বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আর কত কোচ বদল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আর কত কোচ বদল

একের পর এক কোচ বদল। তবু ফুটবলে পরিবর্তন আসছে না। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মাথা উঁচুর বদলে নিচু করে মাঠ ছাড়তে হচ্ছে জাতীয় দলের ফুটবলারদের —ফাইল ফটো

বিশ্বকাপতো বটেই ফুটবলে বাংলাদেশের যে করুণ অবস্থা এশিয়া কাপের চূড়ান্তপর্বে খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এখন আবার এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অথচ ফুটবলে একটা ক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আর তা হলো কোচ নিয়োগ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল মুক্তিযোদ্ধাদের ফান্ড সংগ্রহে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রীতিম্যাচে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় দল প্রথম গঠন হয় ১৯৭৩ সালে। মারদেকা কাপ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অভিষেক ঘটে। অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। আর প্রশিক্ষক ছিলেন সাবেক খ্যাতিমান ফুটবলার সাহেব আলী। অর্থাৎ ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম কোচ সাহেব আলী।

সেই থেকে শুরু, এরপর কত কোচ যে বদল হয়েছে তার হিসেব নেই। ১৯৭৪ সালে ঢাকা আবাহনী আয়ারল্যান্ডের বিলহার্টকে কোচ নিয়োগ দেয়। বিলহার্ট আসার পরই বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা পাল্টাতে থাকে। আবাহনী ইউরোপিয়ান ধাচের ফুটবল খেলা শুরুর পরই এর প্রভাব পড়ে ঢাকা লিগে প্রায় সব ক্লাবেরই। শুধু খেলার কৌশল পরিবর্তন নয়, জার্সিতেও ভিন্নতা আনেন বিলহার্ট। এক সময় ঢাকার ক্লাবগুলোর জার্সি ছিল অনেকটা হাফ শার্টের স্ট্রাইলে। বিলহার্ট তা দেখে অবাক হয়ে যান। তিনিই আবাহনীকে মাঠে নামান টি শার্ট পরিয়ে। বিলহার্ট অবশ্য বাংলাদেশের জাতীয় দলের প্রশিক্ষক ছিলেন না। জার্মানির বেকেন হপ্টই বিদেশি কোচ হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম দায়িত্ব পালন করেন। স্বল্প সময়ে দায়িত্ব পালন করে তাকে ফিরে যেতে হয়।

এখন যেভাবে কোচ নিয়োগ দেওয়া হয় আগে কিন্তু সিস্টেমটা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। বিদেশি কোচদের বেলায় ভিন্ন কথা, কিন্তু স্থানীয়দের বেলার দেখা যেত যার প্রশিক্ষণে দল লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাকেই জাতীয় দলের কোচ করা হয়েছে। শেখ মো.সাহেব আলী, আবদুর রহিম, গোলাম সারওয়ার টিপু, আলী ইমাম, ওয়াজেদ গাজী জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করলেও কেউ আর দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এক টুর্নামেন্টে ব্যর্থ মানেই কোচ বদল। সত্তর দশকে আনোয়ারের প্রশিক্ষণের বাংলাদেশ বাছাইপর্ব পেরিয়ে এশিয়া কাপের চূড়ান্তপর্বে খেলে। এমন গৌরবের পরও আনোয়ারকে বিদায় জানান হয়। ১৯৭৮ সালে ইরানের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা নাসের হেজাজি ১৯৮৭ সালে ঢাকা মোহামেডানের কোচ হন। বিলহার্ট আগমনে বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা যেমন পাল্টে গিয়েছিল। ঠিক হেজাজি আসার পরও ফুটবলে যেন নতুন প্রাণ ফিরে আসে। এত গতিময় খেলা যা বাংলাদেশের দর্শকরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। এক ফুটবলারদের সব পজিশনে খেলার দক্ষতা থাকতে হবে সেই শিক্ষাটা দেন হেজাজি। এশিয়ান ক্লাব ফুটবলে মোহামেডানকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান তিনি। ফুটবল বিশ্লেষকরা তখন মতামত দিয়েছিলেন হেজাজিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশের কোচ করা হোক। ১৯৮৯ সালে সাফ গেমসে জাতীয় দলের কোচও করা হয় তাকে। হেজাজি বলেছিলেন তিন বছর তিনি টানা দায়িত্ব পালন করতে পারলে বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশকে একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন। অথচ তাকে রাখা হল মাত্র দুই মাস। সাফ গেমস ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের পরই হেজাজিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অটোফিস্টার, জর্জ কোটান, ক্রশিয়ানি, ডিডো, সোয়াব, ক্যাং, সামির সাকির, ক্রুইফ কত না বিদেশি ও দেশি কোচ বদল হয়েছে এবং হচ্ছে।  শেখ মো. সাহেব আলী থেকে অ্যান্ড্রু ওড ৪৪ বছরে ৫০ না হোক ৪০ জন কোচ বদল হয়েছে এটা নিশ্চিত। ৯০ দশকের পর থেকেই বিদেশি কোচরাই প্রাধান্য পাচ্ছেন। ফিফার নিয়ম মেনেই তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। কিন্তু ফুটবলের উন্নতির কোনো লক্ষ্যইতো দেখা যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু দায়িত্ব নিয়েছেন।

যাকেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বাফুফে বলছে এত ভালোমানের কোচ বাংলাদেশে আর আসেনি। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার পরই অনেকটা গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও এক সময়ে জাতীয় দলের প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি নিজেই বলতেন বার বার কোচ পরিবর্তন হলে ফুটবলাররা ধাক্কা খায়। এতে মানের চরম অবনতি ঘটে। অথচ তিনিই এখন ফুটবলের অভিভাবক হয়েও শুধু কোচ পাল্টাচ্ছেন। এতে কি ফুটবলের লাভ হচ্ছে? ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সারোয়ার টিপু বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, বার বার কোচ বদল করে ফুটবলারদের যেন গিনিপিক বানানো হচ্ছে। লক্ষ্য না ঠিক করে বিশ্ববিখ্যাত কোচ এনেও লাভ হবে না। বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে ফেডারেশনকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর