মঙ্গলবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোয়ালিফায়ারে ঢাকা

মেজবাহ্-উল-হক

কোয়ালিফায়ারে ঢাকা

উইকেট পাওয়ার পর উল্লসিত নারাইন

ক্যামেরন ডেলপোর্ট যে অগ্নিশর্মা হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন সেটা তার শরীরীভাষাতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। বাইশগজের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়ে ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু তাকে আটকে দিলেন তারই সতীর্থ সাদমান ইসলাম। ডেলপোর্টকে রান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েও হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন সাদমান। রান আউট হয়ে যান ভাইকিংসের প্রোটিয়া তারকা। ম্যাচের মোমেন্টামটা যেন তখনই হারিয়ে ফেলে চিটাগং ভাইকিংস। ডেলপোর্ট আউট হওয়ার আগে  যেখানে ৭.২ ওভারে ৫৬ রান আসে, সেখানে পরের ১২.৪ ওভারে মুশফিকরা করেন মাত্র ৭৯ রান। ১৬০ রানের উইকেটে ভাইকিংস করে মাত্র ১৩৫ রান! আর সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে চিটাগংকে পাত্তাই দিল না ঢাকা ডায়নামাইটস। ২০ বল হাতে  রেখেই ৬ উইকেটের দুরন্ত জয়ে কোয়ালিফায়ারে উঠে  গেলেন সাকিবরা। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে জিতলেও নকআউটে ঢাকার কাছে লড়াই-ই জমিয়ে তুলতে পারলেন না মুশফিকরা। প্লে-অফ থেকেই বিদায় ঘণ্টা  বেজে গেল ভাইকিংসের।

ব্যাটে-বলে দাপট দেখালেন ডায়নামাইটসের ক্যারিবীয় তারকা সুনীল নারিন। প্রথম বলে হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে তুলে নেন ভাইকিংসের চার উইকেট। তারপর ব্যাট হাতে খেলেন মাত্র ১৬ বলে ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস। ঢাকার ওপেনার উপুল থারাঙ্গা হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ৪৩ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন এই শ্রীলঙ্কান তারকা। তবে এলিমিনেটরের এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসেই ম্যাচের গতিপথ অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যায়। দ্বিতীয়টা যেন কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন সাকিবরা। ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিটেফোঁটাও ছিল না। এজন্যই খানিকটা অতৃপ্তি ভাইকিংস অধিনায়ক মুশফিকের। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ জায়গা করে নিতে পারায় তৃপ্তি কম নয় তার। মুশফিক বলেন, ‘প্রথমে আমাদের লক্ষ্য ছিল শেষ চারে খেলা।  সেটা আমরা করতে পেরেছি। আর দল যখন ভালো করে তখন ভালোই লাগে।’ এই টুর্নামেন্টে মুশফিক নিজেও দারুণ ব্যাটিং করেছেন। ১৩ ম্যাচে করেছেন ৪২৬ রান। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এবারের আসরে কাগুজে কলমে সবচেয়ে দুর্বল দল ছিল চিটাগং ভাইকিংস! লক্ষ্যটাও খুব বড় ছিল না।  যেন শেষ চারে উঠতে পারাই ছিল একমাত্র টার্গেট। তবে মুশফিকের নেতৃত্বে মাঠের লড়াই চমক সৃষ্টি করে ভাইকিংসের। একের পর ম্যাচ জিতে জাগিয়ে ছিল শিরোপার সম্ভাবনাও। তবে আগ্রাসী ওপেনার আফগান তারকা মোহাম্মদ শাহজাদ দেশে ফিরে যাওয়ার পরই খানিকটা বিপদে পড়ে বন্দরনগরীর দলটি। গতকাল অবশ্য প্রোটিয়া তারকা ডেলপোর্টকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে সমস্যাটা দূর করতে চেয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। মাত্র ৮ রানেই ওপেনার ইয়াসির আলী সাজঘরে ফিরে যান। এরপর সাদমানের সঙ্গে ভালোভাবেই স্কোরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন  ডেলপোর্ট। তারপর ছন্দপতন। দৃষ্টিকটূভাবে রান আউট হয়ে যান ডেলপোর্ট। সতীর্থ সাদমানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ৩৬ রানেই আটকে যান  প্রোটিয়া তারকা।

তবে ভাইকিংসের ইনিংসটাও যেন সেখানেই হোঁচট খায়! এরপর সাদমানও আর সুবিধা করতে পারেননি। ১৯ বলে ২৪ রান করে ফিরেছেন। তার আগেই মুশফিক বাইশগজে এসে চলে গেছেন। দুজনেই নারাইনের শিকার। ঢাকার এই ক্যারিবীয় তারকার বলে গতকাল উইকেট খুইয়েছেন ভাইকিংসের তারকা রবি ফ্রাইলিঙ্ক। আরেক প্রোটিয়া তারকা হার্ডাস ভিজিওনকেও বিদায় করে দেন নারিন। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যানই ব্যক্তিগত সংগ্রহে ১ রানের  বেশি যোগ করতে পারেননি। অবশ্য এরপর চট্টগ্রামের আর কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। তারপরও মুশফিকদের ইনিংসটা  শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক হয়েছে মোসাদ্দেকের ৩৫ বলে ৪০ রানের ইনিংসের কারণে। উইকেট না পেলেও গতকাল দারুণ বোলিং করেছেন ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চার ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ১১ রান। তবে সাকিবের আসল ক্যারিশমা বোধহয় তার ক্যাপ্টেন্সিতে। ম্যাচ শেষে সে কথাই জানালেন ঢাকার পেসার রুবেল হোসেন। ‘মাঠে সাকিব সময়ই সিরিয়াস। তিনি সিরিয়াস সিরিয়াস সিদ্ধান্তও নেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর