মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চ্যালেঞ্জ এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ

আগে যাই হোক। আশা ছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। তা আর হলো কই। ঘুরে ফিরে সেই হতাশাতেই বন্দী জাতীয় দল। বাফুফে কোনো কিছুরই ঘাটতি রাখেনি। সাফের মতো টুর্নামেন্টে যতটুকু প্রস্তুতি দরকার বলা যায় তার চেয়ে বেশিই হয়েছে। ঘরে ও বাইরে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের পাশাপাশি একাধিক প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে কাতারকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠায় আশাটা আরও বেড়ে গিয়েছিল। সাফে গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর সেমি নয়, ফাইনাল খেলার সম্ভাবনাও অনেকে দেখতে শুরু করেছিলেন।

সেই বাংলাদেশই কিনা নেপালের কাছে হেরে শেষ চারেও জায়গা করে নিতে পারল না। হিসেবটা এমন ছিল বাংলাদেশ ও ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে এটা নিশ্চিত। সেমিফাইনালে জামালদের লড়তে হবে মালদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। উজ্জীবিত বাংলাদেশ এই বাধা দূর করে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে লড়বে এটা আশা করেই সবাই বসে ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হলো চরম হতাশা দিয়েই। কত আশা। অথচ এক হারেই সবশেষ। টানা চার আসর সেমিফাইনালে খেলা থেকেই বঞ্চিত থেকে গেল বাংলাদেশ। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস যে মালদ্বীপকে এবার লেংড়া লুলা মনে হয়েছিল তারা টস ভাগ্যে শেষ চারে এমনকি দাপুটের সঙ্গে ফাইনালও খেলল। বার বার ট্রফি জেতায় যে ভারতকে সাফের ব্রাজিল বলা হতো তাদেরকে হারিয়ে ১০ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে হারানো মুকুট উদ্ধার করল তারা। সাফে বাংলাদেশের ব্যর্থতা নতুন নয়। ১২ আসরে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে এবার নতুন করে আশা জেগেছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। নেপালের কাছে হেরে বিদায় নেওয়ার পর ক্রীড়ামোদীরা এতটা ভেঙে পড়েছেন যে ফুটবল ঘিরে সব আশাই তারা হারিয়ে ফেলেছে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও এমন ভরাডুবিতে নির্বাক। হবেনই না কেন, তিনিতো এবার কোনো কিছুরই ঘাটতি রাখেননি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি যখন মালদ্বীপের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছিলেন কষ্টের হাসিটাই তার মুখে দেখা যাচ্ছিল। নিঃসন্দেহ ফুটবলাররাও হতাশ। কী চেয়েছিলেন আর কী পেলেন তারা? এই ভাঙা মন নিয়েই কয়েক দিন পরই তাদের নামতে হবে বাফুফের নিজস্ব টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপে। ১ অক্টোবর শুরু। অথচ ফুটবলাররা এখনো ছুটি কাটাচ্ছেন। কোচ  জেমি ডেও ছুটিতে আছেন। অবশ্য ফুটবলারই বা কী করবেন নেপালের কাছে হারার পর তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্যাম্প শুরু হলেই তোমাদের ডাকা হবে। এমন ভাঙা মন নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে ফুটবলাররা যে জেগে উঠবেন এই আশা অনেকেই ছেড়েই দিয়েছেন। বাফুফেও হয়তো তাই ভাবছে। তা না হলে সামনে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থাকার পরও ফুটবলারদের এভাবে ছুটি দেওয়া হলো কোন যুক্তিতে? ২/১ দিন বিশ্রাম দিয়ে তো আবার ক্যাম্প শুরু করা যেত। তাছাড়া হেড কোচকেও ছুটি দিয়ে তাকে দেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো কেন? কোচ অবশ্যই ছুটি পাবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিডিউল যখন আগেই ঠিক করা তখন জেনে শুনেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা কেন? ১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের পর্দা উঠছে। অথচ স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রস্তুতি কবে শুরু হবে এ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। কেননা ছুটি দেওয়ার সময় ফুটবলারদের বলা হয়েছে ২৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্প শুরু হতে পারে। এখন আবার শোনা যাচ্ছে ২২ সেপ্টেম্বর ক্যাম্প হবে। এ ব্যাপারে ডেপুটি কোচ মাহবুব হোসেন রক্সির সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, ক্যাম্প শুরু কবে হবে আমাকে এখনো জানানো হয়নি। যাক একেবারে অনুশীলন ছাড়া বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে নামবে তাও নয়। ধরলাম ২২ সেপ্টেম্বর ক্যাম্প শুরু হবে। তাহলে তো ৭ দিনের প্রস্তুতি নিয়েই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নামবে। বিশ্ব ফুটবলে এ এক নতুন ইতিহাসই বলা যায়। কেননা এত স্বল্প সময়ের অনুশীলনে কেউ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছে এমন নজির খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কোচ জেমি নিশ্চয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে দলে পরিবর্তন আনবেন। সাফে ব্যর্থতার পর কেউ কেউ হয়তো ট্রায়ালেই ডাক পাবেন না। নতুন মুখের দেখা মিলবে। প্রশ্ন হচ্ছে এত স্বল্প সময়ে এত কিছুর সমাধান দেবেন কীভাবে? বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে গ্রুপে বাংলাদেশের দুই প্রতিপক্ষ ফিলিপাইন ও লাওস যে খুব শক্তিশালী তাও নয়। তবে জোড়াতালি দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ কী করবে এটাই বড় প্রশ্ন। সাফে হোঁচট খাওয়ায় এমনিতেই ফুটবলারদের মন ভেঙে গেছে। স্বল্প দিনের ব্যবধানে আরেকটি টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হলে মনোবল বলে কিছু থাকবে কী তাদের?

সর্বশেষ খবর