শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ম্যাজিক ম্যাচে নায়ক সাইফ

মেজবাহ্-উল-হক

ম্যাজিক ম্যাচে নায়ক সাইফ

একটুর জন্য হ্যাটট্রিক করা হয়নি সাইফুদ্দিনের। তবে চার উইকেট নিয়ে তিনিই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয়ের নায়ক। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে লো স্কোরিং ম্যাচ জিতে শীর্ষেই উঠে গেলেন ইমরুল-তামিমরা -রোহেত রাজীব

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের উদযাপনটা ভিন্ন রকমের। উইকেট শিকারের পর শিরদাঁড়া সোজা করে ঠায় দাঁড়িয়ে প্রথমে ডান হাত বুকে বাঁধেন। তারপর বাঁ হাত। এভাবেই আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে সাইফউদ্দিনের! মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল দর্শকরা প্রাণ ভরে চার চারবার এভাবে অদ্ভুত এই সেলিব্রেশন দেখেছেন।

পেসার সাইফউদ্দিনের অসাধারণ বোলিংয়েই এই ম্যাজিক ম্যাচে ১ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। হেরে গিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার দশা তারকাবহুল দল ঢাকা ডায়নামাইটসের। ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে এখন তালিকার পঞ্চম স্থানে সাকিবের দল। ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাজশাহী কিংস। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সঙ্গে রংপুর রাইডার্স ও চিটাগং ভাইকিংস আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলেছে। এখন চতুর্থ দল হিসেবে প্লে-অফে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়াই করছে কিংস ও ডায়নামাইটস। সাইফুদ্দিনের বোলিং ফিগার ৪-১-২২-৪। তিন ওভার শেষে ছিল ৩-১-১১-৩। বিশ্বের সেরা সেরা ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে জাদুকরী এক বোলিং ফিগার। আগের ম্যাচেও বল হাতে ভয়ঙ্কর ছিলেন এই পেসার। গতকাল শেষ ওভারে সৃষ্টি হয়েছিল নাটকীয় পরিস্থিতি। জয়ের জন্য ঢাকার দরকার ছিল ১৩ রান। বাইশগজে রয়েছেন মারকুটে আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন না ক্যারিবীয় তারকা। এটাই ছিল ডায়নামাইটসের বড় ভয়। অন্যদিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ ওভারে ভিক্টোরিয়ানস দলপতি বল তুলে দেন সাইফুদ্দিনের হাতে। প্রথম বলেই ঢাকার ব্যাটসম্যান রুবেল আউট। দ্বিতীয় বলে শাহাদত হোসেন কোনো রকমে ব্যাটে-বলে করলেন, বল ৩০ গজ বৃত্ত পার না হলেও প্রাণপণ ছুটে একরান সম্পন্ন করেন রাসেল। ক্যারিবীয় তারকা স্ট্রাইকিং প্রান্তে যাওয়ায় খানিকটা স্বস্তি ঢাকার। যদিও তখন দরকার ছিল ৪ বলে ১৩ রান। পর পর দুই ডট। শেষ দুই বলে দরকার ১২ রান। তবু আশা বুক বাঁধে ঢাকা। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন রাসেল। শেষ বলে দরকার আরও এক ছক্কা। ফাইনাল বলটি করার জন্য খানিকটা সময় নিলেন সাইফুদ্দিন। এই ১ বলেই হয় নায়ক নতুবা তিনি হয়ে যাবেন খলনায়ক! বুদ্ধি খাটিয়ে বল ফেললেন রাসেলের পায়ের ওপর। লেগস্ট্যাম্পে দুর্দান্ত এক ইয়র্কার। এমন বলে ছক্কা হাঁকানো অসম্ভব। তাই রাসেলও পারলেন না। বল স্কোয়ার লেগ দিয়ে গড়িয়ে যতক্ষণে বাউন্ডারি রশি স্পর্শ করল বটে, তার আগেই জয়ের আনন্দে মাঠে রীতিমতো ভিক্টোরিয়ানসের উৎসব শুরু হয়ে যায়। মজার বিষয় হচ্ছে, কাল ব্যাটিংয়ে ঝড়ো ব্যাটিং দিয়ে শুরুর পরও ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আত্মহত্যার মিছিলে অংশ নিতে থাকে এক সময় মনে হচ্ছিল যেন ঢাকাকে জয় উপহার দিতেই তারা মাঠে নেমেছে। তামিম খেলেন ২০ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। এমন ম্যাচে কুমিল্লা অলআউট হয়ে যায় ১২৭ রানে।  রুবেল হোসেন ৩০ রানে নেন ৪ উইকেট। আর সাকিব ২৩ রান ২ উইকেট শিকার করেন। বোলাররা ম্যাচকে হাতের মুঠোয় এনে দিলেও ১২৮ রানের সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১২৬ রানে আটকে যায় ঢাকা। নাটকীয় এই ম্যাচে একসময় জয়ের জন্য সাকিবদের লক্ষ্য ছিল ৩০ বলে ৩৮ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা ওই সময় উইকেটে ছিলেন দুই মারকুটে ব্যাটসম্যান রাসেল ও পোলার্ড। এরপর মিরপুরের বাইশগজে মঞ্চস্থ হয় ১২ বলের এক মহানাটক। ১৬তম ও ১৭তম দুই ওভার মাত্র ১ রান করে ঢাকা। আবার দুই দুটি উইকেটও হারাতে হয় ডায়নামাইটসকে।

ভিক্টোরিয়ানসের স্পিনার শহীদ আফ্রিদি ১৬তম ওভারটি মেডেন করেন। আর ১৭তম ওভারে সাইফুদ্দিন ১ রান দিয়ে তুলে নেন পোলার্ড ও নুরুল হাসান সোহানের উইকেট। পর পর দুই বলে দুই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও  তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শেষ বলে পারেননি। তবে ম্যাচের রং পাল্টে দেন।

১৮তম ওভারে ১৭ রান দিয়ে তো প্রায় সর্বনাশটা ডেকেই এনেছিলেন আফ্রিদি। ওই ওভারে রাসেল দুই ছক্কা হাঁকান। আর ১৯তম ওভারে তো ক্যারিবীয় তারকাকে নতুন জীবনই দিয়ে দেন আরেক পাকিস্তানি বোলার ওয়াহাব রিয়াজ। ক্যাচ তুলে দিয়ে রাসেল ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করলেও রিপ্লেতে দেখা যায়, ওয়াহাবের ফুটস্টেপ দাগের বাইরে। আউট তো নয়ই, উল্টো নো বলে ফ্রি-হিট পেয়ে যায় ঢাকা। এরপর শেষ ওভারে আরেক রোমাঞ্চ। তবে এখনো শেষ চারের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে ডায়নামাইটস। তাদের চেয়ে রাজশাহী দুই পয়েন্ট বেশি নিয়ে এগিয়ে থাকলেও নেট রানরেট ভালো থাকায় স্বস্তিতে আছে ডায়নামাইটস। এখন শেষ ম্যাচে খুলনা টাইটানসকে হারাতে পারলেই শেষ দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে যাবে সাকিবদের। আর হারলে পরের রাউন্ডের টিকিট পেয়ে যাবে রাজশাহী। টানা ৫ ম্যাচে হেরে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ঢাকা ডায়নামাইটস কি পারবে ঘুড়ে দাঁড়াতে!

এদিকে শেষ ম্যাচে সান্ত্বনার জয়              পেয়েছে সিলেট সিক্সার্স। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ২৯ রানে হারিয়েছে চিটাগং ভাইকিংসকে। এই হারেও চিটাগংয়ের কোনো ক্ষতি হলো না। আগেই তারা প্লে অফ নিশ্চিত করে নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর