বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেলের স্বপ্নের ফাইনাল

ইতিহাস না পুনরুদ্ধার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেলের স্বপ্নের ফাইনাল

স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে বসুন্ধরা কিংসের ইমন বাবু ও শেখ রাসেলের আশরাফুল ইসলাম রানা। পাশে দুই কোচ অস্কার (বায়ে) ও টিটু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চ্যালেঞ্জ অভিন্ন। এক দলের ইতিহাস গড়ার হাতছানি। আরেক দলের হারানো গৌরব উদ্ধার। স্বাধীনতা কাপ ফুটবল ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র আজ সেই লক্ষ্যে মাঠে নামছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৪টায় হাইভোল্টেজ ম্যাচটি শুরু হবে।

বসুন্ধরা কিংস সেমিফাইনালে ঢাকা আবাহনীকে। অন্যদিকে গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে শেখ রাসেল। ফাইনালের আগে চলতি মৌসুমে দুই দল দুবার মুখোমুখি হয়েছে। ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংস জয় পেয়েছিল শেখ রাসেলের বিপক্ষে। স্বাধীনতা কাপের গ্র“প পর্বের ম্যাচটি ড্র হয়।

ঘরোয়া ফুটবলে অনেক ফাইনাল হয়েছে। আজকের ম্যাচটি ব্যতিক্রমী বলা যায়। যা আগে কখনো ঘটেনি। বসুন্ধরা কিংস বসুন্ধরা গ্র“পের নিজস্ব ক্লাব। আর শেখ রাসেল পরিচালিত হচ্ছে বসুন্ধরা গ্র“পের পৃষ্ঠপোষকতায়।

দুই জার্সিতে থাকবে বসুন্ধরা গ্র“পের লোগো। এক প্রতিষ্ঠানের লোগো লাগিয়ে এর আগে দুই দল ফাইনালে খেলেনি। দুই ক্লাবের অবস্থান একই এলাকায়। এতটা কাছে যে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এপার-ওপার। সুতরাং শিরোপা যারাই জিতুক না কেন ট্রফিটা থাকবে বসুন্ধরাতেই। স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি দুদল।

যোগ্য দুদল মুখোমুখি হচ্ছে। বিজয়ের মাসে স্বাধীনতা কাপে জিতবে কে? বসুন্ধরা কিংস না শেখ রাসেল? পেশাদার লিগে নতুন দল হিসেবে মাঠে নেমেই বসুন্ধরা কিংস মৌসুমের প্রথম আসর ফেডারেশন কাপে ফাইনাল খেলেছে। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও রানার্সআপ হয়ে ইতিহাস গড়েছে। এর আগে কোনো দলই অভিষেকে কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলতে পারেনি। টানা দুই টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলে নতুন ইতিহাস গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। আজ চ্যাম্পিয়ন হলেই আরেক ইতিহাস লিখে ফেলবে কিংস। প্রথম দল হিসেবে শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়বে তারা। ফেডারেশন কাপে পারেনি। স্বাধীনতা কাপ জিতে স্বপ্নের শিরোপার খাতায় নাম লেখাতে পারবে কি বসুন্ধরা কিংস? ফুটবলে অনেক দলের আÍপ্রকাশ ঘটলেও বসুন্ধরা কিংসের মতো কেউ আলোচনায় আসেনি। নিজ দলের সাফল্যতো আছেই। শুরুতেই তারা নতুন ফুটবলারের সন্ধানে নেমেছে। কিশোর ফুটবলারদের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্প চালাচ্ছে। তা ক্রীড়াঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্যালারি প্রায় ফাঁকা থাকলেও বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচের দিন ভিন্ন দৃশ্য দেখা যায়। নতুন দল অথচ আলাদাভাবে সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে। ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হাজার হাজার সমর্থক কিংসের খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। স্বল্প দিনেই ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। অভিষেক আসরে শিরোপা জিতলে অন্য উচ্চতায় চলে যাবে দলটি।

স্বপ্নের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস ও শেখ রাসেল মুখোমুখি। কার ঘরে যাবে ট্রফি! বিশ্বকাপ খেলা ড্যানিয়েল কলিনড্রেসসহ অন্য বিদেশি ও স্থানীয়দের নিয়ে সেরা দল গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। প্রতিপক্ষের দুর্গ ভাঙতে কলিনড্রেস ও মার্কোসই যথেষ্ট। ফেডারেশন কাপে দ্রুত হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েছেন কোস্টারিকান কলিনড্রেস। মতিন মিঞা, সুফিলও গতিময় খেলা খেলছেন। সত্যি বলতে কি আক্রমণভাগ ও মধ্যমাঠে পুরোপুরি সচল বসুন্ধরা কিংস। যত ভয় রক্ষণভাগ নিয়ে। সত্যি বলতে এখন পর্যন্ত দলের রক্ষণভাগ গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তা না হলে ফেডারেশন কাপে নফেলের সঙ্গে ড্র, স্বাধীনতা কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্বল রহমতগঞ্জের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতবে কেন?

গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। আবাহনীকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপ ফাইনালের প্রতিশোধ নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। নায়ক নিঃসন্দেহে জিকো। টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষের দুই শট ঠেকিয়েছেন। আবার তারই গোলে স্বাধীনতা কাপ ফাইনাল নিশ্চিত হয় বসুন্ধরার। শিরোপা জিততে হলে আজকের ম্যাচে পুরো পজিশনেই জ্বলে উঠতে হবে। বিশেষ করে ডিফেন্ডারদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগ বেশ শক্ত।

গত দুই মৌসুম শিরোপাশূন্য শেখ রাসেল। আজ ম্যাচ জিততে পারলে সেই শূন্যতা কেটে যাবে। সত্যি বলতে কি শিরোপা জয়ের সামর্থ্য শেখ রাসেলের রয়েছে। শুরুতে অ্যালেক্স রাফায়েল, রাফায়েল উদোভিন প্রতিপক্ষের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালেও আলিশার আজিজভ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। আক্রমণভাগে তিনি এখন প্রতিপক্ষের ত্রাস। সেমিফাইনালে তারই জোড়া গোলে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারিয়েছে শেখ রাসেল। বসুন্ধরা কিংসের রক্ষণভাগ ভেঙে যদি দুই রাফায়েল ও আজিজভ জ্বলে উঠতে পারেন তাহলে শেখ রাসেলের অনুকূলেই ম্যাচ  জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে স্বাধীনতা কাপে শেখ রাসেল তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে। ২০১১ সালে রানার্সআপ ও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। পাঁচ বছর পর ট্রফি উদ্ধারের সম্ভাবনা জেগেছে তাদের। পারবে কি শেখ রাসেল শিরোপার শূন্যতা কাটাতে? এক দলের ইতিহাস আরেক দলের হারানো গৌরব উদ্ধার। কে হাসবে বিজয়ের হাসি। কিংস না রাসেল।

সর্বশেষ খবর