বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন

৭ জুন হকির সেই আলোচিত ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন

সাজেদ এ এ আদেল

গত ৭ জুন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার হকি লিগে সুপার ফাইভে মুখোমুখি হয়েছিল মেরিনার্স ও মোহামেডান। ম্যাচে ড্র করলেই মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। হারলে মেরিনার্স, মোহামেডান, আবাহনীর পয়েন্ট সমান হয়ে যেত। তখন শিরোপা নির্ধারণের জন্য তিন দলকে নিয়ে প্লে-অফ ম্যাচের আয়োজন করতে হতো। ম্যাচে মোহামেডান প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায়। মেরিনার্স পরে তা শোধ করে দেয়। মোহামেডান প্রথমে এই গোল মেনে নিতে পারেনি। এ অবস্থায় খেলা বন্ধ থাকে। পরে গোলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মোহমেডান মাঠেও ফিরে আসে। তখন আবার বেঁকে বসে মেরিনার্স। তাদের কথা আম্পায়ার যে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সেই সময় উপেক্ষা করেছে মোহামেডান। বাইলজ অনুযায়ী ম্যাচ প্রত্যাখ্যান করেছে মোহামেডান। মেরিনার্সের দাবি ছিল আইনগতভাবে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হোক।

মাঠে যখন উত্তপ্ত অবস্থা তখন বাধ্য হয়ে দুই বিদেশি আম্পায়ার শেষ বাঁশি না বাজিয়েই মাঠ ছাড়েন। পরে ফেডারেশন ও লিগ কমিটি থেকে বলা হয় দুই আম্পায়ার কোনো রিপোর্ট না দিয়েই দেশে ফিরে গেছেন। জাজও কোনো রিপোর্ট দেননি। এ অবস্থায় ম্যাচের ভাগ্য ঝুলে যায়। এর মধ্যে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো চেষ্টা চালানো হয়নি তাও বলা যাবে না। লিগ কমিটি বেশ কটি সভায় বসেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কেন পারেনি সেটাই রহস্য। সিদ্ধান্তটি তারা পাঠিয়ে দেয় ফেডারেশনের গভর্নিং বডির কাছে। এর মধ্যে আবার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পদত্যাগও করেন।

যে কোনো ফেডারশনের উপ কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তার সমাধানের দায়িত্ব চলে আসে নির্বাহী কমিটির ওপর। হকি ফেডারেশনে তাই হয়েছে। বিলম্ব হলেও প্রায় পাঁচ মাস পর ৩০ অক্টোবর বৈঠকে বসেন গভর্নিং বডির সদস্যরা। ব্যস্ততার কারণে সেদিন ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সহ-সভাপতি অভিজ্ঞ সংগঠক সাজেদ এ এ আদেল। উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হকির কিংবদন্তি আবদুস সাদেক। এখানেই লিগের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। ৭ জুন ম্যাচকে ড্র মেনে নিয়ে মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

কেন এই সিদ্ধান্ত হলো তা সভার সভাপতি সাজেদ এ এ আদেল হকির কংগ্রেসে দিল্লি থাকায় তা তার মুখ থেকে জানা যায়নি। এর মধ্যে আবার কথা উঠেছে সাজেদ মোহামেডানেরই ঘরের লোক। ক্লাবের হকির কমিটির দীর্ঘদিন চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। সুতরাং তিনি মোহামেডানের পক্ষ নিতেই পারেন। সাজেদ বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্ন যদি ওঠে থাকে তা হবে হাস্যকর। কেননা আমি তো সভায় সভাপতিত্ব করিনি মোহামেডানে প্রতিনিধি হিসেবে। সভাপতি ছিলেন না বলে সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব আসে। তা ছাড়া এই সিদ্ধান্ত তো আমার একক নয়। বৈঠকে কখনো একবার উচ্চারণ করিনি মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হোক। ফেডারেশনে যখন যে দায়িত্ব পালন করিছি তখন কোনো বিশেষ দলের পক্ষও নেইনি। নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছি। সভাপতি মহোদয়ের নির্দেশ ছিল বিষয়টি যেন ঝুলে না থাকে। এই বৈঠকেই সব চূড়ান্ত করতে। সেটাই আমরা করেছি।

মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হলো কিসের ভিত্তিতে? সাজেদ বলেন, ‘দায়িত্বটি অবশ্যই লিগ কমিটির। তারা পারেননি আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া দুই অ্যাম্পায়ার কোনো রিপোর্ট না দিয়ে চলে গেছেন। সবচেয়ে বড় কথা দুই অ্যাম্পায়ার সেদিন ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজিয়েও মাঠ ছাড়েননি। তাহলে তো ম্যাচ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনা ঘটেনি। ড্র বজায় রাখা ছাড়া অন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় ছিল কী? যদি পয়েন্ট সমান হতো প্লে অফ ম্যাচের ব্যবস্থা করা যেত। পয়েন্টে এগিয়ে থাকার সুবাদে গভর্নিং বডি মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন, আবাহনী রানার্স আপ, মেরিনার্সকে তৃতীয় ঘোষণা করেছে। সাজেদ বলেন, এই সিদ্ধান্ত যখন গৃহীত হয় কোনো সদস্যই বৈঠকে প্রতিবাদ করে বলেননি তারা এই সিদ্ধান্ত মানেন না। অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। আমি শুধু ঘোষণা দিয়েছি। এখানে কারও প্রতি অবিচার করা হয়নি। তারপরও কারও অভিমান থাকতে পারে। আমার বিশ্বাস হকির বৃহত্তর স্বার্থে তারা এমন কিছু করবে না যাতে এ খেলার গতি নষ্ট হয়।

সর্বশেষ খবর