রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জয়ে বছর শেষ করতে চান মাশরাফি

আসিফ ইকবাল

জয়ে বছর শেষ করতে চান মাশরাফি

ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে টেস্ট সিরিজে জয়োৎসবে মেতেছিলেন সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম ও তাইজুল। লাটিমের মতো বল ঘুরিয়ে স্পিনার চতুষ্টয় নাভিশ্বাস তুলেছিলেন পাওয়েল, হেটমায়ার, শাই হোপদের। বিষধর গোখরা সাপের ফণা তুলে সুর ও ছন্দের তালে তালে ক্যারিবীয়দের ছোবল মেরে স্পিন বিষে নীল করেছিলেন সাকিব গং। স্পিন ছোবলে এতটাই আড়ষ্ট হয়ে পড়েছিল সফরকারীরা, লড়াইয়ে পেরে না উঠে টেস্ট সিরিজে ঢাকা পড়েছিল হোয়াইটওয়াশের লজ্জার চাদরে। হেসে খেলে টেস্ট দুটি জিতে বছর শেষ করে বাংলাদেশ। টেস্টে সাফল্যের পথে হাঁটা টাইগাররা এবারও সাফল্য চাইছেন ওয়ানডে সিরিজে। প্রতিপক্ষ পরিচিত দুই দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ শুরু তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজটি আবার বছরের শেষ। গোটা বছর দুর্দান্ত খেলতে থাকা মাশরাফি বাহিনী চাইছেন সাফল্যের পতাকা আকাশপানে ভাসিয়ে নতুন বছর বরণ করতে।

সেই ১৯৮৬ থেকে রঙিন পোশাকে পথচলা শুরু। ৩২ বছরের পথ চলার সেরা সময় পার করছে গত তিন বছরে। ২০১৫ সাল থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলছে। ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে হারাচ্ছে অবলীলায়। দারুণ খেলতে থাকা টাইগাররা এখন ক্রিকেট পরাশক্তি। বিশ্বকাপ থেকে ধারাবাহিক ভালো খেলা মাশরাফি বাহিনী স্বর্ণ সময় পার করছে চলতি বছর। মাশরাফিদের বছর শুরু জয়ে। বছর শেষেও হাতছানি জয়ের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজটি জিতে নতুন বছরে পা রাখতে চাইছেন টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি,‘এ বছর জয়ের সংখ্যাটা অনেক। যদিও দুটি ফাইনালে হেরেছি। তবে এশিয়া কাপের ফাইনাল যদি জিততে পারতাম, সেটা অবশ্যই অনেক ভালো হতো। চলতি বছরের পারফরম্যান্সের বিচারে আমি বলব আমরা ভালো খেলেছি। সেটা আরও ভালো হবে, যদি আমরা বছরটি জয় দিয়েই শেষ করতে পারি।’ এ বছর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৭ ওয়ানডে খেলে সাফল্যের হাসি হেসেছে ১১টিতে। হেরেছে ৬টিতে। যার একটি জানুয়ারিতে তিন জাতির ফাইনালে এবং আরেকটি সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালে। এছাড়া ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-১ এবং ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি বছরে এটা তৃতীয় সিরিজ।

সফরকারী ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের টেস্ট সিরিজে টাইগাররা বিধ্বস্ত করে স্পিন অস্ত্রে। চার স্পিনারের বিপক্ষে যুদ্ধে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা নাকাল হয়েছেন প্রতিটি সেসনে। টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি অবশ্য স্পিন পথে হাঁটতে চাইছেন না। সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন তিনি খেলবেন তিন পেসার নিয়ে। যদিও ওপেনারদের নিয়ে মধুর এক সংকটের কথা স্বীকার করেছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘ওয়ানডেতে ৪০ ওভার পর্যন্ত পাওয়ার প্লে থাকায় স্পিনাররা সমস্যায় থাকেন। ফাস্ট বোলাররা যে কোনো জায়গায় ব্লক করে বোলিং করতে পারেন। টেস্টে আমাদের স্পিনাররা ভালো বোলিং করলেও আমি তিন পেসার নিয়ে খেলার কথা ভাবছি। আর আমাদের চার ওপেনার রয়েছেন দারুণ ফর্মে। টিম কম্বিনেশনের জন্য যে কাউকে বসে থাকতে হতে পারে।’

ইনজুরি কাটিয়ে তামিম ফিরেছেন চলতি সিরিজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে ফিরেছেন সাকিব। দুই দেশ সেরা ক্রিকেটার নিয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নামছেন মাশরাফি। দুই তারকার উপস্থিতিতে দলের শক্তি বাড়বেই বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘তামিম ও সাকিব ফেরায় দলের শক্তি বেড়েছে কোনো সন্দেহ নেই। দলের আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে সবার।’ দুই তারকার উপস্থিতিতে দলের শক্তি বাড়লেও আজ জিততে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই ভালো করতে হবে মনে করেন মাশরাফি, ‘যদি সবগুলো বিভাগে ভালো করি, তাহলে আমাদের ভালো করার সুযোগ থাকবে। তবে উইকেটকে বিচার করে খেলতে হবে। কারণ মিরপুরের উইকেট সবসময় রহস্যময়। সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ মিরপুরে। তাই এখানে ভালো করাটা জরুরি।’

টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করেছে। দুরন্ত ফর্মে থাকা টাইগারদের সামনে ওয়ানডে সিরিজে লড়াই করার সম্ভাবনা কম সফরকারীদের। কিন্তু টাইগার অধিনায়ক তেমনটি ভাবছেন না। মাশরাফির মতে, লড়াই হবে সমানে সমান, ‘যত ছোট সংস্করণ, তত ভয়ঙ্কর দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের বিপক্ষে সাফল্য পেতে সব বিভাগেই ভালো করতে হবে। হোয়াইটওয়াশের কথা না ভেবে আমাদের ভাবনায় এখন প্রথম ওয়ানডে। আমরা এখন ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবছি।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৩১ ওয়ানডে খেলে জয় ৯ টিতে। যার সবগুলোই এসেছে ২০০৯ সালের পর। গত ৯ বছরে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে দুবার। এবার সংখ্যাটা তৃতীয়  হবে, সেই আশায় ক্রিকেট পাগল বাঙালি। নিজের ২০০ নম্বর ওয়ানডেটি উৎসবের রঙে রাঙাতে পারবেন কি মাশরাফি?

সর্বশেষ খবর