বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আন্ডারডগ থাকতেই পছন্দ রোডসের

মেজবাহ্-উল-হক

আন্ডারডগ থাকতেই পছন্দ রোডসের

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবশেষ দুই ওয়ানডেতেই জিতেছে বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচই হয়েছিল নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। একটি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে, আরেকটি ইংল্যান্ডের কার্ডিফে। ২০১৭ সালের এই ম্যাচের একটি ছিল ত্রি-দেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচ, আরেকটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। কার্ডিফের সেই ম্যাচে কিউইদের দেওয়া ২৬৬ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশ ৫ উইকেটে পেয়েছিল এক অবিস্মরণীয় জয়। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুরন্ত সেঞ্চুরি। ওই জয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই মধুর স্মৃতি আজ নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে রোমাঞ্চিত করছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে বাংলাদেশ কখনো জিততে না পারলেও টাইগারদের নিয়ে বেশ সতর্ক স্বাগতিকরা। মাশরাফিদের নিয়ে কিউই তারকা ওপেনার মার্টিন গাপটিলের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশ যে খুবই ভালো দল সেটা তারা দেখিয়েও দিয়েছে। শেষ ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তারা আমাদেরকে হারিয়েছে।’ ভারতের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ড তাদের ঘরের মাঠে হেরেছে ৪-১ ব্যবধানে। তবে কার্ডিফের ম্যাচে জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান না থাকায় নিজেদেরকে ‘আন্ডারডগ’ ভাবছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক স্টিভ রোডস। মাশরাফিদের গুরু বলেন, ‘আমরা জানি, নিউজিল্যান্ডে খেলা কত কঠিন! তবে আন্ডারডগ থাকতেই আমরা পছন্দ করি। তবে নিউজিল্যান্ডও জানে আমাদের বিরুদ্ধে জিততে হলে তাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে।’

চতুর্থবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু এর আগে কখনো জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। তবে আগের সফরগুলো থেকে এবারের সফরটা বেশ আলাদা। আগে টাইগাররা নিউজিল্যান্ডে গেছে মনে মনে হারের চিন্তা করেই। ‘হারের ব্যবধানটা যেন সম্মানজনক হয়’ -এমন ভাবনা নিয়েই হয়তো খেলতে নামতেন টাইগাররা। আর এখন মাশরাফিদের মনে জয়ের আত্মবিশ্বাস। তবে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা সেরা তারকা সাকিবের না থাকাটা। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় পাননি মাশরাফিরা। নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়নি। বিপিএল খেলে সরাসরি নিউজিল্যান্ডে চলে গেছেন ক্রিকেটাররা। খেলার মধ্যে থাকলেও টি-২০ ফরম্যাট থেকে গিয়ে খেলতে হচ্ছে ওয়ানডে ও টেস্ট। তাই নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য বিপিএল কতটা কাজে লাগে তা নিয়ে সংশয় আছে রোডসের মনে, ‘বিপিএল কঠিন একটা টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে ইতিবাচক অনেক দিকই আছে। তবে এই টুর্নামেন্টে খেলার কারণে ক্রিকেটারদের শরীরের ওপর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। এ কারণে নিউজিল্যান্ড সফরের প্রস্তুতিটা খুব ভালো হয়নি। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ক্রিকেটাররা নির্দিষ্ট দিনে ঠিকই প্রমাণ করে দেবে তারা ভালো ক্রিকেট খেলতে জানে।’

নেপিয়ারের ম্যাকলায়েন পার্কে এর আগে বাংলাদেশ দুই ম্যাচ খেলেছে ২০০৭ ও ২০১০ সালে। দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। একটিতে হারের ব্যবধান ছিল ১০২ রান (ডার্কওয়াথ/লুইস পদ্ধতি) আরেকটিতে ছিল ১৪৬ রানের ব্যবধান। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের স্কোর দুটি ছিল ৩৩৫ ও ৩৩৬ রান। আর বাংলাদেশ করেছিল ১৮১ ও ১৯০ রান। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে নেপিয়ারে কতটা অসহায় ছিলেন টাইগাররা। নেপিয়ারে এর আগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও শফিউলের। ব্যাট হাতে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ ভালো করতে না পারলেও ম্যাকলায়েন পার্কে একটি হাফ সেঞ্চুরি আছে তামিমের। ২০০৭ সালের ম্যাচে ৪৩ এবং ২০১০ সালের ম্যাচে ৬৩ রান করেছিলেন ড্যাসিং ওপেনার। আর শফিউল এক ম্যাচ খেলে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। তবে আজ তার খেলার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের একাদশে তিন পেসার থাকলে মাশরাফির সঙ্গে থাকবেন মুস্তাফিজ ও সাইফউদ্দিন। রুবেলের সম্ভাবনাও কম। আগের দুই ম্যাচেই কিউইরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই নেপিয়ারে তিন শতাধিক রান করলেও এবার উইকেট নিয়ে ধাঁধাঁর মধ্যে তারা। কেন না, মাসখানেক আগে এই ভেন্যুতে ভারতের বিরুদ্ধে মাত্র ১৫৭ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তারা খুবই ভালো করেই জানে বাংলাদেশের পেসার ভারতের পেসারদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তবে ম্যাকলায়েন পার্কে কিউই ব্যাটসম্যান রস টেলরের দিকে বাড়তি নজর থাকবে টাইগার বোলারদের। এই ব্লাক ক্যাপস তারকা নেপিয়ারের উইকেটে যেন রাজাধিরাজ। ম্যাকলায়েন পার্কে তার তিনটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি আছে। ৯৩.১৪ গড়ে করেছেন ৭৩৪ রান। মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসনেরও বেশ পছন্দের। তবে প্রতিপক্ষ দলে যারাই খেলুক না কেন টাইগারদের একটাই ভাবনাÑ জয়। এই ইতিবাচক চিন্তাই বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে রেখেছে। মুখে যতই ‘আন্ডারডগ’ বলুক না কেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও জয়ের জন্যই শিষ্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন স্টিভ রোডস।

সর্বশেষ খবর