শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রংপুরকে থামিয়ে দিল রাজশাহী

মেজবাহ্-উল-হক

রংপুরকে থামিয়ে দিল রাজশাহী

আরও একটি ছক্কা। ড্যারেন স্যামিকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন উমর আকমল। গতকাল এ দুজনের ৭০ রানের জুটিই রাজশাহী কিংসকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছে —রোহেত রাজীব

দুই দলের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি হয় শেষের ৩ ওভারে। রাজশাহী কিংস যেখানে শেষ ১৮ বলে ৫৫ রান করেছিল সেখানে রংপুর রাইডার্স ৩১ রানের বেশি করতে পারেনি। তাই ১২ রানে হারতে হয় রাইডার্সকে। দারুণ এ জয়ে প্লে-অফের আশা জিইয়ে রাখল কিংস।

তবে এই ম্যাচে ব্যর্থতা ও সফলতার নায়ক দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার। মোহাম্মদ সামি রাজশাহীকে জিতিয়ে দিলেন, আর আনোয়ার আলী রংপুরের হারের খলনায়ক হয়ে গেলেন। দলের মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে ১১৯তম ওভারে সামি মাত্র ৩ রান দিয়ে রংপুরকে রুখে দেন। আর রংপুরের হয়ে স্পিনার আনোয়ার আলী ১৮ ও ২০তম ওভারে দিয়েছেন ১৭ ও ২৩ রান। এই পাক স্পিনার নিজের কোটার প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৯ রান দিলেও শেষ ২ ওভারে ৪০ রান দিয়ে রংপুরকে ব্যাকফুটে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

তবে মোহাম্মদ সামি তার শেষ ওভারে ক্যারিশমা দেখালেও জয়ের নায়ক আরেক সামি। তিনি রাজশাহীর অধিনায়ক ড্যারেন সামি। শেষ দিকে রংপুরের বোলার আনোয়ার আলীর ওপর যেন রীতিমতো স্টিম রোলার চালিয়েছেন ক্যারিবীয় এই তারকা। ঝড় গেছে রংপুরের আরেক বোলার রুবেল হোসেনের ওপর দিয়েও। তার করা ১৯তম ওভার থেকেও এসেছিল ১৫ রান। সামি মাত্র ১৮ বলে খেলেছেন অপরাজিত ৪৪ রানের ইনিংস। ৪টি ছক্কা, ৩টি বাউন্ডারি। ২৪৪.৪৪ স্টাইক রেট বজায় রেখে রান করেছেন।

অধিনায়কের তাণ্ডবে ১৬২ রানের বড় সংগ্রহ পায় রাজশাহী কিংস। ১৬৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে যেভাবে শুরু করা দরকার সেভাবে হয়নি রংপুরের। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ২৫ রান আসে। অথচ এই ৬ ওভারে রাজশাহীর রান ছিল ৫১। শেষ পর্যন্ত কিনা হারতে হলো মাত্র ১২ রানে। তবে এই জয়ে যেন আসরে টিকে রইল রাজশাহী। আগের ছয় ম্যাচের চারটিতেই হেরে যেন ‘কোমায়’ চলে গিয়েছিল পদ্মাপাড়ের দলটি। এখন কিছুটা স্বস্তি। তবে বিপদ কাটেনি। প্লে-অফে খেলতে হলে পরের সব ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই।

গতকাল পাকিস্তানি তারকা শহীদ আফ্রিদি না থাকায় পুরো খেলায় রংপুরকে কেমন যেন ছন্নছাড়া লেগেছে। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া আনোয়ার আলী একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন। গতকাল রাইডার্স আগের ম্যাচগুলোর মতো দাপট দেখাতে পারেনি। কিংসের বীরত্বে তারা ছিলেন অনেকটাই ম্লান।

তবে রংপুর হারলেও দর্শককে বিনোদন দিয়েছে মোহাম্মদ মিথুনের মারকাটারি ব্যাটিং। রাজশাহীর বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়ে মাত্র ৩৬ বলে খেলেছেন হার না মানা ৬৪ রানের ইনিংস। ৪টি বিশাল ছক্কার সঙ্গে ৩টি অসাধারণ বাউন্ডারি। দুর্দান্ত এই ইনিংস খেলার পরও দল হেরে যাওয়ায় যেন বড় একটা অতৃপ্তি থেকেই গেল মিথুনের মনে। যদিও মেহেদী মারুফকে টপকে বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে গিয়েছিলেন। সাত ম্যাচে মিথুনের মোট রান ২৪৭। যদিও শীর্ষে তিনি ঘণ্টাখানেকের বেশি থাকতে পারেননি। কেননা পরের ম্যাচেই বরিশাল বুলসের দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও শাহরিয়ার নাফিস তাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তার পরও একটা জায়গায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন মোহাম্মদ মিথুন। তা হচ্ছে গড় রানের দিক দিয়ে!

রংপুর রাইডার্সের এই ব্যাটসম্যানের গড় কত জানেন? আন্দাজ করতে গেলে নিশ্চিত ভুল করবেন। টি-২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে সাত ম্যাচে একজন ওয়ান ডাউনে নামা ক্রিকেটারের গড় কি কখনো ১২৩.৫০ ছিল? কিন্তু এখন পর্যন্ত মিথুনের গড় এটি। স্টাইকরেটও ১২৮.৬৪। প্রতি ম্যাচেই রাইডার্সের এই তারকা ব্যাটসম্যান যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

সাত ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে পাঁচ ম্যাচেই ছিলেন অপরাজিত। রাইডার্সের এই ব্যাটসম্যান যে দুই ম্যাচে আউট হয়েছেন তার একটিতে ৬২, আরেকটিতে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। বাকি পাঁচ ম্যাচে মিথুনের অপরাজিত ইনিংস ১২*, ১৫*, ৪৫*, ৪৯* ও ৬৪*। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার হাফ সেঞ্চুরি দুটি। এ ছাড়া দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ হয়ে রয়েছে। অন্য দুই ম্যাচে উইকেটে সেট হওয়ার পরও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। আর গতকাল যেভাবে ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছিল সব বল থাকলে সেঞ্চুরি ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কাল ব্যাটিং করেছেন ১৭৭.৭৭ স্টাইক রেটে। এবারের বিপিএলে এটিই মিথুনের সেরা ইনিংস। তবে সেরা ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। দল হেরে যাওয়ায় মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। মিথুন যখন ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরছেন দেখে মনে হচ্ছিল ব্যাটের ওজনই বইতে পারছেন না। হয়তো তখন রবিঠাকুরের ছোটগল্পের সংজ্ঞাটিই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

রাজশাহী কিংস : ২০ ওভারে ১৬২/৫, রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভারে ১৫০/৫

ফল : রাজশাহী কিংস ১২ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : ড্যারেন স্যামি।

বরিশাল বুলস : ২০ ওভারে ১১৯/৫

খুলনা টাইটানস : ১৮.৪ ওভার ১২০/৪

ফল : খুলন টাইটানস ৬ উইকেটে জয়ী, ম্যাচ সেরা : শুভাগত হোম

সর্বশেষ খবর