বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গলের সেই মধুর স্মৃতি

মেজবাহ্-উল-হক

গলের সেই মধুর স্মৃতি

গলে ডাবল সেঞ্চুরির পর মুশফিক

অপয়া সংখ্যা নাকি ১৩! কিন্তু বাংলাদেশ তো টেস্টে ২০১৩ সালেই দারুণ সব কীর্তি করেছে। ওই বছর ছয়টি টেস্ট খেলে একটিতে জয় এবং তিনটিতে ড্র। বছরের শুরুটাই হয়েছিল ঐতিহাসিক এক টেস্টের মধ্য দিয়ে। বলা হচ্ছে গল টেস্টের কথা!

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি আসে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের হাত ধরেই। সেই ম্যাচে আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরি হতে পারতো, যদি মোহাম্মদ আশরাফুল আর একটুখানি ধৈর্যের পরিচয় দিতেন। ১৯০ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। সাত নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন নাসির হোসেন। মুমিনুল হকের ব্যাট থেকেও এসেছিল হাফ সেঞ্চুরি। এক টেস্টে তিন সেঞ্চুরির (একটি ডাবলসহ) ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর নেই।

বাংলাদেশ করেছিল ৬৩৮ রান। এখন পর্যন্ত টেস্টে টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের স্কোর সেটি। অথচ প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৫৭০ রান করার পর মনে হচ্ছিল, ইনিংস ব্যবধানে হারতে চলেছে বাংলাদেশ। সেখানে উল্টো প্রথম ইনিংসে এগিয়ে গিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের দল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ড্র হয়েছিল।

সেই গলেই এবার খেলতে নামছে বাংলাদেশ। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি সেখানেই। সব শেষ ম্যাচেই সেই সুখ-স্মৃতি বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যদিও মাঝের ৪ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। সেই গলেতে সব শেষ তিন ম্যাচেই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছে তারা।

সব শেষ ম্যাচে গত বছর আগস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। ২০১৫ সালের আগস্টে ভারতকে পরাজিত করেছে ৬৩ রানে। একই বছর অক্টোবরে লঙ্কানদের কাছে পাত্তাই পায়নি ক্যারিবীয়রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে ইনিংস ব্যবধানে।

গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম হচ্ছে শ্রীলঙ্কার পয়মন্ত ভেন্যু।  ১৯৯৮ সালে এই স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকের পর স্বাগতিকরা যে ২৮টি ম্যাচ খেলেছে তার মধ্যে ২২ ম্যাচেই অপরাজিত। জয় পেয়েছে ১৬ ম্যাচে। ৬টিতে ড্র। এমন ভেন্যুতেও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করে ড্র করাটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।

গলের উইকেট দারুণ স্পোর্টিং। এখানে সবুজ ঘাস থাকে। পেসাররা লাইন লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করলে সহজেই সাফল্য পেয়ে যান। সব শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক পেয়েছেন ১১ উইকেট। আবার লঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ নিয়েছিলেন ১০ উইকেট।  আবার ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারতের স্পিন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও পেয়েছিলেন ১০ উইকেট। ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে লঙ্কান স্পিনার হেরাথ কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন। তাই সেখানে স্পিনারদের জন্য থাকে বাড়তি সুবিধা। তবে উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য কতটা সহায়ক হবে তা নির্ভর করছে স্বাগতিকদের কৌশলের ওপর। বাংলাদেশের দুর্বল দিক চিন্তা করেই উইকেট তৈরি করবে লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড।

বাংলাদেশ সেরা পেস আক্রমণ নিয়েই শ্রীলঙ্কা পথে রওনা দেবে। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ফিটনেসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আরেক পেসার রুবেল হোসেনও জায়গা করে নিয়েছেন দলে। এছাড়া তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও শুভাশিষ রায় তো রয়েছেনই।

যদিও টেস্টে দীর্ঘ সময় বোলিং করার মতো ফিটনেস বাংলাদেশের পেসারদের নেই বললেই চলে। মুস্তাফিজুর রহমান তার সেরা রিদমে বোলিং করতে পারবেন কিনা! তবে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন তাসকিন। এই তরুণ পেসারই বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে বড় ভরসা।

বাংলাদেশের স্পিনে এখন খুব বেশি বৈচিত্র্য নেই। স্পিন অস্ত্রো খুব ধারালোও নয়। মেহেদী হাসান মিরাজ এক নাগাড়ে বোলিং করতে পারেন কিন্তু তার বোলিং কতটা কার্যকরী হবে তা বলা কঠিন। সাকিবও যে ব্যাটসম্যানকে খুব বেশি বিপাকে ফেলতে পারেন— হায়দরাবাদ টেস্টে এমনটা চোখে পড়েনি। তবে তাইজুল দারুণ বোলিং করছেন। দীর্ঘ সময় লাইনলেন্থ বজায় রেখে বোলিং করার ক্ষেত্রে তার জুড়ি নেই। তাই লঙ্কানরা যদি স্পিন উইকেট বানায় সেক্ষেত্রে তাইজুলই বড় ভরসা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর