মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাওয়া যত টুর্নামেন্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হারিয়ে যাওয়া যত টুর্নামেন্ট

প্রথম সুপার কাপে মোহামেডান-আবাহনীর ফাইনাল ম্যাচ

ফুটবলে কম টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ায়নি। অথচ কোনোটাই নিয়মিত নয়। আবার অনেক টুর্নামেন্টের বিলুপ্তও ঘটেছে। মোটামুটিভাবে লিগ ও ফেডারেশন কাপটাই  নিয়মিত হচ্ছে। তবুও কম গ্যাপ যায়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। ১৯৭২ সাল থেকেই লিগের যাত্রা। ৪৬ বছরে তো আর ৪৬টি লিগ হয়নি। তবে পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর তা নিয়মিত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ফেডারেশন কাপ শুরু হয় ১৯৮০ সালে। হিসেবে ৩৮টি আসর হওয়ার কথা। সেখানে হয়েছে ৩১টি। যাক নানা জটিলতার কারণে সাত আসর মাঠে গড়ানোটা বড় কোনো ব্যর্থতা নয়।

লিগ ও ফেডারেশন কাপ ছাড়া অন্যসবের হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম টুর্নামেন্ট কোনটি তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যে টুর্নামেন্টটি চলছে এই স্বাধীনতা কাপ দিয়েই ঘরোয়া ফুটবলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভিষেক হয়। প্রথম স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসেই স্বাধীনতা কাপ শুরু এবং শেষ হয়। কথা ছিল স্বাধীনতা কাপ প্রতিবছরই হবে। অথচ ৪৬ বছরে ১০টি আসরও মাঠে গড়ায়নি। ১৯৭২ সালের পর ১৯৭৫ সালে দ্বিতীয় স্বাধীনতা কাপ অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় দেড় যুগ পর ১৯৯২ সালে তৃতীয় আসরটি মাঠে গড়ায়। সেই থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়ে টুর্নামেন্টটি।

যাক বাফুফে কথা দিয়েছে স্বাধীনতা কাপ এখন নিয়মিতভাবেই হবে। দেখা যাক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে কিনা। কেননা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাটা ফেডারেশনের কাছে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৭ সালে লিগের পর চ্যাম্পিয়ন ও  রানার্স আপ দলকে নিয়ে লিবারেশন কাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। ফাইনালে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সামনে থেকে এই লিবারেশন কাপই বিজয় দিবস টুর্নামেন্ট নামে মাঠে নামবে। কই পরবর্তীতে কখনো কি বিজয় দিবস টুর্নামেন্টের দেখা মিলেছে?

১৯৭৩ সাল থেকেই মাঠে গড়িয়েছিল জাতীয় প্রতিযোগিতা শেরেবাংলা ও যুব জাতীয় প্রতিযোগিতা সোহ্রাওয়ার্দী কাপ। নিয়মিতভাবেই  দুটো টুর্নামেন্ট চলছিল। দেশ জুড়ে ব্যাপক সাড়াও পড়েছিল। কত নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলেছিল সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। এই সাড়া জাগানো দুই টুর্নামেন্ট অনিয়মের মধ্যে বন্দী হয়ে হারিয়েও গেছে। দেশে ফুটবলার সৃষ্টির যে ভয়াবহ সংকটটা চলছে। তার পেছনে জাতীয় ও যুব প্রতিযোগিতার বিলুপ্তিকে বড় কারণ মনে করছেন আসলাম, কায়সার, সাব্বিরদের মতো দেশ কাঁপানো ফুটবলাররা। অথচ ফেডারেশনে প্রকৃত ফুটবলাররা বড় দায়িত্ব থেকেও তা উপলব্ধি করছেন না। জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট আগাখান গোল্ডকাপ ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭ ও ১৯৮২ সালে মাঠে গড়ানোর পর তাও বিলুপ্ত। অবশ্য এনিয়ে বাফুফেকে দায়ী করাটাও ঠিক হবে না। কেননা স্পন্সররা এই টুর্নামেন্ট করতে আগ্রহী নয়। বাফুফের নিজস্ব প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল প্রেসিডেন্ট কাপ। যার যাত্রা ১৯৮১ সাল থেকেই। প্রেসিডেন্ট কাপ দিয়েই বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক  টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। পাঁচবার আয়োজন করেই এ টুর্নামেন্টের বিলুপ্তি ঘটে। ঘরোয়া ফুটবলে আরেক জনপ্রিয় আসর ডামফা কাপেরও দেখা নেই।

১৯৯৬ সালে থেকে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের যাত্রা হয়। জাতির জনকের নামে টুর্নামেন্ট। অথচ এটাও নিয়মিত নয়। ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৮। ২২ বছরের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ মাঠে গড়িয়েছে মাত্র পাঁচবার। ১৯৯১ সালে বাফুফে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছিল। বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ক্লাব টুর্নামেন্ট। ভারতের দুই বিখ্যাত ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান অংশ নেওয়ায় শুরুতেই টুর্নামেন্ট সাড়া ফেলে দেয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল প্রতিবছরই এই টুর্নামেন্ট হবে। অথচ এরপর আর দেখায় মেলেনি।

ঘরোয়া ফুটবলে যখন জনপ্রিয়তার ধস শুরু, তখন সুপার  কাপই ঘুমন্ত ফুটবলকে জাগিয়ে তোলে। কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর একমাত্র চমক দেখিয়েছিলেন ২০০৯ সালে কোটি টাকার সুপার কাপের আয়োজন করে। মূলত তারই উদ্যোগে এই টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ায়। চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ১ কোটি টাকা ছিল বলেই টুর্নামেন্টের নাম হয়ে যায় কোটি টাকার সুপার কাপ। মোহামেডান আবাহনী চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল প্রথম আসরে ফাইনালে মুখোমুখি হয়। অনেক দিন পর দর্শকে পুরো গ্যালারি ভরে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল ফুটবল তার হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছে।

সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন সুপার কাপ প্রতি বছরই হবে। চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি বাড়ানো হবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে বিদেশি দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেই সুপার কাপই কিনা তিনবার করে বিলুপ্তি। ১৯৯০ সালে মা-মণি গোল্ডকাপের আয়োজন হয়। সেটাও একবার করে শেষ। স্কুল টুর্নামেন্ট ও জুনিয়র লিগও নিয়মিত হয় না। বলা যায় অনিয়মই বাফুফের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

কেন এই হাল? এ ব্যাপারে বাফুফে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটাই উত্তর সময় ও ফান্ডের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্ব্বেও টুর্নামেন্ট চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কথা হচ্ছে কর্মকর্তারা ফুটবল নিয়ে কি এমন ব্যস্ত থাকেন যে সময় বের করা সম্ভব নয়। আর ফান্ড, হাত বাড়ালেইতো স্পন্সর পাচ্ছে। অনুদানও কম আসে না। তাহলে এই অর্থ যায় কোথায়? দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা হয়ে বাফুফের দায়িত্ব কী এতটুকুই নিয়মিত পেশাদার লিগ আর ফেডারেশন কাপ আয়োজন করা?

 

সর্বশেষ খবর