সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফিজিকে নিয়ে ছেলেখেলা

রাশেদুর রহমান

ফিজিকে নিয়ে ছেলেখেলা

ফিজিকে নিয়ে যেন ছেলেখেলা খেলল জিমিরা। গতকাল মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ওয়ার্ল্ড হকি লিগে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে গোল করার পর উল্লাসে মেতেছেন জিমি ও চয়ন —রোহেত রাজীব

মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ফিজি ম্যাচ। জাতীয় সংগীতের আবহ শেষ হতেই দুই দল দুই প্রান্তে অবস্থান নিল। শেষবারের মতো প্ল্যানটা মনে করিয়ে দিচ্ছেন স্ব স্ব অধিনায়ক। ম্যাচ শুরুর ঠিক পূর্ব-মুহূর্তে হঠাৎই বদলে গেল ফিজিয়ানদের ভাবভঙ্গি। হকিস্টিক নিয়ে জিমিদের দিকে তেড়ে আসতে লাগলেন ফিজিয়ান খেলোয়াড়রা। কিছু দূর এগিয়ে হকিস্টিক ফেলে অদ্ভুত নৃত্য শুরু করলেন তারা। এ যেন প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে ময়দান ছাড়া করার প্রাণান্তকর চেষ্টা। ফিজিয়ানদের এমন আচরণ দেখে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকলেন জিমিরা। যেন প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করার নিঃশব্দ ঘোষণা এটা! ফিজিয়ানরা এমন অদ্ভুত নৃত্য করে থাকেন প্রায় সব সময়ই। ‘মিকে নাচ’ নামে পরিচিত এ নৃত্যের মাধ্যমেই তারা প্রতিপক্ষকে লড়াইয়ের নিমন্ত্রণ জানান। গতকাল বাংলাদেশের হকি তারকাদেরও এভাবেই এক কঠিন লড়াইয়ের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল ফিজিয়ানরা। সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে ফিজিকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেন জিমিরা।

মালয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে পরাজয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালে সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে বিকল্প থাকে ওমান আর ফিজিকে হারানো। গতকাল বিকালে পুল এ-তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লক্ষ্যের অর্ধেক পূরণ করল বাংলাদেশ। একের পর এক পিসি পেয়ে ভুল করলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিমিরা জয় করেন ৫-১ গোলে। এবার লক্ষ্যের পরবর্তী অংশ বাস্তবায়নের পালা। দুই ম্যাচ পর সমীকরণ দাঁড়াল, গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে পুল এ-তে দ্বিতীয় স্থানে আছে ওমান। সমান পয়েন্ট (৩) নিয়ে তিন নম্বরে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এই পুলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ফেবারিট মালয়েশিয়া। গতকাল তারা ওমানকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে।

ফিজির বিপক্ষে ম্যাচটা দারুণ খেলল বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন জিমিরা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেতে বেশ দেরিই হয়। বারবার পিসি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। অবশেষে সপ্তম পিসি থেকে খেলার ২৬ মিনিটে প্রথম গোল করেন চয়ন। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে নেমেই ফিজিয়ানরা চমকে দেয় জিমিদের। ৩২ মিনিটে প্রথম পিসি থেকেই গোল করেন হেক্টর জুনিয়র। অবশ্য বাংলাদেশের সমান্তরালে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি ফিজি। এর পাঁচ মিনিট পরই সাঁড়াশি আক্রমণে যান জিমি-রানারা। মধ্যমাঠ থেকে টুকটাক খেলতে খেলতে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যান এ দুজন। এরপর প্লেসিং পুশে দারুণ গোল করেন জিমি। ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪১ মিনিটে আবারও জিমি গোল করেন প্লেসিং পুশে। এবার তাকে সাপ্লাই দেন রোমান। চতুর্থ কোয়ার্টারে আরও দুটি গোল করে বাংলাদেশ। ৫০ মিনিটে পিসি থেকে গোল করেন চয়ন। ৫৮ মিনিটে পিসি থেকে আরও একটি গোল করে বাংলাদেশের ৫-১ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করেন আশরাফুল।

দারুণ একটা জয়। অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন পরম তৃপ্তি নিয়ে। তবে নিজেদের ভুলের সরল স্বীকারোক্তিও করে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের প্ল্যানটা কার্যকর করতে চাইছিলাম। পিসি থেকে গোল পাচ্ছিলাম না। ফিজির প্ল্যান ভালো ছিল। তারা খেলছিলও দারুণ। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি।’ ওমান ম্যাচ অনেক কঠিন হবে। কোয়ার্টার ফাইনালে সহজ প্রতিপক্ষ পেতে হলে ওমানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। জিমি বলেন, ‘ওমান শক্তিশালী দল। ওদের বিপক্ষে আমাদের অনেক ভালো খেলতে হবে।’ পুল বি-তে শক্তিশালী দল মিসর ও চীন। এই দুই দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে এড়াতে হলে বাংলাদেশকে কমপক্ষে দুই নম্বরে থাকতে হবে। তাহলে শ্রীলঙ্কা অথবা ঘানাকে পাবে বাংলাদেশ। জিমিরা আগামীকাল পুল এ’র শেষ ম্যাচে ওমানের মুখোমুখি হবেন। এই ম্যাচ জিতেই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে চান জিমিরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর