বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রীড়াঙ্গনের পাশে আছে, থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়াঙ্গনের পাশে আছে, থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সঙ্গে ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মনজুর কাদের —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘ব্যবসায়িক কাজে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর পরও খেলাধুলার মায়া ছাড়তে পারিনি। কারণ খেলা যে আমার রক্তে মিশে আছে।’ গতকাল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে এ কথা বললেন দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা ও বসুন্ধরা গ্রুপ একই সূত্রে গাঁথা। বাবা ছিলেন সাঁতারে অল ইন্ডিয়া চ্যাম্পিয়ন। বড় ভাই আবদুস সাদেক ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ। অলিম্পিকে পাকিস্তান হকি দলে ডাক পেয়েছিলেন। হকিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অভিষেক ঘটে সাদেক ভাইয়ের নেতৃত্বে। ফুটবলেও ঢাকা আবাহনীর প্রথম অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া আমিও পূর্ব পাকিস্তান যুব হকি দলে খেলেছি। আমার পরিবারকে তাই ক্রীড়া পরিবার বলেই ডাকা হয়। এতে আমি গর্ব বোধ করি। বয়স ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে নিজে সময় দিতে পারছি না। কিন্তু আমার দুই ছেলে সায়েম    সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। একজন শেখ রাসেলের চেয়ারম্যান, আরেকজন শেখ জামালের সভাপতির দায়িত্ব পেল। আমার বিশ্বাস, দুই ভাই শুধু দুই ক্লাবের উন্নয়নে কাজ করবে না, দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে। বিশেষ করে নিস্তেজ থাকা দেশের ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে তারা পরিশ্রম করে যাবে। সালাউদ্দিন, চুন্নু, বাদল ও আসলামদের খেলা দেখতে গ্যালারি ভরে যেত। এখন সেই দৃশ্য স্বপ্নই বলা যায়। আমার বিশ্বাস কাজ করলে ফুটবল তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। কথা দিচ্ছি, ক্রীড়াঙ্গনের পাশে আছে, পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ।’

গতকাল শেখ জামালের বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে সকাল থেকেই ক্লাবজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে আহমেদ আকবর সোবহান, সায়েম সোবহান ও সাফওয়ান সোবহানকে স্বাগত জানাতে কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক দিন পর এই ক্লাবে আনন্দঘন পরিবেশ লক্ষ করা গেল।

১৯৬২ সালে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় ধানমন্ডি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রথম বিভাগ ফুটবল, ক্রিকেট ও বাস্কেটবল খেললেও সেভাবে সাফল্য আসছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামালের নামকরণের পর ঐতিহ্যবাহী ধানমন্ডি ক্লাবের চেহারা পাল্টে যায়। দেশে পেশাদার লিগ, ফেডারেশন কাপ ছাড়াও বিদেশে ফুটবল টুর্নামেন্টে সাফল্য পাওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনে শেখ জামাল পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই জনপ্রিয় ক্লাবের নতুন সভাপতি হয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। নির্বাচন কমিশনার সভাপতি হিসেবে সাফওয়ান সোবহানের নাম ঘোষণা করলে উপস্থিত অতিথিরা তাকে বিপুল করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান। সাবেক সভাপতি দেশবরেণ্য ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদের ফুল দিয়ে নতুন সভাপতিকে অভিনন্দন জানান। কাদের এবার ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ভাই শুরু থেকেই শেখ জামালের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। ক্রীড়াঙ্গনে এই গ্রুপের অবদান কারও অজানা নয়। তাই সাফওয়ান সভাপতি হওয়ায় আমরা গর্বিত। আমার বিশ্বাস, বয়সে তরুণ হলেও তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে শেখ জামাল আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। নতুন সভাপতির নেতৃত্বে শুধু শেখ জামাল নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনও উপকৃত হবে আশা রাখি।’ ১৯৬২ সাল থেকেই ধানমন্ডি ক্লাবের সঙ্গে জড়িত বর্ষীয়ান সংগঠক মেজর (অব.) বেগ বলেন, ‘সাফওয়ান সোবহান বয়সে তরুণ। আমি বিশ্বাস করি, তরুণ নেতৃত্বে শেখ জামাল ক্রীড়াঙ্গনে নতুনত্ব আনতে পারবে। শুধু দেশ নয়, এশিয়াতেও শেখ  জামাল শক্তিশালী দলে পরিণত হবে তার নেতৃত্বে।’

জাতীয় দলের সাবেক নন্দিত ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘দেশের শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ শেখ জামালের দায়িত্ব নিয়েছে। এর চেয়ে বড় খুশির খবর আর কী হতে পারে। সাফওয়ান সোবহানের নেতৃত্বে শুধু শেখ জামাল নয়, ঝিমিয়ে থাকা দেশের ফুটবলও উপকৃত হবে।’

নতুন সভাপতি সাফওয়ান সোবহান বলেন, ‘শেখ জামাল দেশের বড় ক্লাব। বসুন্ধরা ও আমার ওপর আস্থা রেখেই ক্লাবটি আমাকে এত বড় দায়িত্বে বসিয়েছে। আশা রাখি সবার সহযোগিতায় এই ক্লাবের সুনাম আরও বাড়াতে পারব। সভাপতি হিসেবে অবশ্যই আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। মাত্র দায়িত্ব পেলাম। এখন ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন  করতে চাই।’

সভাপতি ছাড়াও ১০ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে গতকাল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর