শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবাহনীকে উড়িয়ে দিল শেখ রাসেল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আবাহনীকে উড়িয়ে দিল শেখ রাসেল

সিলেট স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে আনন্দে ভাসছেন শেখ রাসেলের ফুটবলাররা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পুণ্যভূমি সিলেটের ফুটবলপ্রেমীরা দেখলেন ফুটবল ঝলক। দুটি পাতা, একটি কুড়ির দেশের ফুটবলপ্রেমীরা দেখলেন শেখ রাসেল ও আবাহনী লিমিটেডের ফুটবল যুদ্ধ। দেখলেন গতির লড়াই। এই লড়াইয়ে হেরেছে আবাহনী। জিতেছে শেখ রাসেল। তবে হার-জিতকে আড়াল করে দুই দলের ফুটবলাররাই মন জয় করেছে সিলেটের ফুটবলপ্রেমীদের। ম্যাচটিতে দুই বিদেশি রাফায়েল ওডোইন ও অ্যালেক্স রাফায়েলের জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছে ২০১২-১৩ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল। লিগে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের এটা পঞ্চম জয় এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর দ্বিতীয় হার। হারলেও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে আকাশি-হলুদ শিবির। দলটির পয়েন্ট ৮ ম্যাচ শেষে ৬ জয়ে ১৮। হেভিওয়েট লড়াইয়ে জিতে শেখ রাসেল ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে। স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের পয়েন্ট ১৬। শেখ রাসেল ২০১২-১৩ মৌসুমের ট্রেবল শিরোপাজয়ী। আবাহনী পেশাদার লিগে সর্বাধিক ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন। তার ওপর বর্তমান মৌসুমের ফেডারেশন কাপ জয়ী এবং স্বাধীনতা কাপের রানার্সআপ। দলটি চলতি লিগের অন্যতম ফেবারিট। তবে দলটি ঢাকার বাইরে এখনো জয় পায়নি। লিগের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা মুখোমুখি হয়েছিল আসরের নবাগত দল বসুন্ধরা কিংসের। নীলফামারীর ওই ম্যাচে আবাহনীকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়নরা। ওই ম্যাচের পর আবাহনী গোছাল ফুটবর খেলে একের পর এক জয় তুলে নেয় মুক্তিযোদ্ধা, রহমতগঞ্জ, বিজেএমসি, আরামবাগ ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে। গতকাল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় আরেক শিরোপা প্রত্যাশী শেখ রাসেলের। রাফায়েল ওডোইন, অ্যালেক্স রাফায়েলদের সাঁড়াশি আক্রমণে প্রতিপক্ষ দলগুলো তাল খুঁজে পায়নি। দলটি প্রথম তিন ম্যাচে আরামবাগ, ব্রাদার্স ও মোহামে, ডানকে হারানোর চার নম্বর ম্যাচে হেঁাঁচট খায়। পয়েন্ট হারায় সাইফ স্পোর্টিংয়ের কাছে। পরের ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে ফের ড্র করে শেখ জামালের সঙ্গে। গতকাল ভেন্যু সিলেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি সফরকারী আবাহনীর। আবাহনী খেলতে নামের আগের ম্যাচের বড় জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা খেলতে নামে আগের ম্যাচের পয়েন্ট খোয়ানোর হতাশা নিয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফ্লাড লাইটের আলোয় মুখোমুখি হয় দুই দল। কিন্তু মাঠে নেমেই বিপাকে পরে আবাহনী। শেখ রাসেলের জার্সিও নীল এবং আবাহনী খেলতে নামে নীল জার্সি পরে। শেখ রাসেলের ফুটবলাররা অবজেকশন জানায়। কিন্তু রেফারি শুরুতে পাত্তা দেয়নি। পরে দ্বিতীয়ার্ধে জার্সি পাল্টে হলুদ জার্সি গায়ে খেলতে নামে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু লাভ হয়নি। উল্টো দুই অর্ধের দুই গোলে হেরে যায়। ম্যাচের শুরু থেকেই অসাধারণ আক্রমণে মাঠ মাতিয়ে রাখে দুদল। প্রথম সুযোগ সৃষ্টি করে আবাহনী। ৭ মিনিটে মাঠের বা প্রান্ত থেকে রুবেল মিয়ার নেওয়া ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ১১ মিনিটে রায়হান হাসানের আরেকটি শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ২৩ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় স্বাগতিক শেখ রাসেল। কিন্তু ‘লোকাল বয়’ বিপলুর শটও পোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে যায়। হতাশা কাটিয়ে ২৪ মিনিটে আনন্দে মেতে ওঠে শেখ রাসেলের শিবির। ডান প্রান্ত থেকে দলের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার  অ্যালেক্স রাফায়েল সিলভার দুর্দান্ত মাইনাসে ডি-বক্সের ভিতর মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার রাফায়েল ওডোইন (১-০)। উচ্ছ্বাসে মেতে থাকতে থাকতেই ফের শট নেন ব্রাজিলিয়ান অ্যালেক্স রাফায়েল। তবে নির্দিষ্ট ঠিকানা পায়নি বলটি। পিছিয়ে পরে আবাহনী সমতা আনতে মড়িয়া হয়ে ওঠে। ৪৩ মিনিটে ওয়ালী ফয়সালের অসাধারণ ফ্রি কিক দারুণভাবে প্রতিহত করেন শেখ রাসেলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। দুর্ভাগ্য আবাহনীর প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে। ওয়ালির মাইনাসে তপু বর্মণের দুর্দান্ত হেড রানাকে পরাস্ত করলেও সাইড বারে লেগে ফিরে এলে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় শেখ রাসেল। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ গোলে।

দ্বিতীয়ার্ধ্বে জার্সি বদল করে হলুদ রঙের জার্সিতে মাঠে নামে আবাহনী। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও বহু আরাধনার গোলের দেখা পায়নি। বিপরীতে কাউন্টার অ্যাটাকে ৮৫ মিনিটে গোল করে আবাহনীর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন অ্যালেক্স রাফায়েল সিলভা।  ডি বক্সের বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে দারুণভাবে তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল নিয়ে যান ডান প্রান্তে। এরপর আলতো শটে গোলরক্ষকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান অ্যালেক্স রাফায়েল (২-০)। এই জয়ে শিরোপা পুরোপুরি টিকে থাকল শেখ রাসেলের।

 

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর