শিরোনাম
বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পেস আক্রমণে নতুন অস্ত্র

মেজবাহ্-উল-হক

পেস আক্রমণে নতুন অস্ত্র

আড়াই বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন পেসার আবুল হাসান রাজু। তার নতুন অস্ত্র ‘রিভার্স সুইং’। পেস আক্রমণে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। গতকাল অনুশীলনের সময় ওয়াল্স ও মাশরাফির সঙ্গে রাজু —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাশরাফি বিন মর্তুজার নিখুঁত লাইনলেন্থ, মুস্তাফিজুর রহমানের কাটার-স্লোয়ার, রুবেল হোসেনের ইয়র্কার-বাটারফ্লাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণে নতুন অস্ত্র হিসেবে যোগ হয়েছে আবুল হাসান রাজুর ‘রিভার্স সুইং’।

বাংলাদেশের পেসাররা রিভার্স সুইং বল করতে পারেন না— এমন একটা বরাবরই অপবাদ ছিল! সামনের ত্রিদেশীয় সিরিজেই হয়তো সেই অপবাদ ঘুচিয়ে ফেলবেন পেসার আবুল হাসান রাজু।

রিভার্স সুইংকে আগে বলা হতো ‘লেট সুইং’। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা পেসার গোলাম নওশের প্রিন্স দুর্দান্ত ‘লেট সুইং’ বল করতেন। এই ‘লেট সুইং’—এ দারুণ পারদর্শী ছিলেন পেসার সাইফুল ইসলামও। এক সময় জাতীয় দলে পেস আক্রমণে ভরসা ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রিন্স ও সাইফুল সেভাবে কখনো আলোচনায় আসেননি। আলোচনায় আসার কথাও নয়। তখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলতো কালেভাদ্রে। আর ম্যাচে কে কোন ধরনের বল করে তা কে খোঁজ রাখতেন?

এখনকার মতো অনেক বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে হয়তো প্রিন্স ও সাইফুলই হতে বাংলাদেশে রিভার্স সুইংয়ের অগ্রপথিক! রিভার্স সুইং মাস্টার ছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরান খান। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে করাচি টেস্টে রিভার্স সুইং দিয়েই ধসিয়ে দিয়ে ছিলেন ভারতকে। ওই টেস্টে ইমরান খান একাই নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। তবে তখন ‘লেট সুইং’ নামেই পরিচিত ছিল আজকের রিভার্স সুইং।

এর পাকিস্তানের পাকিস্তানের ‘টু-ডব্লিউ’ ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসের হাত ধরেই ‘লেট সুইং’ হয়ে যান রিভার্স সুইং। পেস বোলারদের অনেক বড় অস্ত্র এটি। ব্যাটসম্যানকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। সব পেসার রিভার্স সুইং করাতে পারেন না।

ইংল্যান্ডের দুই তারকা বোলার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, সিমন জোন্স দুর্দান্ত রিভার্স সুইং করতেন। ভারতের জহির খান, অজিত আগারকারও অসাধারণ রিভার্স সুইং করতেন। বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে পাকিস্তানের পেসার হাসান আলী রিভার্স সুইংয়ে ওস্তাদ। ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্তিতে ফেলে উইকেট তুলে নেন টপাটপ।

ভারতের দুই তারকা বোলার ভুবনেশ্বর কুমার ও উমেশ যাদবের প্রধান অস্ত্রও রিভার্স সুইং। আরেক পেসার মোহাম্মদ সামিও দারুন রিভার্স সুইং করাতে পারেন।

সবচেয়ে দ্রুত গতির রিভার্স সুইং বোলিং করেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক। ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনও অসাধারণ। তবে বেন স্টোকসের রিভার্স সুইংয়ের তুলনা হয় না।

বাংলাদেশের বর্তমান পেসারদের মধ্যে রিভার্স সুইংয়ে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছিল। কিন্তু তিনি তো নিয়মিত দলেই সুযোগ পান না। তবে এখন ভরসা আবুল হাসান রাজু। ত্রি-দেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে তিনিই তো নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে ‘রিভার্স সুইং’ দিয়ে।

আবুল হাসান জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন ২০১৫ সালে। এবার আড়াই বছর পর দলে সুযোগ পেলেন। বলতে গেলে রিভার্স সুইংই রাজুকে টেনে নিয়ে এসেছে জাতীয় দলে।

হঠাৎ করে রাজু ‘রিভার্স সুইং’—এ এতো আত্মবিশ্বাস পেলেন কিভাবে? নেপথ্যে কারিগর ‘রিভার্স সুইং’ মাস্টার ওয়াকার ইউনুস। পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি তারকাই বদলে দিয়েছেন আবুল হাসানকে।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আসরে ওয়াকার ইউনুস ছিলেন সিলেট সিক্সার্সের মেন্টর। এই দলেই খেলেছেন আবুল হাসান। সেখানেই ওয়াকারের সঙ্গে তার পরিচয় ও কাজ করা। ওয়াকারের ছোঁয়াতেই বদলে গেছেন এই তরুণ পেসার। আবুল হাসান বলেন, ‘বিপিএল আসলে এই জায়গায় আসার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল আমার কাছে। ওয়াকার ভাই ছিলেন দলে। তার সঙ্গে কাজ করেই রিভার্স সুইংয়ে উন্নতি করেছি। স্লো বল নিয়েও কাজ করেছি। আমি এখন আত্মবিশ্বাসী। এখন প্রমাণ করার সময় আসছে।’

জাতীয় দলের প্রধান কোচ থাকলেও পেসার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেন না কোর্টনি ওয়ালশের মতো কিংবদন্তি পেসার রয়েছেন দলে। পেসাররা প্রতিনিয়তই নতুন কিছু শিখছেন। তবে সে কারণেই পেসারদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। আবুল হাসানও নতুন করে নিজেকে উপস্থাপন করার অপেক্ষায় রয়েছেন, ‘আগে একটু ভিন্ন ছিলাম। এখন অনেক কিছু বদলে গেছে। আমি যদি একাদশে সুযোগ পাই তাহলে নিজেকে প্রমাণ করবো।’ নিজের উন্নতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে আবুল হাসান বলেন, ‘লাইন অ্যান্ড লেন্থ ভালো হয়েছে। বোলিং নিয়ে অনেক বেশি কাজ করেছি আমি অফ সিজনে। বিপিএলেও অনেক বেশি কাজ করেছি।’

শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজকে সামনে রেখে কঠোর অনুশীলন করছেন পেসাররা। দলে জায়গা করে নিতে হলে ভালো করার বিকল্প নেই। ভালো করতে না পারলেই বাদ! দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পারফর্ম করতে না পারায় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে তাসকিন আহমেদকে। তাই এই সিরিজটা কেবল আবুল হাসান রাজুর একার জন্য  চ্যালেঞ্জিং নয়, অন্য পেসারদের জন্যও।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর