সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

৪৬ বছরেও নির্মিত হয়নি ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিসৌধ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

৪৬ বছরেও নির্মিত হয়নি ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিসৌধ

শহীদ জুয়েল - শহীদ মুশতাক

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্রীড়াবিদদের অবদান কখনো ভুলবার নয়। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তাদের নাম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের ফান্ড কালেকশনের জন্য গঠন হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। স্বাধীনতাবিরোধী কয়েকজন বাঙালি সংগঠক চেয়েছিল যুদ্ধ চলা অবস্থায় ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ চালু করতে। কেননা ওই সময় ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। পাকিস্তান সেনারা চেয়েছিল ফুটবল মাঠে নামিয়ে ঢাকাবাসীর নজর অন্যদিকে ফেরাতে। জনপ্রিয় ফুটবলারদের খোঁজা হয়েছিল মাঠে নামাতে। কাউকে পায়নি, শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র অফিস দল নিয়ে লিগ শুরু করতে চেয়েছিল। তাও সম্ভব হয়নি। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানি ফুটবলার গফুর বেলুচকে পাক আর্মির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশ দেন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফুটবলার এনে ঢাকা লিগ শুরু করতে। সেই নির্দেশ শোনেননি অবাঙালি এ ফুটবলার। তিনি বলেছিলেন দেশের এমন ভয়াবহ অবস্থায় লিগ চালু করে বেইমানির খেতাব পেতে চান না। এ জন্য গফুর বেলুচকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

আসলে ফুটবল লিগ শুরু করবে কাদের দিয়ে। অধিকাংশ ফুটবলারই স্বাধীন বাংলা দলে অংশ নিতে ভারতে পাড়ি দেন। জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, কায়কোবাদ, অমলেশ সেন, আইনুল হক, শেখ আশরাফ আলী, বিমল কর, শাজাহান আলম, মনসুর আলী লালু, কাজী সালাউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান, নওশেরুজ্জামান, সুভাষ সাহা, ফজলে হোসাইন খোকন, আবদুল হাকিম, তসলিম উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল মমিন জোয়ারদার, মনিরুজ্জামান পেয়ারা, আবদুস সাত্তার, প্রাণ গোবিন্দ কুন্ড, মুজিবর রহমান, খন্দকার নুরুন্নবী, লুত্ফর রহমান, অনিরুজ চ্যাটার্জি, সনজিত কুমার দে, মাহমুদুর রশিদ, সাইদুর রহমান প্যাটেল, সুরুজ, সিরাজউদ্দিন, মোজাম্মেল হক, বীরেন দাস, আবদুল খালেক ও নিহার কান্তি দাস প্রমুখ। দলের ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মাজহার তান্না ও কোচ খ্যাতনামা রেফারি ননী বসাক। দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। এত সংখ্যক ফুটবলার স্বাধীন বাংলা দলে যোগ দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ঢাকা লিগ আয়োজনে পরিকল্পনা  ভেস্তে যায়। যারা যেতে পারেননি তারাও প্রাণের ভয়ে দেশে আত্মগোপন করে থাকেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ১৬টি ফুটবল ম্যাচ খেলে। ১২টি জয়, ৩টি ড্র ও ১টি হার। বাংলাদেশের ফুটবলারদের বীরত্ব দেখে এগিয়ে আসেন প্রখ্যাত ক্রিকেটার নবাব পতৌদি ও কিংবদন্তি অভিনেতা দীলিপ কুমার। তারা ফান্ড দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাও করেন। পতৌদি বলেছিলেন, বাঙালি ফুটবলারদের সাহসিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। তারা জীবনবাজি রেখে ভারতে খেলতে এসেছে। ওরা হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও ফুটবলের মাধ্যমে শত্রুদের দাঁত ভাঙা জবাব দিচ্ছে।

শুধু ফুটবল ম্যাচ কেন অনেক ক্রীড়াবিদই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে পাক হানাদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছেন। ক্রিকেটার জুয়েল, হাফিজ উদ্দিন ও নুরুন্নবী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। জুয়েল যাত্রাবাড়ীতে এক অপারেশনের সময় শহীদ হন। শুধু জুয়েল কেন মুক্তিযুদ্ধে অনেক ক্রীড়াবিদই শহীদ হন। কিন্তু তাদের নাম কি কারও জানা আছে? ১৯৭৪ সালে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে ক্রীড়াবিদদের অবদান চীর স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

যেসব খেলোয়াড় শহীদ হন তাদের জন্য তৈরি করা হবে ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিসৌধ। স্বাধীন বাংলা দলের ফুটবলারদের নামও লেখা থাকবে আলাদাভাবে। ১৯৭৫ সালের পর কেউ আর বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। তবে পরবর্তীতে অনেক সরকারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর চলে গেলেও ক্রীড়াঙ্গনে নির্মিত হয়নি স্মৃতিসৌধ। অবাঙালি সংগঠক মুস্তাক। যিনি খেলা ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। তাকেও ১৯৭১ সালে আজাদ বয়েজ ক্লাবে পাকিস্তানি আর্মিরা নির্মমভাবে হত্যা করে। ক্রীড়াঙ্গনে অনেক শহীদের নাম থেকে যাচ্ছে আড়ালেই। হয়তো এক সময়ে আমরা ভুলেই যাব মুক্তিযুদ্ধে ক্রীড়াবিদদের বীরত্বের কথা।

সর্বশেষ খবর