শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

তবু আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তবু আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক!

শামসুল আলম মঞ্জু। বাংলাদেশের ফুটবলে তারকা ফুটবলার ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা আবাহনী ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে। তার দলবদলটা ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। মোহামেডানে স্বাক্ষর করেই হাজার হাজার সমর্থক মঞ্জুকে নিয়ে স্টেডিয়াম আঙ্গিনায় উন্মাদনায় মেতে উঠে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল মোহামেডান যেন কোনো বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার পেয়ে গেছে। সমর্থকরা মঞ্জুকে মাথায় তুলে ব্যান্ড বাজিয়ে পুরো স্টেডিয়াম প্রদিক্ষণ করে ক্লাবে নিয়ে আসে। দলবদলে অন্য কোনো ফুটবলারকে ঘিরে এতটা উৎসব আর কখনো হয়নি।

মঞ্জু যখন আবাহনীতে খেলতেন তখন নাকি তার পারিশ্রমিক ছিল বড়জোর ২০ হাজার টাকা। মোহামেডানে তিনি ৯০ হাজার টাকায় যোগ দেন তিন বছরের চুক্তিতে। অর্থাৎ মৌসুম প্রতি তার পারিশ্রমিক ছিল ৩০ হাজার টাকা। ওই সময়ে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু পারিশ্রমিক ছিল হাতের নাগালেই। যত বড় তারকা হোক না কেন ইচ্ছা করলেই আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক হাঁকাতে পারতেন না। ডিমান্ড থাকতো, তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। বাংলাদেশের ফুটবল কিংবদন্তিতো কাজী সালাউদ্দিন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪। টানা এক যুগ আবাহনীতে খেলেছেন। তিনিও তো ইচ্ছা করলে পারিশ্রমিক হাঁকাতে পারতেন না। জাকারিয়া পিন্টুর মতো ফুটবলারও নাকি মোহামেডানে খেলেছেন অনেকটা বিনা পয়সায়।

আগেও ফুটবলের মান যে খুব আহামরি ছিল তা বলা যাবে না। তবে জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। বড় দলের ম্যাচ হলে গ্যালারি থাকতো ভরপুর। মোহামেডান-আবাহনী লড়াই হলেতো কথাই নেই। সাতদিন আগে থেকেই দেশব্যাপী উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো। এখন না আছে মান না আছে জনপ্রিয়তা। তারপরও ঘরোয়া ফুটবলে টাকার ছাড়াছড়ি। ঘরোয়া মৌসুম শেষ হয়েছে কিছুদিন আগে।

অথচ এখুনি ক্লাবগুলোর মধ্যে দলবদলের উত্তেজনা শুরু হয়ে গেছে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে ফুটবলাররা। জাতীয় দলের ভরাডুবিতে পরিচিত ফুটবলারদের ডিমান্ড শেষ হয়ে গেছে। স্বাধীনতা কাপে অখ্যাত খেলোয়াড়দের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আরামবাগ চোখ খুলে দিয়েছে। লোকাল ফুটবলারদের মানের কোনো পার্থক্য নেই। তা প্রমাণ মিলেছে স্বাধীনতা কাপে। তা না হলে লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ৩-০ গোল আরামবাগের কাছে হারে?

বড় বড় ক্লাব আসন্ন মৌসুমে তরুণদেরই গুরুত্ব দিচ্ছে। ফুটবলে এখন তারকা বলতে কিছুই নেই। অথচ এই তরুণরাই আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন। অবিশ্বাস্য চাহিদা। যেখানে ফুটবলের মান অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেখানে ৫০ ছাড়িয়ে ৬০ লাখ টাকা চাচ্ছেন। সর্বনিম্ন বড় জোর ৩০ বা ২০ লাখ হবে। উপায়ও নেই, শিরোপার জন্য যারা দল গড়বে তারা হয়তো এই পারিশ্রমিকই দেবে। সাকিব, মাশরাফি, তামিম, মুশফিকদের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে পারিশ্রমিক ৩৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে তারকারখ্যাতি না থাকার পরও ফুটবলাররা অবিশ্বাস্য পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন।

পিন্টু, সালাউদ্দিন বা মঞ্জুরা তো অনেক আগের কথা। শেখ মো.আসলাম, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না, সাব্বির, মহসিন, কানন, রুমি, জুয়েল রানা, নকিব, আলফাজরা ৫০ লাখ টাকা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা সেরা দল গড়েও বাজেট ছিল বড় জোর ২ বা ৩ কোটি। মোহামেডান-আবাহনী এর চেয়েও কম বাজেটে তারকা নিয়ে দল গড়েছে। এখন কথায় কথায় ৬০ বা ৫০ লাখ। মোনেম মুন্না ১৯৯০-৯১ মৌসুমে আবাহনী থেকে ২০ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। সেই খবর ওই সময়ে প্রতিটি দৈনিকে প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছিল।

এখন ফুটবলে মান ও জনপ্রিয়তা নেই। তবু লাখ লাখ টাকা পারিশ্রমিক যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কখনো কি আসলাম, কায়সার, মুন্না, সাব্বিরদের মতো তারকার দেখা মিলবে। কি ট্র্যাজেডি! এরপরও অচেনারাই আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছে। যে অবস্থা তাতে ফুটবলে পারিশ্রমিক ১ কোটি ছাড়িয়ে যেতে মনে হয় না বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর