রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

রংপুরের ‘চ্যাম্পিয়ন স্পিরিট’

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

ক্রিস গেইলের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংসটার কথা মনে আছে! বিপিএলের গত মৌসুমে রংপুর রাইডার্স শুরুর দিকে টানা তিন ম্যাচ হেরে ‘ডাবল রাউন্ড রবিন’ খেলেই বিদায়ের পথে ছিল। সন্দেহ দেখা দিল, অধিনায়ক মাশরাফির মধ্যে কি তবে ম্যাজিক্যাল দিকটা আর বাকি নেই! আরও কত জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু দলটা ঘুরে দাঁড়াল। চার নম্বর স্থানটা ধরে রাখল। তারপরেরটা ইতিহাস। ক্রিস গেইল কী অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র ৬৯ বলে ১৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ফাইনালে! ১৮টা ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন তিনি। সত্যিকার অর্থেই মিরপুরে দেখা মিলেছিল ক্যারিবীয় ঝড়ের। সেই ইতিহাস যে এবারেও ফিরতে পারে ভিন্ন রূপে তার উদাহরণ মিলল চলতি বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে। অ্যালেক্স হেইলস আর রিলে রুশোর জোড়া সেঞ্চুরি গেইলের চেয়ে কম ভয়ঙ্কর কিসে!

গত বিপিএলের চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয় রংপুর রাইডার্সের এবারের পথ চলা। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েই তারা ছুটছে সামনের দিকে। একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ জয় করে কাঙ্খিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। গত পরশু চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচটা জিততে ব্যর্থ হলে লড়াইয়ে টিকে থাকা বেশ কঠিন হতো মাশরাফিবাহিনীর। অধিনায়ক নিজেই বললেন, ‘আমরা ওই ম্যাচটা জেতায় কমফোর্ট জোনে চলে এসেছি। নাহলে টিকে থাকা বেশ কঠিন হতো।’ অবশ্য কোয়ালিফাইং রাউন্ড এখনো নিশ্চিন্ত নয় দলটির। মাশরাফি বলছেন, ‘অন্তত আরও দুটো ম্যাচ জিতলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি।’ কিন্তু রংপুর রাইডার্সের মধ্যে যে ‘চ্যাম্পিয়ন স্পিরিট’ দেখা যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অধিনায়ক মাশরাফিও এই স্পিরিটটা ধরে রাখার পক্ষপাতি। দলপতি বলছেন, ‘এই ম্যাচের (চিটাগং ম্যাচ) ৮০ ভাগ ধরে রাখতে পারলেই আমরা পরের ম্যাচগুলোতে সফল হওয়ার আশা করতে পারি।’ সত্যি বলতে প্রতি ম্যাচেই ২৩৯ রান হবে, এটা মাশরাফিও মানেন না। এমনটা কদাচিৎ হয়ে থাকে। এক ইনিংসে দু দুটো সেঞ্চুরি কী আর গন্ডায় গন্ডায় মিলে! যেখানে টি-২০ ইতিহাসেই কেবল তিনটি ঘটনা আছে এমন! অ্যালেক্স-রুশো ছাড়া কেবল ও’ব্রেইন-মার্শাল এবং কোহলি-ভিলিয়ার্স। রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক বলেন, ‘এমন ব্যাটিং এবার আর হয়ত হবে না।’

পরের বাক্যেই নিজেকে কিছুটা শুধরে নেন মাশরাফি, ‘হতেও পারে, তবে সম্ভাবনা খুবই কম।’

তিনটা ম্যাচ বাকি রংপুর রাইডার্সের। আগামীকাল ঢাকা ডাইনামাইটসের বিপক্ষে হেভিওয়েট ম্যাচ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই। পরের দুইটা রাজশাহী কিংস (চট্টগ্রাম) ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের (মিরপুর) সঙ্গে। চট্টগ্রাম থেকেই শীর্ষ চার নিশ্চিত করে যেতে মরিয়া দলটা ঢাকা ও রাজশাহীর বিপক্ষে জিততে বদ্ধ পরিকর। এখন তো রংপুর রাইডার্সের কাছ থেকে আর কোনো কিছুই অসম্ভব বলে মনে হয় না! মাশরাফিও মানেন কথাটা। ‘আমাদের প্রথম চার ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকলে নিশ্চিন্ত থাকি। ড্রেসিং রুমে তখন হাসি ঠাট্টাও চলে। ম্যাচটা উপভোগ করি।’ কেবল রংপুর রাইডার্সের ড্রেসিংরুমেই নয়, রংপুর রাইডার্সের প্রথম চার ব্যাটসম্যান (গেইল, অ্যালেক্স, রুশো, ভিলিয়ার্স) উইকেটে থাকলে ক্রিকেটানুরাগীরা ফুরফুরে মন নিয়ে খেলা দেখেন। এই বুঝি ছক্কা হলো, চার হলো। দারুণ কোনো শট মিসের শঙ্কায়  চোখের পাতা বুজতেও ভুলে যান দর্শকরা।

রংপুরের এগিয়ে থাকার নানান কারণ আছে। বিপিএলে মোট ১৫টা সেঞ্চুরি হয়েছে। চলতি আসরে তিনটা। আগের পাঁচটাতে ১২টা। এর মধ্যে ক্রিস গেইলেরই ৫টা। বাকি ১০ জন মিলে করেছেন ১০টা। বাংলাদেশিদের মধ্যে কেবল সেঞ্চুরি আছে সাব্বির, আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফিসের। সর্বোচ্চ পাঁচ সেঞ্চুরি হাঁকানো গেইল ছাড়াও রংপুরে আছেন বিপিএলের সেঞ্চুরিম্যান রুশো ও অ্যালেক্স। এমন ভয়ঙ্কর সুন্দর কিছু দেখার প্রত্যাশা সব সময়ই করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে আরও কত কী লুকিয়ে আছে বলা কঠিন! তবে দলীয় সর্বোচ্চ রানের তালিকায় রংপুর রাইডার্স যা যোগ করল, তা বোধ হয় আর হচ্ছে না!

সর্বশেষ খবর