মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাগরিকায় ভিলিয়ার্স শো

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

সাগরিকায় ভিলিয়ার্স শো

রংপুর রাইডার্সের জয়ের দুই নায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স ও অ্যালেক্স হেইলস। দুই তারকার ১৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি আসরে ছয় নম্বর জয় উপহার দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। দলের অসাধারণ জয়ে ভিলিয়ার্স খেলেছেন ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস। হেইলস করেন হার না মানা ৮৫ রান -দিদারুল আলম

তিনি মাঠে এসেছেন বলেই দর্শক সারিতে শোর উঠল। বোলারদের হাত কেঁপে গেল। ফিল্ডাররা অতিরিক্ত তৎপর হয়ে উঠল। এসবের যে প্রয়োজন ছিল তা প্রথম বলেই প্রমাণ হলো। আন্দ্রে রাসেলের বল হাওয়ায় ভাসিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে। ছক্কা। এরপর কী যে হলো ভিলিয়ার্সের। নিজেকে পুরোপুরিই মেলে দিলেন। অথচ এই ম্যাচটা প্রথম দুই ওভারেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল ঢাকা ডাইনামাইটস। আন্দ্রে রাসেল দ্বিতীয় ওভারেই পরপর দুই বলে গেইল আর রুশোকে তুলে নিয়ে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন ঢাকা শিবিরে। কিন্তু ভিলিয়ার্স তাকে পাড়ার বোলারের চেয়ে বেশি মূল্য দেননি খেলতে এসে।

এবি ডি ভিলিয়ার্সকে কেন এতটা ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান বলা হয়, তার বহু উদাহরণ আছে। গতকাল আরও একটা উদাহরণ দিলেন তিনি। রংপুর রাইডার্সে নাম লেখানোর পর প্রথম তিন ইনিংসে (৩৪, ৪১ ও ১) নিজেকে খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি তিনি। ভিলিয়ার্সের নামের সঙ্গে যেন ঠিক মাননসই ছিল না ইনিংসগুলো। গতকাল সুদে-আসলে সব পুষিয়ে দিলেন! মাত্র ৫০ বলে করলেন ১০০ রান। ৬টা ছক্কা ছাড়াও ছিল ৮টা চারের মার। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও জিতেন ভিলিয়ার্সই।

সৎ সঙ্গে স্বর্গে বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। প্রবাদটা ভিলিয়ার্স-হেইলসের ক্ষেত্রেও তো খাটে। হেইলস এমনিতেই কম ভয়ঙ্কর নন। ভিলিয়ার্সের সঙ্গ পেয়ে যেন আরও দুর্বার হয়ে ওঠলেন। দুজন মিলে ৫০ পাড়ি দিতে মাত্র ১৯ বল খেললেন। সাকিব আল হাসান তার অস্ত্রশালার সবগুলো তরবারির ধার পরীক্ষা করেও ঘায়েল করতে পারেননি এই জুটিকে। ভিলিয়ার্সের পাশাপাশি ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন অ্যালেক্স হেইলসও। তিনি ৫৩ বলে ৮৫ রান করেন। ৩টা ছক্কা ছাড়াও ছিল ৮টা চারের মার। দুজন মিলে করলেন ১৮৪ রান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে বিপিএলে সর্বোচ্চ। সবমিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি এটা। ২০১ রান করে সবার ওপরে আছেন গেইল-ম্যাককালাম। ২০১৭ সালে রংপুরের হয়ে ঢাকার বিরুদ্ধেই রেকর্ডটা গড়েছিলেন তারা।

মোহাম্মদ মিথুন ম্যাচের আগের দিন ঠিকই বলেছিলেন, রংপুর রাইডার্সের প্রথম চারজন ব্যাটসম্যানই খেলাটা শেষ করার জন্য যথেষ্ট। গেইল-রুশো-হেইলস-ভিলিয়ার্সদের কেউ না কেউ ঠিকই দাঁড়িয়ে যান। রংপুরের ৮ উইকেটের জয় তো মিথুনের বক্তব্যই যথার্থ প্রমাণ করল। ঢাকার ১৮৬/৬-এর জবাবে ১০ বল হাতে রেখেই ১৮৯ রান তুলে জিতে যায় রংপুর। ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে শীর্ষস্থানটাও দখল করে বিপিএলের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।

শেয়ানে-শেয়ানে লড়াইয়ের ভালো দিক অনেক। দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে দারুণ একটা লড়াই উপভোগ করেন। টি-২০ ক্রিকেটের সব রং দেখা যায় এই ম্যাচে। হৈ-হুল্লোড়টা ঠিকভাবে করা যায়। মুখ গোমড়া করে বসে থাকার সুযোগ নেই এ ধরনের ম্যাচে। দিন শেষে দর্শকদের ভাঙা গলা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। গতকাল সাগরিকায় হোম টিম চিটাগং ভাইকিংসের কোনো ম্যাচ ছিল না। অন্য দলের ম্যাচ হলে দর্শক আসে, তবে অতটা নয়। কিন্তু রংপুর-ঢাকা ম্যাচ দেখার জন্য হোম টিমের প্রয়োজন পড়ে না। টিকিটের দাম দুই তিন গুণ বেশি হলেও ক্ষতি নেই। ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, রুশো আর হেইলসদের ব্যাটিং দেখার মজাই যে আলাদা! তাছাড়া ঢাকার আন্দ্রে রাসেল আর কাইরন পোলার্ডরা আছেন না! দুই দলের লড়াই দেখতে তাই দর্শকদের ঢল নামল। অন্যরকম এক উত্তেজনা ফুটে উঠল ম্যাচের শুরু থেকেই। জাতীয় দলের ভিন্ন ফরম্যাটের দুই অধিনায়কের লড়াই। মাশরাফি বনাম সাকিব আল হাসান। রংপুর-ঢাকা লড়াইটা এই কারণেও অন্যরকম উত্তেজনা ছড়ায় দর্শকদের মধ্যে। কেউ সাকিব কেউ বা আবার মাশরাফির অন্ধ ভক্ত। তাদের বাজি পছন্দের অধিনায়কের জন্য।

দুইটা দলই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল। গতবারের ফাইনালিস্ট। যেখানে ঢাকা ডাইনামাইটসকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল রংপুর রাইডার্স। বিপিএল সিক্সের চলতি আসরে দুই দলের প্রথম লড়াইটাও কিন্তু দারুণ উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। ঢাকার ১৮৩/৯ রানের জবাবে ১৮১/৯ রান করে মাত্র ২ রানে হেরে গিয়েছিল রংপুর। গতকাল টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮৬ রান করেন সাকিবরা। প্রথম ম্যাচের চেয়ে কিছুটা (৩ রান) বেশিই! কিন্তু ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, ২০০-এর ওপরে যে কোনো সংগ্রহই নিরাপদ হবে। লক্ষ্য পূরণ হয়নি ঢাকার ব্যাটিংয়ে। এর শাস্তিটাও পেল তারা।

গতকাল রংপুর রাইডার্স সাগরিকার ব্যাটিং উইকেটে খুবই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে। গড়ে ১০-এর ওপরে রান দিয়েছেন কেবল দুজন। ফরহাদ রেজা ও নাজমুল ইসলাম। মাশরাফি ৪ ওভারে ৩০, নাহিদুল ৩ ওভারে ২২ রান। ঢাকার পক্ষে ব্যাটিংয়ে তাই কেউই খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। রনি ৫২, পোলার্ড ৩৭, নারিন ২৮ আর সাকিবের ২৫ রানই শেষ কথা। বাকিরা কেউই ২০-এর ওপরে উঠতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর