শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না’

আসিফ ইকবাল

‘আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না’

আরও একটি উইকেট। উত্ফুল্ল তাইজুল। বাঁ হাতি স্পিনারকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন মুমিনুল। পেছনে হাস্যোজ্জ্বল মুশফিক। দেখছেন বাকিরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলাফেরায় ধীরস্থির। তাড়াহুড়া নেই। কথা বলেন স্পষ্ট ভাষায়। উত্তরও দেন চিন্তাভাবনা করে। ৩৩ বছর বয়সী দীর্ঘদেহী মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দেখে মনে হয় কোনো কলেজের শিক্ষক। ধীরস্থির মাহমুদুল্লাহ মিরপুরে স্বস্তির জয়ের পর হঠাৎ করেই গুরুগম্ভীর হয়ে পড়েন। সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যের অভিমান ভর করেছিল তার দরাজ কণ্ঠে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৮ রানের মান বাঁচানো ও রেকর্ড গড়া জয়ে যেখানে উত্ফুল্ল থাকার কথা, হেসে লুটোপুটি খাওয়ার কথা, আনন্দে রঙের আবির মাখার কথা, সেখানে গুরুগম্ভীর হয়ে পড়েন মাহমুদুল্লাহ। মিডিয়া কর্মীদের প্রশ্ন শুনে কখনো স্মিত হাসি হেসেছেন, কখনো শীতল চোখে চেয়েছেন। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিয়েছেন। সব উত্তরই ছিল কাঁটা কম্পাসের মাপজোকে সাজানো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ বাঁচানো জয়ের পর ‘জয়’টি কতটা আনন্দের? প্রশ্নের উত্তরে অভিমানী মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘জয় সব সময়ই আনন্দের। দল হারলে আমরা কষ্ট পাই। তখন আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না।’ বড় অভিমানী টাইগার টেস্ট অধিনায়ক!

টেস্ট ক্যারিয়ার নয় বছরের। ধ্রুপদী ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ এর মধ্যে খেলেছেন ৪১টি টেস্ট। সেঞ্চুরি সাকল্যে ২টি। একটি ক্যারিয়ারের পাঁচ নম্বর টেস্টে। দ্বিতীয়টি রেকর্ড গড়া ২১৮ রানের জয়ে। সিলেটের অভিষেক টেস্টে হারের পর মিরপুরে সিরিজ বাঁচিয়েছে রেকর্ড জয়ে। টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দলের চরম বিপর্যয়ের মুখে হিমালয়সম দৃঢ়তায় খেলেন ১০১ রানের ইনিংস। প্রথমটির পর দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পেতে মাহমুদুল্লাহকে খেলতে হয়েছে আরও ৩৫টি টেস্ট। দুই সেঞ্চুরির মাঝে সময়ের হিসাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। অবশ্য এই লম্বা সময়ে তিনি সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েছেন ১৫ বার। লিখতে পারেননি তিন অঙ্কের জাদকুরী ইনিংস। ৩৫ টেস্টের বিরতির শেষে সেঞ্চুরির উদ্যাপনটা তাই রূপ নিয়েছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে। সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন না করিয়ে নিজের সেঞ্চুরিটি তুলে নেওয়ায় সমালোচনার তরবারিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছেন তিনি। এজন্যই হয়তো কাল অভিমান ঝরে পড়েছিল কণ্ঠে। গতকাল জয়ানন্দে না ভেসে টাইগার অধিনায়কের শীতল উত্তর, ‘যদি আপনি ম্যাচ জেতেন তাহলে অবশ্যই আপনার আনন্দ লাগা উচিত। ম্যাচ জিতলে ওইটুকু অধিকার থাকে, আনন্দ প্রকাশ করার। আমরা যখন খারাপ খেলি, ড্রেসিং রুমে মনটা আমাদেরই বেশি খারাপ হয়। আমাদের চোখের পানিটা কেউ দেখে না। আমরা এটা কাউকে বলিও না।’

ওয়ানডে সিরিজে বিধ্বস্ত করেছিল জিম্বাবুয়েকে। সিরিজটিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগাম প্রস্তুতি বলেছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু সিলেটের অভিষেক টেস্টে ব্যাট ও বলে কোনোভাবেই লড়াই করতে পারেনি। হারের লজ্জায় জানিয়েছিলেন, সিরিজে ফিরতে সেরাটা খেলতে হবে। রেকর্ড জয়ের পর সিরিজের সমতা আনে টাইগাররা। যদিও সিরিজ শুরুর আগে প্রকারান্তরে নিজেদের ফেবারিট বলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। গতকাল সিরিজ শেষে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক মাসাকাদজার সঙ্গে ট্রফি শেয়ারের বিষয়টিকে কষ্টকর উল্লেখ করে বলেন, ‘সবাই চেয়েছিল বাংলাদেশ জিতুক। লড়াই হয়েছে সমানে সমান। আমার মনে হয় এজন্য জিম্বাবুয়েকে কৃতিত্ব দিতে হবে। ওরা ভালো ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগে ভালো করেছে। প্রথম টেস্টে আমাদের “টেস্ট মেজাজে” ঘাটতি ছিল। এ বিষয়টা সিলেটে করতে পারিনি; যা মিরপুরে করেছি। প্রথম টেস্ট শেষে বলেছিলাম, জেতার বিষয়ে আমরা সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। সত্যি বলতে, প্রথম টেস্ট হেরে কষ্ট পেয়েছি আমরা।’

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ছয়টি। বছরের প্রথম টেস্টটি ড্র করেছিল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। পরের চার টেস্টে হার। ৬ নম্বর টেস্টে রেকর্ড গড়া জয়। এবার একসঙ্গে জ্বলেছেন ব্যাটসম্যানরা। তুলে নিয়েছেন তিনটি সেঞ্চুরি। মুশফিকুর রহিম ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুল হক ও মাহমুদুল্লাহ সেঞ্চুরি করেছেন। আট বছর নয় মাস পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত মাহমুদুল্লাহ, ‘শেষ পাঁচ টেস্টের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। কোনো ফিফটি নেই। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আমি সমস্যায় ছিলাম। চাইছিলাম নিজের জায়গাটাকে মূল্যায়ন করতে। কারণ অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে পারফর্ম করতে হয়। এ দায়বদ্ধতা আমার ছিল। দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে ভালো লাগছে। আমি চাই টেস্টে আরও ধারাবাহিক হতে।’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষ। এখন প্রস্তুতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের। প্রস্তুত টাইগাররা। নিজেকে মেলে ধরতে প্রস্তুত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৫২৭/৫, ২২৪/৬, জিম্বাবুয়ে : ৩০৪/১০, ২২৪/১০

সর্বশেষ খবর