শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আফসোস নিয়েই চলে গেলেন গাজী

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আফসোস নিয়েই চলে গেলেন গাজী

কোন পরিচয়ে তাকে চেনা যায়। তারকা ফুটবলার খ্যাতনামা কোচ না ক্রীড়াপাগল লোক। ওয়াজেদ গাজী শুধু বাংলাদেশ নয় উপমহাদেশে ফুটবলে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। সেই তারা নিভে গেল। আর কখনো খেলার মাঠে হাস্যোজ্জ্ব্বল ওয়াজেদ গাজীকে দেখা যাবে না। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে শয্যাশায়ী থেকে গতকাল মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) দেশের ফুটবলে ওস্তাদ নামে খ্যাত ওয়াজেদ গাজী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

১৯৭৫ সালে ঢাকা প্রথমবিভাগ লিগে মোহামেডান-আবাহনীর স্মরণীয় ম্যাচটি এখনো চোখে ভাসে। ৪-০ গোলে জিতেছিল মোহামেডান। চার গোলের মধ্য তৃতীয়টি এসেছিল গাজীর পা থেকে। হাফিজ ও নওশের গোল করেন তার নিখুঁত ক্রসে। দুই যুগ ফুটবলের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে গাজী ওই সময়ে স্বপ্নের দল কলকাতা মোহামেডানে খেলেন। পঞ্চাশ দশকে টানা দুই মৌসুম মোহামেডানে খেলে কলকাতার মাঠ কাঁপান। ঐতিহ্যবাহী দলের হয়ে ১০টি অসাধারণ গোলও করেন তিনি।

১৯৬৪ সালে কলকাতা মোহামেডান ছেড়ে গাজী যোগ দেন ওই সময়ে ঢাকার আলোচিত দল ইপিজিপ্রেসে। ৬৭ সালে যোগ দেন শক্তিশালী অফিস দল ইপিআইডিসিতে (বর্তমানে টিম বিজেএমসি)। ওই সময়ে ইপিআইডিসিতে ছিল পাকিস্তানি মাকড়ানি ফুটবলারদের দাপট। বাঙালি ফুটবলারদের সেরা একাদশে সুযোগ পাওয়াটা স্বপ্নই ছিল। কিন্তু গাজীকে আর সাইড লাইনে রাখা যায়নি। যোগ্যতা দেখিয়ে তিনি নিয়মিত খেলে গেছেন। দীর্ঘদিন এই দলে খেলায় তার পরিচিত হয়ে উঠে বিজেএমসির লোক বলেই। ১৯৭৪ সালে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের অফার আর ফেলতে পারেনি। বিজেএমসি ছেড়ে যোগ দেন সাদা-কালো জার্সিধারীর দলে। দৈনিক পাকিস্তানে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, স্বপ্ন ছিল দুই বাংলার মোহামেডানে খেলার। সত্যিই আমি ভাগ্যবান কলকাতা ও ঢাকা মোহামেডানে খেলার। গাজী থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার পর মোহামেডান প্রথমবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। পরের বছরই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে নাম লেখান। ১৯৭৭ সালে নীরবভাবে এই দল থেকে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানেন। তারকা ফুটবলাররা কোচ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন খুব কমই। গাজী এখানেও সফল। রহমতগঞ্জ, আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ রাসেল, ওয়ান্ডারার্স, ব্রাদার্স ইউনিয়নে দীর্ঘ দিন প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। দুর্বল দল নিয়েও জ্বলে ওঠায় কোচ হিসেবেও তারকার খ্যাতি পেয়ে যান গাজী। জাতীয় দলেরও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গাজীর হাত ধরেই বের হয়ে আসেন কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না, জুয়েল রানা, বরুন, আয়াজ, জিয়া বাবু, আলফাজরা। যারা পরবর্তীতে তারকার খ্যাতিও পান। অসংখ্য প্রতিভার সন্ধান দেওয়ায় ফুটবলে ওস্তাত খ্যাতিটাও পেয়ে যান গাজী। গাজীর প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। অথচ তাকেই কিনা বড় একটা আফসোস নিয়ে চলে যেতে হলো। যোগ্য খেলোয়াড়, যোগ্য কোচ হওয়ার পর গাজীর কপালে এখনো জোটেনি জাতীয় পুরস্কার। এক সাক্ষাৎকারে গাজী বলেছিলেন এনিয়ে আমার আফসোস রয়েছে কোনো অভিযোগ নেই। যোগ্য মনে করেনি বলে আমাকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়নি। হয়তো মৃত্যুর পর যোগ্যতার স্বীকৃতি পাব। এ কথা বলেই চোখে আর পানি ধরে রাখতে পারেননি। কষ্ট লাগে গাজীর মতো কিংবদন্তি ফুটবলারও অর্থ সংকটে ঠিকমতো চিকিৎসা করতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর