সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই জায়ান্টের বেহাল দশা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুই জায়ান্টের বেহাল দশা

বাংলাদেশের জায়ান্ট দুই দল। মোহামেডান ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের ফুটবলে অবদান ভোলবার নয়। দেশের অনেক খ্যাতিমান বের হয়েছে দুই দল থেকে। ক্রীড়াঙ্গনে মোহামেডান ও আবাহনীকে এক সময়ে দুই প্রধান বলা হলেও গোপীবাগের ব্রাদার্সেরও জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। শিরোপা ছাড়া তিন দলের কোনো কিছু ভাবার কথা নয়। অথচ আবাহনী একের পর এক শিরোপার উৎসবে মাতলেও মোহামেডান ও ব্রাদার্সের সংকটাপন্ন অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে দুই দল লিগ জিততে পারছে না। মোহামেডান সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০২ সালে। আর ব্রাদার্স ২০০৫-২০০৬ মৌসুমে।

চলতি পেশাদার লিগে আবাহনী মজবুত অবস্থানে থাকলেও দুই দল আছে রেলিগেশনের শঙ্কায়। ১৩ দলের মধ্যে ৭ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান আছে ১০-এ। আর সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলে ব্রাদার্স ৩ পয়েন্টে সবার নিচে। ভাবা যায়, যারা এক সময়ে ট্রফি ছাড়া কিছুই বুঝতো না তারাই কিনা পেশাদার লিগে টিকে থাকবে কিনা দুশ্চিন্তায় আছে। ১৭ বছর হতে চলল লিগে মোহামেডানের শিরোপার দেখা নেই। অথচ পেশাদার লিগে ১০ আসরে আবাহনী কিনা হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ছয় বার চ্যাম্পিয়ন। এবারও সেই পথে হাঁটছে তারা। প্রথম বিভাগ লিগে ব্রাদার্সের আবির্ভাব ঘটে চমক দিয়ে। ১৯৭৫ সালে এক ঝাঁক তরুণ ও নতুন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দল পরাজিত করে দেশসেরা খেলোয়াড় নিয়ে গড়া আবাহনীকে। যা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। সেই থেকে ব্রাদার্স ফুটবলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সেলিম, নান্নু, বাবলু, মোহসিন, লাভলু, বাবুল, মিন্নু, টুটুল, শরিফ, নাসিররা অপরিচিত থেকে তারকা বনে যান। লিগে রানার্সআপ, ফেডারেশন কাপ ও ডামফা কাপে শিরোপা জিতলেও ২৯ বছর পর তারা স্বপ্নের লিগ শিরোপা জিতে।

মোহামেডানের পরিচয় তো নতুন করে বলার নেই। কত ট্রফি যে জিতেছে তার হিসাব মেলানো মুশকিল। সেই দল কিনা এখন ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। পেশাদার লিগে প্রথম তিন আসরে রানার্সআপ হলেও এরপর থেকে শক্তিশালী দলই গড়তে পারছে না। জয় পাওয়াটাই এখন যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এখন ড্র করলে বিজয়ের উৎসবে মাতে খেলোয়াড়রা। কি- বেহাল দশা ঐতিহ্যবাহী দলটির। এ ব্যাপারে কথা হচ্ছিল দলের সাবেক তারকা গোলরক্ষক ছাইদ হাসান কাননের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত যে মোহামেডানে খেলেছি এবং দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। ফুটবলারের স্বীকৃতিটা এসেছে সাদা-কালোর জার্সি জড়িয়ে। সেই প্রিয় দলের করুণ অবস্থা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। বাইরে বের হলে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। সবাই জিজ্ঞাসা করে মোহামেডানের এমন করুণ পরিণতি কেন? কি যে বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আগে আমরা ড্র করলে সমর্থকদের ভয়ে রাস্তায় বের হতে পারতাম না। এখন ড্র করে মোহামেডানের খেলোয়াড়রা মাঠে উৎসবে নাচে। তা আবার পত্রিকায় ছাপা হয়। দীর্ঘদিন ধরেইতো এক কমিটি দয়িত্বে আছে। এই ব্যর্থতার দায়ভার তাদেরকে নিতে হবে।’

কানন বলেন, ‘আমরা যখন খেলতাম তখন কোনো ম্যাচে হারলে বা ড্র করলে পরের দিন এসে পিন্টু ভাই, প্রতাপ দা, টিপু ভাই, কায়কোবাদ ভাই আরও অনেকে আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন। উৎসাহ দিতেন। সকাল বেলায় চলে আসতেন কর্মকর্তারা। কি যে সময় ছিল বলে শেষ করতে পারব না। মোনেম, মনিরুল হক চৌধুরী, আফতাব, আকমল, হেলাল, তানভীর ভাইদের মতো শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা ক্লাব পরিচালনা করতেন। এখন কি সেই মানের কর্মকর্তা ক্লাবে আছেন? ক্লাবের স্থায়ী সদস্য অথচ কখনো কোনো প্রয়োজনে কেউ আমাকে বা অন্য সাবেক খেলোয়াড়দের ডাকে না। রেলিগেশনে লড়ছে। ভয় লাগে মোহামেডান কি ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরোধ করার জন্য কেউ কি নেই?’

সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু। ব্রাদার্সের শুধু তারকা ফুটবলারই ছিলেন না। দলের প্রশিক্ষকও ছিলেন। ব্রাদার্সের ফুটবল টিমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তার সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘ব্রাদার্স আমার রক্তে মিশে গেছে। দলের সাফল্যে যেমন গর্বে বুক ভরে যায়। তেমনি ব্যর্থতায় চোখে পানি আসে। এবার শুধু নয়, কয়েক বছর ধরে ফুটবলে আমাদের অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকায় ব্রাদার্স সবার নিচে। শক্তিশালী দল গড়তে অর্থ বড় একটা ফ্যাক্টর। তাই ব্রাদার্স শিরোপা জেতার মতো দল গড়তে পারছে না। তাই বলে রেলিগেশন ফাইট। এই লজ্জা লুকাবো কীভাবে?’

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর