মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

৪৬ বছরে ৪০ শিরোপা আবাহনীর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

৪৬ বছরে ৪০ শিরোপা আবাহনীর

বৈঠক রুমে যেদিকে তাকাই শুধু ট্রফি আর ট্রফি। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ মিলিয়ে ট্রফির সংখ্যা একশোও ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ক্লাবটির জন্ম স্বাধীনতার পর। খেলা পাগল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জেষ্ঠ্যপুত্র শেখ কামালের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র। ১৯৯২ সালে যা লিমিটেড ক্লাবে পরিণত হয়। ৪৬ বছরে ফুটবলে আবাহনীর ৪০টি শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে।

৫০ বছরও যেখানে হয়নি, সেই ক্লাবেই কিনা এত ট্রফিতে ভরে গেছে। অথচ শুরুতে ও ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামাল শহীদ হওয়ার পর ক্লাব যে দুর্দশা বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল সেখানে আবাহনী টিকে থাকবে কিনা অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। সেই আবাহনী শুধু টিকে থাকেনি দেশের শ্রেষ্ঠ ক্লাবে পরিণত হয়েছে।

আবাহনী নামটি শেখ কামালেরই দেওয়া। ক্রিকেট ও হকিতে সাফল্যের ঘাটতি না থাকলেও দলটির জনপ্রিয়তার পেছনে মূল ভূমিকা ফুটবলেরই। ১৯৭২ সালে প্রথম বিভাগ লিগে অভিষেক ঘটে আবাহনীর। আবদুস সাদেক ছিলেন আবাহনীর ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় বিজেআইসির বিপক্ষে। ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র।

গোলাম সারোয়ার টিপু, কাজী সালাউদ্দিন, অমলেশ সেন, মো. আশরাফ, স্কুটার গফুরসহ দলে ছিল তারকার ঠাসা। অভিষেক আসরেই শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল আবাহনীরই। কিন্তু ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় উচ্ছৃঙ্খল দর্শকরা আবাহনীর খেলোয়াড়দের ওপর হামলা চালালে ম্যাচটি প্রথমার্ধেই পণ্ড হয়ে যায়। পরে আর লিগই অনুষ্ঠিত হয়নি। পরের বছর ১৯৭৩ সালে লিগ মাঠে গড়ায়। স্বাধীনতার পর প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়নের কৃতিত্ব বিজেআইসির (পরবর্তী বিজেএমসি)। আবাহনী হয় রানার্সআপ। শিরোপার জন্য অবশ্য দলটিকে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৯৭৪ সালেই গোলাম সারোয়ার টিপুর নেতৃত্বে আবাহনী প্রথম বিভাগ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই শুরু শত প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রের মধ্যেও শেখ কামালের আবাহনীকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ফুটবলে সাফল্যের পতাকা উড়িয়েই চলেছে। শিরোপা লড়াই আবাহনী ও মোহামেডানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত বলে দুই দলকে একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল বলা হতো। এখনতো আবাহনীকে দেশের ফুটবলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল বললেও ভুল হবে না। লিগ ইতিহাসের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মিলিয়ে মোহামেডানের শিরোপার সংখ্যা ১৯। সেখানে কিনা স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত হয়ে আবাহনী ১৭ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যেভাবে এগুচ্ছে তাকে লিগ জয়ের দিক দিয়ে ৮০ বছরের মোহামেডানকে পেছনে ফেলাটা সময় ব্যাপারই মনে হচ্ছে। শুধু কি তাই ফেডারেশন কাপেও আবাহনী পিছিয়ে নেই।

১৯৮০ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে মোহামেডান টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে অনেকটা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছিল। সেখানে কিনা এখন  আবাহনী ও মোহামেডান ১০ বার করে শিরোপা ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

পেশাদার লিগে শিরোপাটা যেখানে মোহামেডানের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সেখানে ১০ আসরে হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ৬ বার লিগ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে আবাহনীর। হ্যাটট্রিক শিরোপার রেকর্ড আরও একবার রয়েছে দলটির।

লিগ, ফেডারেশন কাপ ও অন্য টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ফুটবলে এখন আবাহনীর সংখ্যা ৪০। পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মিলিয়ে এই সংখ্যাটা হয়তো মোহামেডানেরই বেশি। কিন্তু বয়সের পার্থক্য বিচার করলে আবাহনীই এগিয়ে। ৪৬ বছরে সব মিলিয়ে ৪০ বার চ্যাম্পিয়ন ফুটবলে বিরল ঘটনা বলা যায়। এই সাফল্যের পেছনে সালাউদ্দিন, অমলেশ, আশরাফ, টুটুল, আসলাম, মোনেম মুন্না, রুমিসহ অনেক ফুটবলারের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু সাংগঠনিক দক্ষতা ও ম্যানেজমেন্টের প্রসঙ্গটা অবশ্যই উঠে আসবে। ফুটবলে প্রথম অধিনায়ক আবদুস সাদেক বলেন, ‘একটা দলের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকাটা থাকে ম্যানেজমেন্টের। অতীত ও বর্তমানে সেই ধরনের যোগ্য সংগঠকদের মাধ্যমে আবাহনী পরিচালিত হচ্ছে বলে একের পর এক সাফল্য আসছে।’

গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, একটা ক্লাবের পরিবেশ ও একতায় সবকিছু বদলে দিতে পারে। আবাহনী ক্লাব সেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তাই বড় তিন খেলায় সমানভাবে সাফল্য পাচ্ছে। ক্লাব প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামাল শহীদ হওয়ার পর আবাহনী টিকে থাকবে কিনা সন্দেহ ছিল। কিন্তু হারুনুর রশিদ ও সাদেক ভাইদের সাহসী ভূমিকার কারণে দলটি এগিয়ে গেছে। এখন প্রবীণ ও নবীন সংগঠকরা মিলেমিশে কাজ করছে বলে আবাহনী ক্রীড়াঙ্গনে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল দলের ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন সত্যজিত দাশ রুপু। তিনি বলেন, ঐক্য থাকলে সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, তা আবাহনী প্রমাণ করেছে।

সর্বশেষ খবর