রবিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাইগারদের বাঁচামরার টেস্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টাইগারদের বাঁচামরার টেস্ট

চ্যালেঞ্জের মুখে মাহমুদুল্লাহ। হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে ঢাকা টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হারাতেই হবে। পারবে কি টাইগাররা এ লজ্জা ঠেকাতে? —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেটের অভিষেক টেস্টে সোয়া তিন দিনে হার। এখন সিরিজ হারের হাতছানি। অপেক্ষাকৃত দুর্বল (!) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্সে কোণঠাসা মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকরা। আকাশসম চাপে বেসামাল টাইগাররা যখন মিরপুরে মান বাঁচানোর টেস্ট লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন ক্রিকেটাঙ্গন থেকে শুরু করে গোটা দেশ মশগুল দুই তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি এবং ওয়ানডে ও টি-২০ অধিনায়ক সাকিব খেলছেন না টেস্ট সিরিজ। কিন্তু মিরপুরের বাঁচামরার টেস্ট শুরুর আগে দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক আলোচনার কেন্দ্রে থাকার একটাই কারণ, নির্বাচন। দুজনে বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের পক্ষে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আজ নমিনেশনপত্র কিনবেন। দুই তারকার নির্বাচনমুখিতায় আড়ালে পড়ে গেছে মাহমুদুল্লাহদের মিরপুর টেস্টে ফেরার মিশন। এমন এক সময় টেস্টে নামছে টাইগাররা, যখন টেস্ট ক্রিকেটে ১৮ বছর পেরিয়েছে বাংলাদেশ। আজ ১৯ বছরে পা দিচ্ছে ১১০ নম্বর টেস্ট দিয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলবে ১৬ নম্বর টেস্ট। আগের ১০৯ টেস্টে জয়সাকুল্যে ১০টি, ড্র ১৬ এবং হার ৮৩। কুলীন সমাজে দেড় যুগের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নন দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। পারফরম্যান্সের গ্রাফ আরও ভালো হতে পারত মনে করেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক।

দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হয়েছে সিলেটের। ওয়ানডে সিরিজে দুর্দমনীয় পারফরম্যান্সের আত্মবিশ্বাস নিয়ে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে আতিথেয়তা দেন মাহমুদুল্লাহ গং। কিন্তু টেস্টের প্রথম দিন থেকে ছন্দহীন হয়ে পড়ে টাইগাররা। হেরে যায় সোয়া তিন দিনে। এই বছর টেস্ট খেলেছে ৫টি। আজ খেলতে নামছে ছয় নম্বর টেস্ট। আগের পাঁচ টেস্টের চারটিতেই হেরেছে। বছরের শুরুতে প্রথম টেস্ট ছাড়া বাকি চার টেস্টের আট ইনিংসে একবার দুইশর ঘর ছুঁতে পারেনি টাইগাররা। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ডও আছে। আজ মিরপুরে নামার আগে আট ইনিংসের বাংলাদেশের স্কোর ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮, ১৪৩ ও ১৬৯। শুধু এমনই নয়, এই আট ইনিংসে একটি মাত্র পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস, সেটা আবার নুরুল হাসান সোহানের। যার সুযোগ হয়নি আফ্রিকানদের বিপক্ষে সিরিজে।

ব্যাটসম্যানদের টানা ব্যর্থতায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, টেস্ট খেলার সামর্থ্য নিয়ে। টানা আট ইনিংসে দুইশ ছোঁয়া ইনিংস নেই যাদের, সেই দলের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও বিব্রত ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে। ১৮ বছরে ব্যাটিং নিয়ে আস্থাবান হতে পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। টাইগারদের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও মনে করেন দেড় যুগের পারফরম্যান্সের বিচারে এখনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি বাংলাদেশ, ‘যদি ফলাফল হিসাব করেন, তাহলে আমি বলব অতটা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। টেস্টে ভালো ফল পেতে নিয়মিত খেলতে হবে আপনাকে। ওয়ানডেতে যেভাবে ভালো খেলছি, রিদম ধরতে পেরেছি, টেস্টে হয়তো সেটা ধরতে পারছি না। কিছু ম্যাচে ভালো করেছি। কিছু ম্যাচে আবার বাজে পারফর্ম করেছি। টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিন বিভাগেই ডিসিপ্লিন হতে হবে। টেস্টে বড় জুটি গড়তেই হবে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং ভালো করলে আপনার ফলাফল পক্ষে আসবেই।’

চলতি বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ খেলছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করা ছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে সিরিজে। ফাইনাল খেলেছে এশিয়া কাপের। ওয়ানডেতে যতটা কঠিন প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, ঠিক ততটাই দুর্বল টেস্টে। ওয়ানডের সফল ব্যাটসম্যানরা তালগোল হারিয়ে ফেলেন টেস্টে। দায়ী কি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস? অধিনায়ক স্বীকার করেননি, ‘আমরা আসলে সেভাবে ভাবি না। আমরা সব দলকে একই রকম প্রতিপক্ষ ভাবি।’ সিলেটে ১০ সেশনের মধ্যে হারের পর গোটা দল একসঙ্গে বসেছিল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করতে সচেষ্ট হয়েছিল ব্যর্থতার কারণ। সেই কারণগুলোকে শুধরে মিরপুরে জয় নিয়ে মাঠছাড়ার পরিকল্পনা মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর। কিন্তু কোন একাদশ খেলবে, এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। সিলেটে এক পেসার খেলানোয় চরমভাবে সমালোচিত হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরপুরে একজন পেসার না তিনজন খেলবেন, কিংবা ব্যাটিং ব্যর্থতাকে আড়াল করতে মিরপুরে একাদশে পরিবর্তন আনবে টিম ম্যানেজমেন্ট। একাদশ কেমন হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু না বললেও পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন অধিনায়ক, ‘মিরপুরের উইকেট সব সময়ই একটু আনপ্রেডিক্টেবল। যা প্রত্যাশা করবেন, সেটা হয় না। এমন ঘরানার উইকেটের সঙ্গে মানিয়েই একাদশ সাজানো হয়।’ মিরপুর টেস্ট হেরে গেলে সিরিজ হেরে যাবে বাংলাদেশ। আকাশসম চাপ মাথার ওপর। তাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে মাহমুদুল্লাহরা শতভাগের ওপর দিয়েই খেলবেন মিরপুরে। টেস্ট শুরুর আগে সেটাই জোরেশোরে বললেন টাইগার অধিনায়ক, ‘আমার মনে হয় আমাদের প্লেয়াররা হৃদয় দিয়ে খেলেন। দেশের জন্য তারা সব সময় ১০০ ভাগ দিয়েই খেলেন। এই টেস্টে আমরা ১২০ ভাগ দিয়ে খেলব।’

আগের পাঁচ টেস্টের পারফরম্যান্সকে আড়াল করে এবার মিরপুরে ভালো করতে মরিয়া। আত্মবিশ্বাসী টেস্ট খেলে নিজেদের যোগ্যতাকে শক্ত ভিত দিতে প্রস্তুত মাহমুদুল্লাহরা।

সর্বশেষ খবর