শিরোনাম
রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নেপিয়ারের পুনরাবৃত্তি ক্রাইস্টচার্চে

মেজবাহ্-উল-হক

নেপিয়ারের পুনরাবৃত্তি ক্রাইস্টচার্চে

রান আউটের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রাণপণ ড্রাইভ দিলেন সাইফউদ্দিন। শূন্যে উড়ে সে যাত্রায় নিজেকে বাঁচালেও বাঁচাতে পারেননি দলকে। গতকালও ২২৬ রানে অলআউট টাইগাররা। সাইফউদ্দিন শেষ পর্যন্ত ১০ রানের বেশি করতে পারেননি -এএফপি

‘আমাদের টপ অর্ডার ভালো করতে পারেননি। দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ায় স্কোর বড় হয়নি। মিথুন অনেক ভালো ব্যাট করেছেন!’ -ক্রাইস্টচার্চে গতকাল ম্যাচ শেষে একথা বলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। 

নেপিয়ারে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পরেও একই কথা বলেছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। শুধু বাংলাদেশের অধিনায়কের কথা নয়, ক্রাইস্টচার্চের ম্যাচেও তো নেপিয়ারের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে গতকাল। হারের ব্যবধান সেই ৮ উইকেটেই।

নেপিয়ারের ম্যাচের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে আরও বেশ কিছু মিল আছে ক্রাইস্টচার্চের! এ ম্যাচেও  সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ওপেনার মার্টিন গাপটিল। কিউই তারকার স্কোর কাছাকাছি। আগের ম্যাচে করেছিলেন ১১৭ রান আর এ ম্যাচে করেছেন ১১৮।

মিল আছে দুই ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ইনিংসের মধ্যেও। গতকাল টাইগারদের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ মিথুন। এ ম্যাচেও একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে স্কোরকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়েছেন তিনি। মিথুন আগের ম্যাচে করেছিলেন ৬৩ আর এ ম্যাচে করেছেন ৫৭। আগের ম্যাচেও বাংলাদেশ অলআউট এ ম্যাচেও তাই।  নেপিয়ারে টাইগাররা করেছিল ২৩২, এ ম্যাচে ২২৬। সব কিছুতেই দারুণ মিল। তবে সবচেয়ে বড় সাদৃশ্য এখানেই যে,  নেপিয়ারের মতো ক্রাইস্টচার্চেও বিধ্বস্ত টাইগাররা।

টানা দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হাতছাড়া। শেষে ম্যাচটি এখন নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! সত্যিই কি তাই? হয়তো নিউজিল্যান্ডের জন্য আনুষ্ঠানিকতার হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে বাঁচার ম্যাচ। স্টিভ রোডসের শিষ্যরা পারবেন লজ্জা এড়াতে?

গতকাল বাংলাদেশ দল যখন ব্যাটিং করছিল মনে হচ্ছিল উইকেট নেপিয়ারের চেয়েও কঠিন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মিথুনের সঙ্গে সাব্বিরের ৭৫ রানের জুটিটি গড়ে না উঠলে তো দুইশ রানের আগেই গুটিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। মিথুনের মতো সাব্বির হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারলেও খেলেছেন ৪৩ রানের ইনিংস। নিয়ম মেনে এই ম্যাচেও দলীয় একশর মধ্যেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যান উধাও। মূলত তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে সফরকারীরা।

 এ ম্যাচেও ভালো শুরু করে ইনিংসটা বড় করতে পারেননি সৌম্য সরকার।। ২৩ বলে ২২ রান করে আউট হয়েছেন। মুশফিক আউট হয়েছেন ২৪ রান করে। এ ম্যাচেও ব্যর্থ ওপেনিং জুটি। তামিম-লিটন কেউ-ই দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। যে উইকেটে বাংলাদেশ ৪৯.৪ ওভার খেলে করে মাত্র ২২৬ রান, সেখানে ৩৬.১ ওভারেই খেলা শেষ করে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে যে কোনো জু জু ছিল না তা ম্যাচসেরা মার্টিন গাপটিলের কথাতেই পরিষ্কার, ‘নেপিয়ারের চেয়েও ভালো উইকেট ছিল। শুরু থেকেই বল মারা যাচ্ছিল। লাইনে বল থাকলেও তাতে শট খেলা যাচ্ছিল। খুব কম বলই থেমে এসেছে। সে কারণে মারতে বেশ আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাচ্ছিল। তাই আমাদের শুরুটা হয়েছিল ঝড়ো গতির। এ কারণেই ম্যাচ দ্রুত শেষ হয়েছে।’

এ ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া আর কেউ ভালো করতে পারেননি। কাটার মাস্টার ৯ ওভারে বোলিং করে ৪২ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট।

নেপিয়ারের মতো ক্রাইস্টচার্চেও একজন বোলার কম নিয়ে খেলেছেন মাশরাফিরা। দলে স্বীকৃত বোলার হিসেবে ছিলেন মাশরাফি-মুস্তাফিজের সঙ্গে সাইফউদ্দিন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। বাকি ১০ ওভারের কোটা পূরণের জন্য পার্টটাইমারদের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে। পার্টটাইমার হিসেবে বোলিং করেছেন সাব্বির, সৌম্য ও মাহমুদুল্লাহ।

দলে একজন ব্যাটসম্যান বেশি নিয়েও সুবিধা করতে পাচ্ছেন না মাশরাফিরা। গতকাল পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে নিউজিল্যান্ড যেখানে ১ উইকেট হারিয়ে করেছিল ৫৯ রান সেখানে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে করেছিল মাত্র ৩২। তাহলে বেশি ব্যাটসম্যান নিয়ে কী লাভ?

বাইশগজে গতকাল ঝড় তুলেছিলেন মার্টিন গাপটিল। কিউই ওপেনার সেঞ্চুরি করেছেন ৭৬ বলে। ১১টি চার ও ৪টি ছক্কায় অসাধারণ এক শতক। হার না মানা ৬৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। কিউইদের প্রথম উইকেট জুটিতে এসেছিল ৪৫ রান। দ্বিতীয় উইকেটে গাপটিলের সঙ্গে উইলিয়ামসনের জুটিটি ছিল ১৪৩ রানের। তবে গাপটিল আউট হওয়ার পর উইলিয়ামসন রস টেলরের সঙ্গে অপরাজিত ৪১ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারতের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারের পর বাংলাদেশির বিরুদ্ধে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করতে পেরে ভীষণ খুশি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আর সেগুলো এখন বাস্তবায়ন করছি। তবে বিশেষ ধন্যবাদ গাপটিলকে। তার টানা দুই সেঞ্চুরি আমাদের দুটি সহজ জয় এনে দিয়েছে।’

সিরিজের শেষ ম্যাচ ডানেডিনে। ওই ম্যাচে দলীয়ভাবে পারফরম করার কথা বলেছেন মাশরাফি, ‘দুই একজন পারফর্ম করলে হবে না। আমাদের দলীয়ভাবে ভালো খেলতে হবে। আমাদের স্কোর ২২০-২৩০ রানের মধ্যে আটকে যাচ্ছে, তবে লড়াই করার জন্য দরকার ২৭০-২৮০ রান।’

ডানেডিনে যাচ্ছে নেপিয়ার ও ক্রাইস্টচার্চের পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সতর্ক হয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ!

সর্বশেষ খবর