মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফেদেরারের চোখ চল্লিশে

রাশেদুর রহমান


ফেদেরারের চোখ চল্লিশে

ছেলেটার মধ্যে দুরন্তপনা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই। অনেকে বলে রগচটা। বন্ধুরা একটু সমঝে চলে। কিন্তু আট বছর বয়স থেকে টেনিসের র‍্যাকেট হাতে চলা ছেলেটাকে সবাই পছন্দও করে খুব। তার হাতের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে থাকে সবাই। প্রতিপক্ষ ঘায়েল হয় অনায়াসেই। রগচটা স্বভাবটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও টেনিস কোর্টকে ধীরে ধীরে বশে নিয়ে আসে ছেলেটা। তিনি রজার ফেদেরার। ২০০১ সালের উইম্বলডনে এক বিরল ঘটনারই জন্ম দেন টেনিস দুনিয়ায় তখনো অপরিচিত রজার ফেদেরার। চতুর্থ রাউন্ডে তিনি হারিয়ে দেন টেনিস কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাসকে। কিন্তু ফেদেরারের উত্থান আরও অনেক পরে।

‘নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাকে বেশ কষ্ট করতে হতো। স্বাভাবিক আচরণ করাটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার ছিল।’ ফেদেরার এভাবেই নিজের অতীত সম্পর্কে বলেছেন। সেই তরুণ একসময় কেবল টেনিস কোর্টই নয়, জয় করে নেন পুরো দুনিয়ার মানুষের হৃদয়। পরিণত হন একজন আদর্শ মানুষে। যিনি একজন ভাই, বন্ধু, স্বামী, বাবা কিংবা ছেলে হিসেবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। ২০০৩ সালের উইম্বলডন থেকে শুরু গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অভিযান। ২০১৭-তে এসে এটা ১৯ নম্বরে ঠেকেছে। ফেদেরার নামক রেসের ঘোড়া যে এখানেই থামবার নয়, তা বেশ বোঝা যায়। যে তারকা বছরে দুটো গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের এনার্জি রাখেন তার বিদায়টা সহসা বলে কল্পনা করা যায় না। ফেদেরারের বিদায়ও তাই কেউ দেখছেন না। আগামী আগস্টে ৩৬ হচ্ছে সুইস কিংবদন্তির। কিন্তু তার ব্যাকহ্যান্ড ও ফোরহ্যান্ডগুলো দেখলে মনে হয় সেই ফেদেরার। ২২ বছর বয়সে তিনি যেমন ছিলেন। আজকালকার ২১-২২-এর তরুণ সম্প্রদায় ৩৬-এর ফেদেরারের কাছে অসহায়। তার অভিজ্ঞতা, ক্ষিপ্রগতি আর কৌশলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে পুরো দুনিয়া। না হলে ৩৬ বছরে কেউ একই ক্যালেন্ডারে দুটি গ্র্যান্ডস্লাম জেতে! এসব অর্জনের পর ফেদেরার যদি বলেন, ‘আমি চল্লিশেও এই রূপটা ধরে রাখতে চাই’, তবে কেউ ভ্রুকুটি কেন করবে! ফেদেরার বলেছেনও ঠিক তাই। উইম্বলডন বগলদাবা করার পর বললেন, ‘যদি স্বাস্থ্য আমাকে অনুমতি দেয় আর সবকিছু ঠিক থাকে তবে এটা (চল্লিশ বছর পর্যন্ত খেলা) হতে পারে।’

কী এমন ঘটেছিল! ২০১৬ সালে উইম্বলডনের সেমিফাইনালে মিলোস রাউনিচের কাছে হেরেছিলেন ফেদেরার। টেনিসের বড় বড় পণ্ডিত বলছিলেন, ‘এবার সময় হয়েছে ফেদেরারের র‍্যাকেট তুলে রাখার।’ ফেদেরার পণ্ডিতদের সুপরামর্শ শুনেছিলেন। তবে মাত্র ছয় মাসের জন্য। এর মধ্যে কী এমন জিয়নকাঠির স্পর্শ পেলেন ফেদেরার যে, নতুন করে সবকিছু বদলে দিলেন। টেনিস দুনিয়ায় ফেদেরার যুগ যেন আবার ফিরে এলো তার পূর্ণ জৌলুস নিয়ে। ফেদেরারের এমন দুরন্তভাবে ফিরে আসা একটা কথাই প্রমাণ করছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে কিছুটা পিছিয়েও যেতে হয়।

উইম্বলডনে ৮টি শিরোপা জিতে ছাড়িয়ে গেছেন পিট সাম্প্রাসকে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া ওপেন ও ইউএস ওপেনে ৫টি করে শিরোপা জিতেছেন তিনি। ফ্রেঞ্চ ওপেনে জিতেছেন ১টি। সব মিলিয়ে ১৯টি। এ সংখ্যাটা কততে গিয়ে শেষ হয় তাই এবার দেখার বিষয়। চল্লিশ পর্যন্ত এমন ভয়ঙ্কর ফেদেরার খেললে হয়তো মেয়েদের এককে সর্বোচ্চ ২৪টি শিরোপাধারী মার্গারেট কোর্টের রেকর্ডও ভেঙে দেবেন। এমন দিন কি আসবে টেনিসে?

 

 

পুরুষ এককের র‍্যাঙ্কিং

১. অ্যান্ডি মারে (ব্রিটেন)                 ৭৭৫০

২. রাফায়েল নাদাল (স্পেন)            ৭৪৬৫

৩. ফেদেরার (সুইজারল্যান্ড)           ৬৫৪৫

৪. জকোভিচ (সার্বিয়া)                   ৬৩২৫

৫. ওয়াওরিঙ্কা (সুইজারল্যান্ড)         ৬১৪০

 

মেয়েদের এককের র‍্যাঙ্কিং

১. প্লিসকভা (চেক প্রজাতন্ত্র)            ৬৮৫৫

২. সিমোনা হ্যালেপ (রুমানিয়া)       ৬৬৭০

৩. কারবার (জার্মানি)                     ৫৯৭৫

৪. ইয়োহানা কন্তা (ব্রিটেন) ৫১১০

৫. গারবিন মুগুরুজা (স্পেন)           ৪৯৯০

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর