বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মোহামেডানকে নিয়ে গ্যাঁড়াকলে বাফুফে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মোহামেডানকে নিয়ে গ্যাঁড়াকলে বাফুফে

মোহামেডানের সাবেক কোচ এমেকা

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের দীর্ঘদিন ধরে সময়টা ভালো যাচ্ছে না। পেশাদার লিগে যাত্রার পর তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী হ্যাটট্রিকসহ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শেখ জামাল ৩ ও শেখ রাসেলও একবার শিরোপা জিতেছে। কিন্তু মোহামেডান ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী।

২০০২ সালের পর লিগের ট্রফিটা অধরাই থেকে গেছে। মোহামেডানের মতো দেশখ্যাত দল এতদিন ধরে লিগ জিতবে না তা কি ভাবা যায়? পেশাদার লিগ শুরুর দিকে তিনবার রানার্স-আপ হয়েছিল। এখন অবস্থান নিচের দিকে। গতবার তো ভাগ্যক্রমে রেলিগেশন থেকে রক্ষা পেয়েছে। এবার মধ্যম সারির দল গড়লেও অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি।

এ তো গেল মাঠের হাল। মোহামেডান এখন এমন এক সংকটে পড়েছে যা ক্লাবের অস্তিত্ব টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাফুফের বিষয় হলে না হয় উড়িয়ে দেওয়া যেত। কেননা যতই শৃঙ্খলা ভাঙুক না কেন ফুটবল ফেডারেশন বড় দলকে সমীহ করে চলে। এবার তো জড়িয়ে গেছে ফিফা। যতই প্রভাবশালী দেশ বা কর্মকর্তা হোক না কেন বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। সেখানে মোহামেডান তো তুচ্ছ ব্যাপার। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী দলটি বিপাকে পড়ে গেছে তা আবার পাঁচ বছর আগে। ২০১২ সালে মোহামেডান তাদের হয়ে খেলে যাওয়া নাইজেরিয়ার সাবেক ফুটবলার এমেকাকে কোচের দায়িত্ব দেয়। ঢাকার মাঠে মোহামেডানের পক্ষে যে কজন বিদেশি খেলে গেছেন তাদের মধ্যে এমেকা সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার। দুই মৌসুম খেলে তিনি মাঠ কাঁপিয়ে গেছেন। আশির দশকে অপরাজিত হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের পেছনে এমেকা বড় অবদান রাখেন। সেই এমেকাকে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন ঘরের ছেলে দলের হয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। না, পুরো মৌসুমে রাখা যায়নি তাকে। মাঝপথেই চলে যান। ওই সময় প্রশ্ন উঠেছিল পেমেন্ট ঝামেলায় এমেকা চলে গেছেন কিনা?

মোহামেডানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সব অর্থই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ দেশে ফিরেই এমেকা নাইজেরিয়ার মিডিয়াকে জানায়, মোহামেডান তার পারিশ্রমিকের ২০ হাজার ডলার বুঝিয়ে দেয়নি। এর মধ্যে এমেকা নাকি বকেয়া পাওয়ার জন্য মোহামেডানকে চিঠিও দেয়। সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি বাফুফেকেও জানিয়েছিল। এখানেও সাড়া না পাওয়ায় এমেকা ফিফার কাছে নালিশ করে। এতেই নড়েচড়ে বসে বাফুফে। মোহামেডান থেকে বলা হচ্ছিল, এমেকা কোনো অর্থই পাবে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে নাকি এমেকার সঙ্গে যোগাযোগ করে সময়ও চাচ্ছিল।

ফিফা সময় বেঁধে দিয়ে বাফুফেকে চিঠিও দিয়েছিল। বলা হয়েছিল এই সময়ের মধ্যে এমেকার অর্থ পরিশোধ না হলে সুদসহ লিগ থেকে মোহামেডানের ৩ পয়েন্ট কেটে নেওয়ার। তবুও বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি মোহামেডান বা বাফুফে। কিন্তু শেষ যে চিঠিটি এসেছে তাতে বাফুফেও বিপাকে পড়ে গেছে। ফিফা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, এমেকার ২২ হাজার ডলার তো দিতেই হবে, সে সঙ্গে তিন পয়েন্ট কেটে নিতে হবে। আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না মোহামেডানকে। তা না হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাফুফেকেও শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি মানে সব রকম ফুটবল থেকে বাফুফে নিষিদ্ধ হবে। একটি দলের জন্য দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে তা বাফুফে কোনোভাবেই চাইবে না। জানা গেছে, ঘটনাটি সরকারের প্রভাবশালী মহলও পর্যবেক্ষণ করছে।

আজ লিগ কমিটির যে সভা রয়েছে সেখানে মোহামেডানের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী জানিয়েছেন, ফিফা যা নির্দেশ দিয়েছে, তা মানতে হবে। তবে মোহামেডানকে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

এদিকে গতকালও মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জ অভিজ্ঞ সংগঠক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, এমেকার কোনো টাকাই আমরা বাকি রাখিনি। খুব শিগগিরই আমরা কাগজপত্রে প্রমাণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করব। তবে ফিফার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছি। আশা করি, এব্যাপারে বাফুফে   আমাদের সহযোগিতা করবে।

সর্বশেষ খবর