বৃহস্পতিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

লজ্জার ‘বৃত্তে’ বন্দী টাইগাররা

১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮, ১৪৩, ১৬৯— এই স্কোরগুলো কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত স্কোর নয়! এক একটি স্কোর হচ্ছে ১১ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল। টেস্টের সব শেষ আট ইনিংসে বাংলাদেশের দলীয় আট স্কোর!

মেজবাহ্-উল-হক

লজ্জার ‘বৃত্তে’ বন্দী টাইগাররা

যতই দিন যাচ্ছে বোলারদের জন্য ক্রিকেটের আইন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আগে এক ওভারে ইচ্ছেমতো বাউন্সার দেওয়া যেত। থম্পসন, হোল্ডার, লিলি, গার্নাদের যুগে অনেক সময় ওভারের ছয় বলেই ছয় বাউন্স দিয়ে ব্যাটসম্যানকে নাকাল করা হতো। ইচ্ছেমতো বিমারও করা যেত। কিন্তু এখন ক্রিকেটে বিমার নিষিদ্ধ।

ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি ব্যাটসম্যানদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে মূলত রান বেশি হওয়ার জন্য। আর বেশি রান হলে ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে। সেটাই হচ্ছে আইসিসির আসল লক্ষ্য। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি মানুষের যাতে আগ্রহ কমে সে জন্য নানাভাবে বিভিন্ন আইন করে ব্যাটসম্যানদের দেওয়া হচ্ছে বাড়তি সুবিধা।

টেস্টে ব্যাটসম্যানরা এখন অনেক রানও পাচ্ছেন। কোহলি, রুটস, রোহিত, ধাওয়ানরা রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কী করছেন? এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পান না। তাই বলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের এমন জরাজীর্ণ দশা?

 ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮, ১৪৩, ১৬৯— এই স্কোরগুলো কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত স্কোর নয়!  এক একটি স্কোর হচ্ছে ১১ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল। টেস্টের সব শেষ আট ইনিংসে বাংলাদেশের দলীয় আট স্কোর! ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যত রানই করুক না কেন টেস্টে ব্যাটসম্যানরা শেষ আট ইনিংসে ২০০ রানই পার করতে পারেননি। যেন এক লজ্জার বৃত্তে বন্দী হয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা।

অনেক ছোট দলও বড় দলকে বাজেভাবে হারায়— ক্রিকেটে এমন ঘটনা অহরহ দেখা যায়। কিন্তু এমনটা সাধারণত ঘটে টি-২০ কিংবা ওয়ানডে ক্রিকেটে। টেস্ট তো আর একদিনের খেলা নয়। পাঁচ দিনের খেলা। পনের সেশনের খেলা। প্রতি দিন কখনো কখনো প্রতিটি সেশন নিয়ে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করতে হয়। সিলেট টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট কী পরিকল্পনা করেছিল?

‘খরগোশ ও কচ্ছপ’— এর গল্প খুবই পরিচিত। ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে হয়তো বেশ অহমিকাই এসেছিল বাংলাদেশ দলের মধ্যে। টিম ম্যানেজমেন্টও ভেবেছিল, এই জিম্বাবুয়েকে হারাতে আর কী এমন সুপরিকল্পনার দরকার— নিয়ম মেনে ১১ জন মাঠে নামিয়ে দিলেই হবে! শক্তি সামর্থ্য থাকার পরও বাংলাদেশ দল শেষ পর্যন্ত গল্পে খরগোশই হয়ে গেল, একাগ্র প্রচেষ্টা আর ধৈর্যশীলতার পুরস্কার হিসেবে জিম্বাবুয়েই পেয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত জয়।

আফ্রিকার এই দলটি দেশের বাইরে ১৭ বছর পর জয় পেল। সত্যি কথা বলতে, বাংলাদেশ যেন তাদের জয়টা উপহার দিল!

জিম্বাবুয়ের মতো এমন হারের পর একটা প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক— বাংলাদেশ দলের সমস্যা কি সামর্থ্যে নাকি মানসিকতায়? এই দলটাই তো ওয়ানডেতে এই জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়েছে। কী এমন ঘটনা ঘটল যে টেস্টে তারা পাত্তাই পেল না?

সিলেট টেস্টে প্রথম দিন থেকেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছিল জিম্বাবুয়ে। যদিও বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা তা কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ব্যর্থ এবং লজ্জার হার!

ব্যাটসম্যানরা কেউ প্রায় সবাই ভুল শট খেলে আউট হয়েছেন, উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। মনে হয় যেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই উইকেট তুলে নিয়েছেন! যখন উইকেটের দরকার হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের টোপ দিয়েছেন, আর তা খুব সহজেই টোপ গিলেছে মাহমুদুল্লাহরা।

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টের মেজাজই ছিল না! কখনো কখনো বাজে বলেও ডিফেন্স করছেন, আবার যে বল ছেড়ে দেওয়ার কথা সেটি খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন। এক কথায় ব্যাটিং ছিল যাচ্ছেতাই!

সিলেট টেস্টে ব্যর্থতার পর এবার ঢাকায় কি ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ দল? ঢাকা টেস্ট শুরু হবে ১১ নভেম্বর থেকে। হারলে হোয়াইটওয়াশ। ম্যাচ ড্র হলে সিরিজ হার। কেবল জয় পেলেই সিরিজে সমতা আসবে। জিম্বাবুয়ে মনেপ্রাণে চাইবে সিরিজ জিততে। কিন্তু বাংলাদেশ কি সিরিজে সমতা ফেরাতে পারবে?

সিলেট টেস্ট থেকে শিক্ষা নিতে পারলে এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হারার সুযোগ নেই— এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়! তবে ব্যাটসম্যানদের নিশ্চয়ই ধৈর্যের ওষুধ খাওয়াতে হবে! অবশ্য ‘ওয়ানডে’ ক্রিকেটের মতো ব্যাটিং করতে বললেই বা দোষ কী? সেক্ষেত্রে অন্তত ২০০-এর নিচে আটকে পড়া লজ্জার ‘বৃত্ত’ ভাঙতে পারবে বাংলাদেশ!

সর্বশেষ খবর