বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবাহনীকে নিয়ে ছেলেখেলা বসুন্ধরা কিংসের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবাহনীকে নিয়ে ছেলেখেলা বসুন্ধরা কিংসের

গোল উৎসবে মেতেছেন বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ৩-০ গোলে ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে নবাগত দলটি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা ছাড়ার আগে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ঘরের মাঠে ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে উৎসবে মাতবে। বিশেষ করে  বিশ্বকাপের তারকা কোস্টারিকার কলিনড্রেস ফেডারেশন কাপের  ফাইনালের হারাটা ভুলতে পারছিলেন না। তার গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও আবাহনী কিনা জিতে গেল ৩-০ গোলে। স্বাধীনতা কাপ সেমিফাইনালে আবাহনীকে হারালেও ৩ গোলে ট্র্যাজিক হারের বেদনাটা ভুলতে পারছিলেন না এই কোস্টারিকান।

কলিনড্রেসের সেই কষ্টটা হয়তো দূর হয়েছে। গতকাল নীলফামারীতে হোম ভেন্যুতে পেশাদার লিগে বসুন্ধরা কিংস ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন  ঢাকা আবাহনীকে। এই জয়ের নায়ক কলিনড্রেসই। নিজে এক গোল করেছেন, পুরো দলকে খেলিয়েছেন। যে প্রতিজ্ঞা করে খেলোয়াড়রা নীলফামারীতে  যান তা সফলও হয়েছে। শেখ কামাল স্টেডিয়ামের দর্শকরা কিংসের ছন্দময় খেলা দেখে  মুগ্ধ। লিগের আগে গতবছর নীলফামারীতে মালদ্বীপ নিউ রেডিয়্যান্টের বিপক্ষে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে কিংস। ওই ম্যাচে ৫-১ গোলে জয় পেয়েছিল কিংস। গতকাল আবার ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচেই কিনা উড়িয়ে দিল অল সিজন ফেবারিটদের।

নবাগত দল হলেও শিরোপা জিততে সবচেয়ে শক্তিশালী দল গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। সেক্ষেত্রে আবাহনীর বিপক্ষে জয়টা স্বাভাবিকই বলা যায়। কিন্তু ব্যবধান যখন ৩-০ তখন তা অবশ্যই অবিস্মরণীয় বিজয়। পেশাদার লিগে সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ড থাকলেও ১০ বছরে আবাহনী একেবারে কম ম্যাচ হারেনি। তবে এমনভাবে বিধ্বস্ত হয়নি কখনো। বসুন্ধরা কিংসই ৩-০ গোলে হারাল আবাহনীকে।

ঘরোয়া ফুটবলে পরিসংখ্যান বলে ২০ বছর পর আবাহনী এত বড় ব্যবধানে হারল। ১৯৯৯ সালে প্রিমিয়ার লিগে তারা ৩-০ গোলে হেরেছিল ঢাকা মোহামেডানের কাছে। সেই লজ্জার পুনরাবৃত্তি ঘটল শেখ কামাল  স্টেডিয়ামে। প্রথম ম্যাচে শেখ জামালকে ও গতকাল ঢাকা আবাহনীকে হারাল বসুন্ধরা কিংস । মাত্র যাত্রা হয়েছে লিগের। শিরোপার সম্ভাবনা নিয়ে এখনই আলোচনার করার সময় আসেনি। তবে শুরুতেই দুই ফেভারিটদের হারিয়ে সামনের লড়াইয়ের জন্য আত্মবিশ্বাসটা দারুণভাবে বাড়িয়ে নিল কিংস। বসুন্ধরা কিংস আবাহনীর স্বপ্নের ম্যাচকে ঘিরে নীলফামারী যেন ফুটবল নগরীতে পরিণত হয়েছিল। এই প্রথম তারা ঘরোয়া ফুটবলে সেরা আসরের খেলা দেখেন। নতুন এক ইতিহাস লিখে ফেলেন নীলফামারী। ঢাকার গ্যালারি ফাঁকা থাকলেও নীলফামারীতে দর্শকের ঢল নেমেছিল। দেশের সেরা দুদল বলে প্রত্যাশা ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। মনোমুগ্ধকর এক ম্যাচ উপভোগ করবে নীলফামারীবাসী। ম্যাজিক বা উপভোগ যা বলি না কেন সবই দেখেছে দর্শকরা। তবে তা ছিল শুধু কিংসকে ঘিরেই। ম্যাচটা এতটা এক তরফা হবে তা কেউ ভাবেনি। অথচ প্রথমে গোল করার সুযোগ পেয়েছিল আবাহনীই।

প্রথমার্ধের খেলা যখন শেষের দিকে। তখনই পেনাল্টি পায় আবাহনী। সানডে গোল করতে ব্যর্থ হয়। ব্যস এরপর থেকেই ম্যাচ শুধুই কিংসের। সবাই যখন  গোলহীন হাফ টাইমের অপেক্ষায় তখুনি পুরো গ্যালারি কেঁপে উঠল উল্লাসে। নাসিরের চমৎকার গোলে প্রথমার্ধ শেষ হয়।

আবাহনীর রেকর্ড রয়েছে পিছিয়ে গেলে গতিময় ফুটবল খেলার। অথচ গতকাল সেই আবাহনীর দেখা মেলেনি। বরং স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রজোনের নির্দেশনায় বসুন্ধরা কিংস আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছিল মতিন মিয়ারা কোনো দ্বিতীয় শ্রেণির দলের সঙ্গে লড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মাঠে এমন অসহায়ত্বের চেহারা দেখা যায়নি। আবাহনী সমতায়  ফিরবে সেই ধরনের পরিকল্পিত আক্রমণও দেখা যায়নি তাদের।

এবার বিদেশি নয় গোল আসে দেশি ফুটবলারের মাধ্যমে। সেই মতিন মিয়া যাকে ঘিরে কম আলোচনা হচ্ছে না। ভারতে খেলারও অফার পেয়েছিলেন কিন্তু যাননি। ৬০ মিনিটে ব্রাজিলের মার্কোস ভিনিয়াসের কাছ থেকে বল পেয়ে মতিন মিয়া প্রতিপক্ষের জাল স্পর্শ করেন। এই গোলই অনেকটা বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায় কিংসের। কিন্তু কোনো সুযোগ না পায় সেদিকে কলিনড্রেসরা ছিলেন সতর্ক। ৬৯ মিনিটে কলিনড্রেস তৃতীয় গোল করে হতাশা ভাসায় আবাহনীকে।

এমন জয়ে শিষ্যদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট কোচ অস্কার। সভাপতি ইমরুল হাসানও দারুণ খুশি। বললেন, ‘আশা রাখি ছেলেরা বিজয় ধরে রাখবে। স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন দল হিসেবে ইতিহাস গড়েছে কিংস। লিগ জিতে আরেকটি ইতিহাস লিখতে পারবে কি তা সময় বলে দিবে।

সর্বশেষ খবর