মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

লড়াকু মনোভাবেই ডাবল সেঞ্চুরি

আসিফ ইকবাল

লড়াকু মনোভাবেই ডাবল সেঞ্চুরি

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে রেকর্ডের ‘বরপুত্র’ মুশফিকুর রহিম। রেকর্ড গড়াই যেন তার কর্ম! যখনই লম্বা ইনিংস খেলেছেন, তখনই নামের পাশে লিখে নিয়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক গতকাল মিরপুরকে রেকর্ডের খাতায় চিরস্থায়ী ঠাঁই দিয়েছেন। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার মুশফিক ২১৯ রানের রেকর্ড গড়া অপরাজিত ইনিংসটি খেলে আরেকবার প্রমাণ করলেন লড়াইয়ে জিততে লড়াকু মানসিকতা থাকতে হয়। ৬০ বছর আগে লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে যেমনটি করেছিলেন পাকিস্তানের লিজেন্ডারি ব্যাটসম্যান হানিফ মোহাম্মদ।

১৯৫৮ সালে হানিফ মোহাম্মদের পাকিস্তান তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। ব্রিজটাউনে টেস্টে ইনিংস হারের মুখোমুখি দাঁড়ানো পাকিস্তানকে একাই রক্ষা করেছিলেন হানিফ ৯৭০ মিনিট ব্যাটিং করে। ক্রিকেট ইতিহাসে বিস্ময়কর সেই ইনিংসটি খেলেছিলেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর তীব্র লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে। ওপেনার কনরাড হান্ট (যিনি ১৯৯৭ সালে এমসিসির হয়ে ঢাকা সফর করেছিলেন) ও এভার্টন উইকসের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৫৭৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ১০৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ৪৭৩ রানে পিছিয়ে ফলোঅনে পড়েছিলেন হানিফরা।  ইনিংস হারের লজ্জায় যখন কাঁপছিল পাকিস্তান, তখন অধিনায়ক আবদুল হাফিজ কারদারের অনুপ্রেরণায় ইতিহাস গড়া ইনিংস খেলেন হানিফ। ওই ইনিংসটি নিয়ে একটি গল্পও চালু আছে। হানিফের ধৈর্যশীল ব্যাটিং দেখে গাছে বসে খেলা দেখতে থাকা এক লোক পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলেছিলেন। দুই দিন পর হাতে প্লাস্টার নিয়ে খেলা দেখতে এসে ওই ক্রিকেটপ্রেমী দেখেন হানিফ তখনো ব্যাটিং করছেন। পাকিস্তান অধিনায়ক কারদার নাকি প্রতি ঘণ্টায় চিরকুট পাঠাতেন হানিফকে। সেখানে লেখা থাকত, একমাত্র তুমিই পারবে হার এড়াতে। অধিনায়কের অনুপ্রেরণায় ১৬ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ক্রিজে থেকে ম্যাচ বাঁচিয়েছিলেন হানিফ মোহাম্মদ। ওপেন খেলতে নেমে হানিফ খেলেছিলেন ৩৩৭ রানের অমর ইনিংসটি।

পাকিস্তানি লিজেন্ডের মতো ম্যাচ বাঁচানোর তাগিদ হয়তো ছিল না বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়কের। কিন্তু ছিল আকাশসম চাপ। চলতি বছরের ৬ নম্বর টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টটি ছাড়া বাকি চারটিতে হার লজ্জাজনক। আট ইনিংসে দুশো ছোঁয়া ইনিংস নেই একটিও। নেই সেঞ্চুরির ইনিংস। এমনকি হাফ সেঞ্চুরিও। তারকাসমৃদ্ধ টাইগার শিবিরের ব্যাটিং লাইনের এমন হাহাকার দেখে সমালোচকরা প্রতিনিয়তই তলোয়ার দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করছেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ছাড়া দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিক। সিলেটের অভিষেক টেস্টে লড়াইয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ব্যাট করেছেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বোলারদের আক্রমণের বিপক্ষে জিততে পারেননি। হেরে যান। হেরে যায় বাংলাদেশ। এবার যেন মরণপণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। হানিফ মোহাম্মদকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন অধিনায়ক আবদুল হাফিজ কারদার। মুশফিকের অনুপ্রেরণার জোগানদার তার স্ত্রী। যিনি প্রতিনিয়ত উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন। পরশু রাতে সেঞ্চুরির পর থেমে না থেকে প্রিয়জনকে আরও লম্বা ইনিংস খেলতে বলেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির অভিনব উদযাপনেই বলে দেন রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলে কতটা চাপমুক্ত হয়েছেন তিনি। শুধু মুশফিকই নন, আষাঢ়ের অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশটাকে নীল করে দেন। তার রেকর্ড গড়া ব্যাটিংয়েই ৫২২ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশ। মুশফিক ২১৯ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেন, ‘মনোযোগের ব্যাপারটা সাধনার ব্যাপার। এটা সব সময় আসে না। আমি অনুশীলন সেভাবেই করতে চেষ্টা করি। চেষ্টা করি মনোযোগ ধরে রেখে বেশি সময় নেটে ব্যাটিং করার। একেকজনের প্রস্তুতি একেক রকম, তো আমার প্রস্তুতি এরকম। এটা আমাকে বড় একটা আত্মবিশ্বাস দেয়, আমি আমার কাজটা করেছি, সব ঠিক থাকলে আশা করি পরে ম্যাচেও বাস্তবায়ন করতে পারব।’

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দুই-দুটি ডাবল সেঞ্চুরির মালিক মুশফিক। ২০১৮ সালে একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিয়ানও তিনি।

এতসব রেকর্ডের বরপুত্র মুশফিক ফের প্রমাণ করেছেন, লড়াইয়ে জিততে লড়াকু মানসিকতা থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর