বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

চোখ এবার কনকাকাফ গোল্ডকাপে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চোখ এবার কনকাকাফ গোল্ডকাপে

কথা দিয়েছিলাম চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরব। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার সময় এ কথাই কি বলছেন মারিয়া, তহুরা, শামসুন্নাহাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

হংকংয়ে জকি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ কিশোরী ফুটবল দল দেশে ফিরেছে। সোমবার মধ্যরাতে অনূর্ধ্ব-১৫ দল ঢাকা এসে পৌঁছালে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। দেশের বাইরে ফিফা স্বীকৃত টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিশোরীরা আবেগ আপ্লুত। অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা বলেন, ‘লক্ষ্য আমাদের একটাই ছিল শিরোপা। তিন প্রতিপক্ষ ইরান, মালয়েশিয়া ও হংকং র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকলেও প্রতিজ্ঞা ছিল মাঠে আমরা সেরা খেলাটাই খেলব।’

মারিয়া বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে। তিন ম্যাচেই বড় ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আসলে এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে ফুটবল ফেডারেশনের আন্তরিকতায়। তারা আমাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তার যোগ্য প্রশিক্ষণে ট্রফি জেতা সম্ভব হয়েছে। তবে এই ট্রফি আমাদের শেষ নয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।’

হংকং টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন শামসুন্নাহার। তিন ম্যাচেই এ কিশোরী দারুণ খেলেছেন। ফিফা স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের কারোর সেরা খেলোয়াড়ের প্রাপ্তিটা নিঃসন্দেহে গৌরবের। যোগ্যতা প্রমাণ করেই শামসুন্নাহার তা জিতেছেন। শামসুন্নাহার বলেন, ‘টুর্নামেন্টে সেরা হওয়াটা আনন্দের। তবে শিরোপার অনুভূতিটা আবার অন্যরকম। আমি গর্বিত যে হংকং জয়ে খেলোয়াড় ছিলাম।’

দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন তহুরা। শিরোপা জিতে উচ্ছ্বাসিত তিনি। বললেন, ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। সামনে আরও টুর্নামেন্টে আমরা চাই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে সুনাম কুড়াতে। আমরা আরও শক্তিশালী দলকে হারাবো। পরিশ্রম করলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয় তা আমরা প্রমাণ করেছি।’

মহিলা ফুটবলে অগ্রগতির পেছনে বড় অবদান খেলোয়াড়দেরই। মাঠে তারা ভালো খেলছে বলেই সাফল্য আসছে। কিন্তু যার প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ এগিয়েছে তার অবদান কি অস্বীকার করা যাবে। গোলাম রব্বানী ছোটন। ফুটবলার হিসেবে সেভাবেই খ্যাতি না পেলেও নারী দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নাম ক্রীড়ামোদীদের মুখে মুখে। সাফল্যের নেপথ্য কারিগর তিনিই। নেপাল ও তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ বাছাইপর্ব। ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলা। সবই সম্ভব হয়েছে ছোটনের প্রশিক্ষণে। শুধু কি তাই, মূল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দল রানার্সআপ। ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে ট্রফিও এসেছে তার প্রশিক্ষণে। এবার দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ফিফা স্বীকৃত টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। এরপরও কি তাকে সাফল্যের কারিগর না বলে কি উপায় আছে।

হংকংয়ের চার জাতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছোটন অভিভূত। তিনি বলেন, ‘তিন ম্যাচে এতটা সহজভাবে জিতব ভাবতেই পারিনি। টার্গেট অবশ্যই শিরোপা ছিল। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এ ধারণা করেছিলাম। সত্যিই মেয়েদের প্রশংসা না করে পারছি না। সবাই অসাধারণ খেলেছে। টিম স্পিরিট ও দেশপ্রেম থাকলে সব ভয়কে জয় করা যায় তা মেয়েরা প্রমাণ দিয়েছে।’

ছোটন বলেন, ‘বাফুফে আন্তরিকতার কারণে নারী দলের অগ্রগতি ঘটেছে। বিশেষ করে আমি সভাপতি সালাউদ্দিন ভাইকে ধন্যবাদ দেব। উনি প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি রাখেননি। গতকাল উনি আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। শিরোপা জয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে খেলোয়াড়দের একটাই কথা বলেছেন, তোমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। আমি চাই বাংলাদেশ নারী দল এশিয়ার শক্তিশালী দলে পরিণত হোক।’

অভিজ্ঞ সংগঠক নারী দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘হংকংয়ে ট্রফি জয় নিঃসন্দেহে বড় একটা প্রাপ্তি। তবে নারীদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। সেই কথাটাই ফুটবলারদের মনে করিয়ে দিয়েছেন সালাউদ্দিন ভাই। সামনে নারী দলকে ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হবে। মে মাসে ব্যাংককে ১৬ জাতি ফুটবল, আগস্টে সাফ ১৫, অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ও অক্টোবরে ১৯ বাছাইপর্ব। ডিসেম্বরে আবার জাতীয় দলের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সুতরাং সাফল্য ধরে রাখতে আরও ভালো খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস মেয়েরা তা পারবে। এখন পেছনে তাকানোর পথ নেই।’ এত ব্যস্ততার মধ্যেও বাফুফে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত কনকাকাফে খেলতে। মধ্য, উত্তর ও ল্যাতিন আমেরিকা ছাড়া এশিয়ার একটি দেশ দুই বছর অন্তর অন্তর এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। বাফুফে মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান ও ফিফার কাউন্সিল মেম্বার মাহফুজা আক্তার কিরণ চাচ্ছেন বাংলাদেশকে খেলাতে। কিরণ বলেন, ‘যদিও এশিয়ার একটি দেশ খেলে তারপরও ফিফার কাছে আবেদন করব বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার। আমার বিশ্বাস নারী দলের পারফরম্যান্স যাচাই করে ফিফা আমাদের আবেদনে সাড়া দেবে।’

সর্বশেষ খবর