শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

চলে গেলেন তারকা রেফারি মুনীর হোসেন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চলে গেলেন তারকা রেফারি মুনীর হোসেন

এখন দেখা না মিললেও এক সময়ে বাংলাদেশে তারকা ফুটবলারের অভাব ছিল না। ৭০ বা ৮০ দশকের সময়ে তারকা রেফারিরও দেখা মিলতো। যাদের দক্ষ ম্যাচ পরিচালনা এখনো ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখে ভাসে। এমনি একজন রেফারি ছিলেন মুনীর হোসেন। ফুটবলারদের কাছে যিনি স্যার বলেই পরিচিত ছিলেন। সেই সাড়া জাগানো রেফারি আর নেই। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুনীর ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম ফিফা ব্যাজধারী রেফারি। কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। কাবাডির জনপ্রিয়তার পেছনে তার অবদান কখনো ভোলবার নয়। দীর্ঘদিন ধরেই মুনীর হোসেন অসুস্থ ছিলেন। গতকাল ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। বাদ আসর মানিকনগর জামে মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে গোপীবাগ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে বাফুফে, বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট কমিউনিটি, ক্রীড়া লেখক সমিতি, গোপীবাগ ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ক্লাব শোক প্রকাশ করেছেন। ১৯৭৬ সালে লিগে ফাইনাল ম্যাচে মোহামেডান-আবাহনী মুখোমুখি। গ্যালারিতে উপচেপড়া দর্শক। ওই সময়ে দুই দলের খেলোয়াড়কে কোনো রেফারি হলুদ কার্ডই দেখানোর সাহস পেতেন না। কিন্তু মুনীর হোসেনের কাছে অন্যায় কোনোদিন পার পায়নি। ম্যাচ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবাহনীর দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল মারাত্মক ফাউল করে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে মুনীর হোসেনের লাল কার্ড শো। কিছুক্ষণ পরই অসুলভ আচরণের জন্য মোহামেডানের শামসুল আলম মঞ্জুকে লাল কার্ড দেখিয়ে বহিষ্কার করেন। দুই দলের দুই তারকা ফুটবলার লাল কার্ড পাওয়ায় পুরো গ্যালারি হতবাক।

১৯৭৮ সালে মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ। দুই দলের অধিনায়ক আপন দুই ভাই। আবাহনীর মনোয়ার হোসেন নান্নু, মোহামেডানে শামসুল আলম মঞ্জু। টস করার আগে দুই ভাইকে কাছে টানলেন মুনীর হোসেন। দুজনার চুল ধরে জানিয়ে দিলেন সাবধান ফেয়ারভাবে খেল তা না হলে শাস্তি বাধ্যতামূলক। এই ছবি পরের দিন প্রতিটি দৈনিকে ক্যাপসনসহ প্রকাশ করেছিল। মুনীর ছিলেন দুই ভাইয়ের স্কুলের গেম টিচার। দুজনকে যেমন আদর করতেন শাসনও করতেন ঠিক সময়ে।

১৯৮২ সালে সুপার লিগে মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। মোহামেডান এগিয়ে থাকার অবস্থায় খোরশেদ বাবুলের শট দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক মহসিন। আবাহনীর দাবি ছিল মহসিন বল ধরার আগে লাইন ক্রস করেছে। রেফারি মুনীর হোসেন কড়াভাষায় জানিয়ে দেন গোল হলে লাইসম্যান ঠিকই পতাকা উড়াতো। আমার বাঁশিও বাজতো। আবাহনীও খেলায় ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের হট্টগোলে ম্যাচ আর শুরু করা যায়নি। ওই সময়ে দেশে ছিল জরুরি অবস্থা। পরের দিন আবাহনীর চার ফুটবলার সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলাল ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। যদিও তাদের জেল জীবন স্থায়িত্ব ছিল স্বল্প দিন। কিন্তু কী কারণে চার খ্যাতনামা ফুটবলারকে জেল খাটতে হলো সেই রহস্যের জট আজও খোলেনি। রেফারি মুনীর হোসেন সেই ম্যাচ নিয়ে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘৮২’র সেই ম্যাচে জেলে পাঠানোর মতো কেউ অন্যায় করেনি। ’

সর্বশেষ খবর