রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাতারের রূপকথা, বাংলাদেশের হতাশা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কাতারের রূপকথা, বাংলাদেশের হতাশা

ইতিহাসের এক অপার বিস্ময় ‘মিসরের মমি’। সিনেমা কিংবা গল্প-সবখানেই মিসরীয় মমির সজীব উপস্থাপনা। প্রাচীন মমিগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে আবেদনময়ী মিসরের ‘বালক রাজা’ তুতানখামেনের মমি। ‘ফারাও’ রাজা তুতানখামেনের মমি নিয়ে এখনো যে গল্পগাথা লেখা হয় এবং হচ্ছে, সেটা হার মানায় সোনালি ইতিহাসের যে কোনো রঙিন গল্পকেও। তুতানখামেনের রহস্যময়(!) মমিকে এবার পেছনে ফেলল মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারের ফুটবল সাফল্য। সাড়ে ৪ হাজার বর্গমাইলের তেল ও গ্যাসের দেশটি এবার বিস্ময়ের চাদরে ঢেকে দিয়েছে এশিয়ান ফুটবলকে। যে দেশটি গত আগস্টে ১৯২ র‌্যাঙ্কিংয়ের বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল জাকার্তা এশিয়ান গেমসে, সেই কাতার এখন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইরান, সৌদি আরবের মতো ফুটবল পরাশক্তিদের পেছনে  ফেলে এশিয়ান ফুটবলের অধীশ্বর। দখলে নিয়েছে ফুটবল সাম্রাজ্য চালানোর দ-শক্তি। পেট্রো ডলারের কাতার এশিয়ার নতুন চ্যাম্পিয়ন। চারবারের এশিয়া চ্যাম্পিয়ন জাপানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে তুতানখামেনের মমির চেয়েও ‘বিস্ময়কর’ রূপকথা লিখেছে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশটি। অথচ পাঁচ মাস আগে কাতারকে হারানো বাংলাদেশের ফুটবল এখন পুরোপুরি ঢেকে আছে হতাশার চাদরে।  

এশিয়ান কাপে কাতার অংশ নিচ্ছে ১৯৮০ সাল থেকে। শেষ হওয়া এশিয়ান কাপের আগে দলটির সেরা সাফল্য ছিল দুবার কোয়ার্টার ফাইনাল। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়ান কাপ শুরুর পরও কেউ ভাবতে পারেনি কাতার ফাইনাল খেলবে। চ্যাম্পিয়নতো বহু দূরের কথা! অথচ আলময়েজ আলি, আবদুল আজিজ হাতেম, আকরাম আফিফ, তামিম আল মুহাজা, তারেক সালমান, আবদেল রহমান ফাহমি মুস্তাফা, মোহামেদ আল বাকরিররা ফুটবলপ্রেমীদের সব জল্পনা, কল্পনাকে আরব সাগরে ছুড়ে ফেলে লিখেছে কাতারীয় ফুটবল রূপকথা। যে রূপকথায় চলে এসেছে বাংলাদেশেরও নাম। জাকার্তা এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের কাছে ০-১ গোলের হারের ম্যাচে খেলেছিলেন তামিম আল মুহাজা, তারেক সালমান, আবদেল রহমান ফাহমি মুস্তাফা ও মোহামেদ আল বাকরির। এরাই এখন এশিয়ান সেরা দলের সদস্য। কাতার অলিম্পিক দলকে হারানো বাংলাদেশ এখন নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল খেলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের সেমিফাইনাল খেললেও দৌড় ছিল ওই পর্যন্তই। শুধু এশিয়ান কাপ নয়, এশিয়ান গেমস থেকে গালফ কাপেও কাতারের সাফল্য নেই। তারপরও দলটি ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দল হিসেবে ফুটবল মহাযজ্ঞের আয়োজন করেই থেমে থাকেনি দলটি, স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স স্যাঞ্চেজ ব্যাসের নিখুঁত কৌশলে দলটি গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের। এশিয়ার শিরোপা জেতার পথে দলটি হারিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরাক, সৌদি আরবের মতো দলগুলোকে। অসাধারণ ও দুরন্ত ফুটবল খেলে ফাইনালে পৌঁছানো কাতার গোটা আসরে একমাত্র গোল হজম করে ফাইনালে জাপানের বিপক্ষে। অথচ ফাইনালে উঠার আগে পর্যন্ত প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকাররা একবারের জন্যও জালের দেখা পায়নি। এশিয়ান ফুটবলের নতুন পরাশক্তি কাতার যেখানে স্বপ্ন দেখছে বিশ্বকাপের, সেখানে বাংলাদেশ টার্গেট করেছে র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি। হাস্যকর! কাতারকে হারানো বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অবশ্য উপরেই হাঁটছে। কাতারকে হারানোর পর ৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ হারিয়েছে ভুটান, লাওস ও পাকিস্তানকে। হেরেছে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ফিলিস্তিনের কাছে। একমাত্র ফিলিস্তিন ছাড়া অপরাপর দলগুলো শক্তিকে বাংলাদেশের ধারে কাছেরই দল। এমন সব দলের বিপক্ষে খেলে উন্নতির পথে কতটা হাঁটা যাবে, সেটা এখন প্রশ্নবোধক। অথচ সঠিক পরিকল্পনায় হেঁটে পার্শ¦বর্তী ভারত এখন এশিয়ান কাপ ফুটবল খেলছে।

সর্বশেষ খবর