শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাদমানের আলো ছড়ানো ব্যাটিং

মেজবাহ্-উল-হক

সাদমানের আলো ছড়ানো ব্যাটিং

তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে দলের পুরো দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অভিষেকেই ৭৬ রানের আলো ঝলমলে ইনিংস খেলেন সাদমান ইসলাম —রোহেত রাজীব

প্রথমবারের মতো একাদশে পেসার না নিয়ে সকালেই চমক দেখিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ শুরুর পর রীতিমতো ক্যারিশমা দেখাতে থাকে মিরপুরের উইকেট। প্রথম দিনই লম্বা লম্বা টার্ন! সেই সঙ্গে আন-ইভেন বাউন্স! চিরায়ত বৈচিত্র্য নিয়ে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনই হাজির শেরেবাংলার রহস্যময় উইকেট।

তারকা ব্যাটসম্যানরা বাইশ গজে সেট হওয়ার পরও লম্বা ইনিংস খেলতে পারলেন না। মুশফিকুর রহিম ১৪, মুমিনুল হক ২৯, মোহাম্মদ মিথুন ২৯ এবং সৌম্য সরকার ১৯। শুরুতে আউট হলে কথা নেই, কিন্তু উইকেটে সেট হওয়ার পর ইনিংস বড় করতে না পারাটা তারকা ব্যাটসম্যানদের জন্য এক ধরনের ‘অপরাধ’!

কাল অবশ্য তারকা ব্যাটসম্যানদের মতো স্রোতে গা ভাসিয়ে দেননি অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম। বাইশ গজে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় অতিবাহিত করে মোকাবিলা করেছেন ১৯৯ বল। খেলেছেন ৭৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।

তবে এই তরুণ ওপেনার যেভাবে ক্যারিবীয় বোলারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তাতে সেঞ্চুরিটা তার প্রাপ্যই ছিল। সেঞ্চুরিটা হয়ে গেলে সংক্ষিপ্ত এক তালিকায় জায়গা করে নিতে পারতেন। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছেন বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আবুল হাসান রাজু। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড খুব বেশি নেই। এ পর্যন্ত মাত্র ১০৭ জন ব্যাটসম্যান এই গৌরব অর্জন করেছিলেন।

আমিনুল ইসলাম তার এবং বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে খেলেছেন ১৪৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস, মোহাম্মদ আশরাফুল অভিষেকে ১১৪ রান করে তো এখনো কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ডটির মালিক হয়ে আছেন। আর আবুল হাসান বোলার হয়ে ১০ নম্বরে নেমে খেলেছিলেন ১১৩ রানের ইনিংস। সেটা এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।

সাদমানের সামনেও এসেছিল সুযোগ। কিন্তু পারেননি। অবশ্য সেঞ্চুরি না হওয়ায় হতাশও নন ২৩ বছর বয়সী এই ওপেনার। তবে খানিকটা অতৃপ্তি তো থাকবেই। ম্যাচ শেষে সাদমানের ভাষ্য, ‘এমন কোনো হতাশা নেই ....একটু তো  সবারই...অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি চাওয়া তো সবারই থাকে। ওরকম কোনো হতাশা নেই। চেষ্টা করেছি, দলের জন্য যতটুকু দেওয়ার দরকার ছিল আমি সেরকম ব্যাটিং করেছি। হয়তো পুরোটা দিতে পারিনি। আমার মনে হয় আরেকটু দিতে পারতাম দলকে।’ সাদমানের সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কেননা বাংলাদেশের আরেকটি ইনিংস আছে। তবে সেঞ্চুরি না হলেও এই ইনিংসের জন্য প্রশংসা পেতে পারেন নবাগত এই ওপেনার। যেখানে অভিজ্ঞরা দ্রুত বিদায় নিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন, সেখানে তিনি বাইশ গজে পড়ে থেকে ক্যারিবীয় বোলারদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। সাদমান ভালো খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে। বিসিবি একাদশের হয়ে চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে তিনি সাড়ে তিন ঘণ্টা উইকেটে থেকে খেলেছিলেন ৭৩ রানের ইনিংস। গতকাল সেই ইনিংসটাই জাতীয় দলের জার্সিতে অনুবাদ করে দিলেন। কেবল তিনটি রান বেশি করেছেন। সাদমান জানালেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচের অভিজ্ঞতা কাজে দিয়েছে। ওদের বোলার সম্পর্কে জানা ছিল। আমি যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলাম শেষ ম্যাচে (প্রস্তুতি ম্যাচে), ওই পরিকল্পনা এখানে কাজে লেগেছে।’

ঘরোয়া লিগে বড় বড় ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সাদমানের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭ সেঞ্চুরি ও ১৬ হাফ সেঞ্চুরি। লিস্ট এ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরির সঙ্গে ১০ হাফ সেঞ্চুরি। ঘরোয়া লিগের অভিজ্ঞতাই নাকি সাদমানের কাজে লেগেছে, ‘আমি যে রকম ব্যাটিং করি আমি চিন্তা করেছি যে, বল আসবে...আমি যেভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি ঠিক সেভাবে এখানে খেলতে। আর কিছু আমি চিন্তা করিনি।’

অভিষেক হওয়ার পর প্রথম দিন মিডিয়ার সামনে আসতে হয়েছে সাদমানকে। কারণ দিনের সেরা পারফর্মার যে তিনিই। এই ওপেনারকে খানিকটা নার্ভাস দেখালেও কথা বললেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের মতোই। অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে। সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। ডেব্যু টেস্ট। আমি চেষ্টা করেছি আমার দলের জন্য সেরাটা দেওয়ার। হয়তো আমি ফুলফিল করতে পারিনি। যতটুকু হয়েছে....আশা করি পরবর্তীতে টিমের জন্য যেন কিছু করতে পারি।’

ওপেনিংয়ে নেমে সাদমান রান পাওয়ায় যেন খানিকটা দুশ্চিন্তামুক্ত টিম ম্যানেজমেন্ট। কেননা তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস মিলে ওয়ানডেতে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখালেও টেস্টে তারা ব্যর্থ। এমনকি সৌম্য সরকারও সুবিধা করতে পারছেন না। তাই সাদমানের রান পাওয়াটা অনেক স্বস্তির।

সর্বশেষ খবর