বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইতিহাস গড়ে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

শেষ পর্যন্ত এলো কাঙ্ক্ষিত গোল। অভিষেকেই ফেডারেশন কাপে ফাইনালে উঠল বসুন্ধরা কিংস। জয়ের নায়ক তৌহিদুল আলম সবুজ উচ্ছ্বাসে যেন উড়তে চাইছেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ইনজুরি। তাই খেলেননি ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্কোস ভিনিসিয়াস ডি কস্টা। জাপানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে কিরগিজস্তান উড়ে গেছেন বখতিয়ার দুইশোভেকভ। দুই বিদেশি তারকা অনুপস্থিত। নিশ্চিত করেই শক্তি হারিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। দুই বিদেশি সতীর্থের অনুপস্থিতিতে দলের সব ভার নিজ কাঁধে তুলে নেন রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। গতকাল শীতের সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কলিনড্রেস খেললেন দুরন্ত ফুটবল। খেলিয়েছেন গোটা দলকে। সবশেষ অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড পরে বসুন্ধরা কিংসকে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে তুলে মাঠ ছেড়েছেন। ১১৮ মিনিটে তৌহিদুল আলম সবুজের গোলে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রকে ১-০ গোলে হারিয়ে অভিষেক আসরের অভিষেক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে সোনালি কালিতে ইতিহাসও লিখেছে বসুন্ধরা। শুক্রবার চ্যাম্পিয়ন হতে তারা বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে ফাইনালে মুখোমুখি হবে ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল আবাহনীর। ধানমন্ডি পাড়ার দলটি ফাইনালে খেলবে হ্যাটট্রিক শিরোপার হাতছানিতে। সেমিফাইনালে ফেডারেশন কাপের ১০ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী সানডে চিজোবার হ্যাটট্রিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে। ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে বসুন্ধরা কিংসই একমাত্র দল যারা অভিষেক আসরে ফেডারেশন কাপে ফাইনাল খেলছে। চ্যাম্পিয়ন হলে হবে আরেক নতুন ইতিহাস। মার্কোস ও বখতিয়ার নেই। মার্কোস স্ট্রাইকার, বখতিয়ার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। দুই বিদেশি না থাকায় বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রজোন ফরমেশনে পরিবর্তন আনেন। বিশ্বকাপ তারকা কলিনড্রেসকে খেলান সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে। স্পেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলের জর্জ গোটরকে খেলান সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে। যাতে চার বিদেশি নিয়ে গড়া শেখ রাসেলের আক্রমণগুলো ভেস্তে দিতে পারেন। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার গোটর দুর্দান্ত ফুটবল খেলে রাফায়েল ওডোইন, আজিজভ আলিশার ও অ্যালেক্স রাফায়েলদের ত্রিমুখী আক্রমণগুলোকে ধারালো হওয়ার আগেই শেষ করে দিয়েছেন। কোচের নতুন ফরমেশনে মানিয়ে নিতে শুরুতে একটু কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত পেছন থেকে খেলে সারা মাঠ দৌড়ে খেলেছেন কলিনড্রেস। কখনো রাইট উইং, কখনো আবার লেফট উইং দিয়ে আক্রমণগুলো শানিয়ে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন শেখ রাসেলের রক্ষণভাগ। বসুন্ধরা কাল গোছানো ফুটবল খেলে জমিয়ে তোলে ম্যাচ। গোল উৎসব হয়েছে আবাহনী-শেখ জামালের প্রথম সেমিফাইনালে। গতকাল ৫/৬টি গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হলেও গোল হয়েছে একটি। তারপরও শীতের সন্ধ্যায় আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে সাজানো গতিশীল একটি ম্যাচ উপভোগ করেছেন হাজার দশেক ফুটবলপ্রেমী। আক্রমণে ঠাসা প্রথমার্ধে দুই দলই গোল মিস করেছে একাধিক। ৭ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় ২০১২ সালের ট্রেবলজয়ী শেখ রাসেল। উজবেকিস্তানের স্ট্রাইকার আজিজভ আলিশেরের ডান পায়ের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন বসুন্ধরার গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। দুই মিনিট পর প্রথমার্ধের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মাহবুবুর রহমান। ৯ মিনিটে কলিনড্রেসের বাড়ানো বল ধরে ডি বক্সে ফাঁকায় দাঁড়িয়েও রাসেলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে বোকা বানাতে পারেননি মাহাবুব। বল ফিরে আসলে মাসুক মিয়া জনি ফিরতি শট নেন। কিন্তু গোললাইন থেকে বলটি ফেরান রাসেলের নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার এলিসন উডোকা। ২৩ মিনিটে বসুন্ধরাকে গোল বঞ্চিত করেন রানা। এরপর আর কোনো গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি দুই দল। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য। গোলের জন্য দ্বিতীয়ার্ধে দুই দল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। তবে দুই দলই নিজেদের রক্ষণব্যূহকে আঁটোসাঁটো করে রাখে। ৫৯ মিনিটে বিশ্বকাপ খেলা কলিনড্রেসের ঝলক দেখেন ফুটবলপ্রেমীরা। ডি বক্সের মাথা থেকে কলিনড্রেসের শট অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে যায়। হতাশা বাড়ে বসুন্ধরার সমর্থকদের। ৬৬ মিনিটে শেখ রাসেলের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার অ্যালেক্স রাফায়েলকে হতাশ করে বসুন্ধরার গোলরক্ষখ জিকো। ৮৪ মিনিটে দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয় বসুন্ধরার। ডি বক্সেও মাথা থেকে গোটরের শট রানাকে পরাস্ত করলেও ক্রসবারকে হারাতে পারেনি। বল ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। তখন মনে হচ্ছিল ফুটবলভাগ্য বোধহয় বঞ্চিত করবে বসুন্ধরাকে।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য। ফেডারেশন কাপের চলতি আসরে এই প্রথম অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে খেলা গড়ায়। ১০৯ মিনিটে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় বসুন্ধরা। বাঁ প্রান্ত থেকে মতিন মিয়ার বাঁকানো ক্রস ছোট বক্সে পড়লেও পা ছোঁয়াতে পারেননি সবুজ। ম্যাচ যখন টাইব্রেকারের দিকে গড়ানোর পথ, তখনই ইতিহাস লেখা গোল করেন সবুজ। ১১৮ মিনিটে প্রায় ৩০ মিটার দূর থেকে ডান পায়ে তীব্র ভলি নেন কলিনড্রেস। শটটি বোকা বানায় আশরাফুল রানাকে। কিন্তু সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। তখন ছোট বক্সে দাঁড়ানো সবুজ হেডে জালে ফেলে উৎসবে মাতান বসুন্ধরা কিংসকে (১-০)। ওই গোলের দুই মিনিট পর খেলার শেষ বাঁশি বাজান রেফারি।

সর্বশেষ খবর