স্টারসের কাছে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। এবার কলঙ্কটা নিজের কাঁধে তুলে নিল খুলনা। শুধু বিপিএল নয়, হয়তো টি-২০ ক্রিকেটের ইতিহাসেই টাইটানসের স্কোরটি সর্বনিম্ন। গতকাল ১০.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় খুলনার ইনিংস। উইকেট যেমনই হোক আজকালকার দিনে ২০ ওভারের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের এমন ভরাডুবি আর দেখা যায় না।

 বোলারদের মুখে তুলে দেওয়া খাবারটা বেশ তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে ফেলেন রংপুরের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ম্যাচের মতো গতকাল ৯ উইকেটের বিশাল এক জয়। আগের ম্যাচে অপরাজিত ৮০ রান করা আফগান তারকা মোহাম্মদ শাহজাদের উইকেটটি কেবল হারাতে হয়েছে রংপুরকে। তবে সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিথুন মিলে মাত্র আট ওভারেই খেলা শেষ করে দেন।

টি-২০ খেলা অথচ দুই ইনিংস মিলেও ২০ ওভার খেলা হয়নি। গতকাল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা হয়ে গেছে দর্শকদের। এমনিতেই একটা ম্যাচ। সেই ম্যাচের দৈর্ঘ্য যে দুই ঘণ্টাও হলো না। মাঝের বিরতিসহ ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটেই খেলা শেষ।

পর পর দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে জয়। রংপুর রাইডার্সের এই জয়ে বড় অবদান অধিনায়ক নাঈম ইসলামের। দলে রংপুর বিভাগের একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। অভিজ্ঞ তো বটেই। সে কারণেই রাইডার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি শহিদ আফ্রিদির মতো তারকা থাকার পরও নাঈমকেই দলের দলপতি বানিয়েছে। আর এর ফলটাও হাতেনাতেই পাচ্ছে রংপুর রাইডার্স। নাঈমের ‘আক্রমণাত্মক ক্যাপ্টেন্সি’তে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের দলটি। প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্স তামিম ইকবালের চিটাগং কিংসের মতো ভয়ঙ্কর দলকেও উড়িয়ে দিয়েছে। আর গতকাল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক। ম্যাচ শুরু হতে না হতেই খুলনা টাইটানসকে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দেয় রাইডার্স। গতকাল একটি মাত্র ম্যাচ ছিল। আকাশও মেঘলা ছিল। সে কারণে রাতের ম্যাচে টস হয়ে গিয়েছিল বড় ফ্যাক্টর। প্রথম ম্যাচের মতো গতকালও যেন ভাগ্য সহায় ছিল নাঈমের। টানা দ্বিতীয় টস জয়। উইকেটে সুবিধা আদায় করে নিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেয় রাইডার্স। তারপর দেখা যায়  নাঈমের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব। আগের ম্যাচের মতো গতকালও ইনিংস ওপেন করিয়েছেন সোহাগ গাজীকে দিয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেট তুলেন। খুলনার ওপেনার ক্যারিবীয় তরুণ নিকোলাস পুরান ওয়াইড ভেবে বল সেরে দেন। কিন্তু বল গিয়ে আঘাত করে লেগ স্ট্যাম্পে। সেই যে শুরু তারপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে টাইটানসের ব্যাটিং লাইনআপ। আরাফাত সানি ও শহিদ আফ্রিদি এসে খুলনাকে যেন ছিটকে ফেলে দেন। নাঈমের বোলিং পরিবর্তনের দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো। শুরু থেকেই রাইডার্সের বোলাররা দাপটের সঙ্গে বোলিং করলেও প্রথম পাঁচ ওভারে পাঁচ বোলারকে ব্যবহার করেন। প্রথম পাঁচ ওভার শেষে টাইটানসের রান ছিল ৫ উইকেটে ১৮। সেখান থেকে ৪৪ রানে অলআউট। একমাত্র শুভাগত ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটা ছুতে পারেনি।

বিপিএলে দলীয় সর্বনিম্ন ৫ স্কোর

১. খুলনা টাইটানস ৪৪ রান, রংপুরের বিরুদ্ধে, ২০১৬ সালে ঢাকায়

২. বরিশাল বুলস ৫৮ রান, সিলেটের বিরুদ্ধে, ২০১৫ সালে ঢাকায়

৩. সিলেট সুপার স্টারস ৫৯, রংপুরের বিরুদ্ধে, ২০১৫ সালে ঢাকায়

৪: সিলেট রয়েলস ৭৪ রান,  চিটাগংয়ের বিপক্ষে, ২০১৩ সালে ঢাকায়।

৫: চিটাগং ভাইকিংস ৭৬ রান,  ঢাকার বিপক্ষে, ২০১৫ সালে ঢাকায়।

সর্বশেষ খবর