শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

তামিমের মহাকাব্যিক ১৪১

মেজবাহ্-উল-হক

তামিমের মহাকাব্যিক ১৪১

বিপিএলে আবারও চ্যাম্পিয়ন হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মেতেছে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, শহিদ আফ্রিদি, ওয়াহাব রিয়াজের কুমিল্লা। দলটি প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১৫ সালে -রোহেত রাজীব

সেলিব্রেশন খুবই সাদামাটা। আন্দ্রে রাসেলের বল মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিয়েই হেলমেট খুলে ফেলেন তামিম ইকবাল। তারপর ব্যাট-হেলমেটসহ দুই হাত উঁচিয়ে ধরে চিরচেনা সেই উদযাপন। ৫০ বলে আগ্রাসী এক সেঞ্চুরি। বিপিএলে প্রথম শতকের দেখা পেলেন তামিম। ড্যাসিং ওপেনারের মহাকাব্য রচনার দিনে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে বিপিএলের দ্বিতীয় শিরোপা জেতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে মাত্র ৬১ বলে ১৪১ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ১১ ছক্কার সঙ্গে ১০ বাউন্ডারি। তামিমের ক্যারিয়ার তো বটেই, বিপিএলের ইতিহাসে এটি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস। সব মিলিয়ে বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। গত বিপিএলের ফাইনালে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ক্রিস গেইল খেলেছিলেন ১৪৬ রানের ইনিংস। টি-২০ ক্যারিয়ারে গতকাল দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন ড্যাসিং ওপেনার। এর আগে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন জাতীয় দলের জার্সিতে ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের ধর্মশালায়।

তামিমের সেঞ্চুরিতে কাল ঢাকা ডায়নামাইটসের বিরুদ্ধে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে তামিমের সাইক্লোন গতির ব্যাটিংয়ের দিনেও স্কোরলাইনটা শেষ পর্যন্ত দুইশ পেরুতে পারেনি। আর কীভাবে হবে? যেখানে তামিমের স্ট্রাইক রেট ২৩১.১৪, অন্য ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট যে একশরও নিচে। এমন দিনে এনামুল হক বিজয় ৩০ বল খেলে করেন মাত্র ২৪ রান। ইমরুল কায়েস ২১ বলে করেছেন ১৭। আরেক ব্যাটসম্যান এভিন লুইসের সংগ্রহ ৭ বলে ৬। তামিমের ঝড়টা সবেচেয়ে বেশি গেছে ঢাকার তিন বোলার আন্দ্রে রাসেল, রুবেল হোসেন ও সাকিব আল হাসানের ওপর দিয়ে। রাসেল তার চার ওভারে দিয়েছেন ৩৭ রান। রুবেল দিয়েছেন ৪৮। ওভারপ্রতি ১২ করে। আর সাকিবের চার ওভার থেকে এসেছে ৪৫ রান। রুবেলের করা ইনিংসের ১৫তম ওভার থেকে তামিম নিয়েছেন ২৩ রান। ১৭তম ওভারে রাসেলের বলেও দিয়েছেন ২২ রান। ঢাকার একমাত্র সফল বোলার সুনীল নারিন। চার দিয়ে এই ক্যারিবীয় স্পিনার দিয়েছেন মাত্র ১৮ রান।

মজার বিষয় হচ্ছে, তামিম কাল তার ১১ ছক্কার প্রথমটি হাঁকিয়েছেন এই নারিনের বলেই। ক্যারিবীয় স্পিনারের স্লোয়ার এবং শট বল লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারেন। দ্বিতীয় ছক্কা শুভাগতর বলে। সুইপ করে ডিপ স্কোয়ার লেগ দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। মাহমুদুল হাসানের বলে তৃতীয় ছক্কাটি ছিল ৮০ মিটার। লং অফ দিয়ে বল বাউন্ডারি রশির বাইরে আঁচড়ে ফেলেন। তারপর রুবেলের এক ওভারে দুই ছক্কা। ছাড় দেননি ঢাকার আরেক ভয়ঙ্কর বোলার রাসেলকেও। ক্যারিবীয় এই পেসারের বলেও যেন গুনে গুনে তিন ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তামিমের হাত থেকে রেহাই পাননি বন্ধু সাকিব আল হাসানও। ডায়নামাইটস ক্যাপ্টেনের বলেও দুই ছক্কা। তবে তামিমের ১১ ছক্কার মধ্যে সেরা ২০তম ওভারে হাঁকানো ছক্কাটিই। যেটির দৈর্ঘ্য ৯৮ মিটার। আন্দ্রে রাসেলের বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন শেরেবাংলার গ্যালারির দ্বিতীয় তলায়। কাল অবশ্য সেঞ্চুরির আগেই দু-দুবার নতুন জীবনও পেয়েছেন জাতীয় দলের এই তারকা ওপেনার। ২৮ রানের মাথায় উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি। পরের ওভারে আবারও ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন তামিম। লং অফে ক্যাচ লুফেও নিয়েছিলেন ঢাকার ফিল্ডার আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, তালুবন্দী করার আগে বল ঘাস স্পর্শ করেছে। তারপর সেই রুবেল ও রাসেলের বলেই বেদম প্রহার করেন ড্যাসিং ওপেনার।

সকালের সূর্য দেখে যেমন দিনের পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তেমনি টি-২০র পাওয়ার-প্লে-র স্কোর দেখেও ম্যাচের ভাগ্য অনুমান করা সম্ভব! তাই কি? ব্যাটিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স পাওয়ার প্লেতে ছিল খুবই সাদামাটা। এক উইকেট হারিয়ে ৪০ রান। শুরুতেই দলের সেরা ব্যাটসম্যান এভিন লুইসকে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আর এই পাওয়ার প্লেতে ডায়নামাইটস করে ৭১ রান।

তারপরও শেষ পর্যন্ত ১৮২ রানে আটকে যায় ডায়নামাইটস। তবে দল হারলেও ঢাকার ব্যাটসম্যান রনি তালুকদারের ৬৬ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো। ৩৮ বলে চারটি ছক্কা ও ছয়টি বাউন্ডারিতে সাজানো নান্দনিক এক ইনিংস। মাত্র ২৭ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন ঢাকার ওপেনার উপুল থারাঙ্গাও।

ক্যারিবীয়ানদের দিকে তাকিয়ে ছিল ঢাকা। কিন্তু হাইস্কোরিং ম্যাচে নারিন, পোলার্ড, রাসেল মিলে করলেন মাত্র ১৭ রান! ক্যাপ্টেন সাকিব বল হাতে ব্যর্থতার পর ব্যাট হাতেও হতাশ (৪ রান)! বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কাল হেরে গেলেন বন্ধু তামিমের কাছেই। ড্যাসিং ওপেনার ব্যাট হাতে যেমন বন্ধুকে চুল পরিমাণ ছাড় দেননি, তেমনি দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নিয়ে বন্ধুকে রানও করতে দেননি। তামিম কাল আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরিয়ে দিয়েছেন পোলার্ডকে। ব্যাট হাতে অতিমানবীয় ইনিংসের পর ফিল্ডিংয়েও নিজেকে অন্য রূপে দেখালেন টাইগার ওপেনার।

কুমিল্লার ইনিংসেও তামিম, ঢাকার ইনিংসেও তামিম! বিপিএলে এ যেন তামিমময় এক ফাইনাল!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৯৯/৩, ২০ ওভার (তামিম ইকবাল ১৪১*, এনামুল বিজয় ২৪, ইমরুল কায়েস ১৭*, অতি. ১১ (লেবা ৬, ও ৫)। রুবেল হোসেন ৪-০-৪৮-১, সাকিব ৪-০-৪৫-১)।

ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৮২/৯, ২০ ওভার (উপল থারাঙ্গা ৪৮, রনি তালুকদার ৬৫, পোলার্ড ১৩, নুরুল হাসান ১৮, মাহমুদুল ১৫, অতি. ৯ (লেবা ৫, ও ৪)। (সাইফুদ্দিন ৪-০-৩৮-২, ওহাব রিয়াজ ৪-০-২৮-৩, পেরেরা ৪-০-৩৫-২)।

 ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১৭ রানে জয়ী।

ম্যান অব ফাইনাল : তামিম ইকবাল

ম্যান অব টুর্নামেন্ট : সাকিব আল হাসান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর