শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেলের জয়

মোহামেডানকে নিয়ে ছেলেখেলা আবাহনীর

আসিফ ইকবাল

বসুন্ধরা কিংস-শেখ রাসেলের জয়

বৃষ্টিতে মাঠের বেহাল দশা। তবু খেলা হয়েছে। ব্রাদার্সকে হারিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কিংস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অনুপযুক্ত মাঠও বসুন্ধরা কিংসের জয় ঠেকাতে পারেনি। বাধার দেওয়াল হতে পারেনি ঢাকা আবাহনী, শেখ জামালের মতো শক্তিশালী দলগুলো। অস্কার ব্রজোনের সুচারু কোচিংয়ে অসাধারণ ফুটবল খেলে ড্যানিয়েল কলিনড্রেস, বখতিয়ার দুইশোভেকভ, মার্কোাস ভিনিসিয়াস দ্য কস্টা, মতিন মিয়ারা প্রতিপক্ষ দলগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গতকাল বৃষ্টিভেজা মাঠে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন। সন্ধ্যায় ফ্লাড লাইটের আলোয় গোপীবাগের দলটির বিপক্ষে দুই বিদেশি বখতিয়ার ও কলিনড্রেসের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বসুন্ধরা কিংস। জয়ের রথ ছুটিয়ে দলটি অষ্টম ম্যাচে সপ্তম জয় তুলে ২২ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার ফুটবলে সবার ওপরে অবস্থান নিয়েছে স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়নরা। বিকালে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে মোহামেডানকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আবাহনী। ৯ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অবস্থান করছে আকাশি-হলুদ শিবির। ৩ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং মোহামেডানের পয়েন্ট ৫।

ফেডারেশন কাপ রানার্স আপ ও স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস প্রিমিয়ার ফুটবলে শুরু থেকেই দুরন্ত খেলছে। টানা পাঁচ ম্যাচ জেতার পর ষষ্ঠ ম্যাচে লিগের নবাগত দলটি প্রথম পয়েন্ট হারায়। টিম বিজেএমসির সঙ্গে ড্রয়ের পর ব্রুজোনের দলটি ফের জয়ের রাস্তায় ওঠে আরামবাগকে হারিয়ে। গতকাল দুই অর্ধের দুই গোলে হারায় ব্রাদার্স ইউনিয়নকে। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রেখেও প্রথম গোলের জন্য বিশ্বকাপ তারকা কলিনড্রেসের দলকে গোল পেতে অপেক্ষায় থাকতে হয় ৩৪ মিনিট পর্যন্ত। ডি বক্সে জটলায় দাঁড়ানো কিরগিজস্তানের মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুইশোভেকভ চকিত গোল করে ব্যবধান ১-০ করেন। এরপর অবশ্য গোপীবাগের দলটি চেষ্টা চালায় ম্যাচে ফিরতে। কিন্তু বসুন্ধরার আটোসাঁটো রক্ষণভাগের সামনে এসে খেই হারিয়ে ফেলতে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরা আক্রমণ ধার বাড়িয়ে দেয়। শুধু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাচ্ছিল না পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দলটি। তার পরও কলিনড্রেস, মার্কোস ভিনিসিয়াদের সাঁড়াশি আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে ব্রাদার্সের রক্ষণভাগ। গোল না পেলেও থেমে ছিল না বসুন্ধরার আক্রমণভাগ। অবশেষে ৮৯ মিনিটে গোপীবাগের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন দলের বিশ্বকাপ তারকা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। ডি-বক্সের মাথা থেকে মার্কোসের কাট ব্যাকে ডান পায়ের জোরালো ভলিতে ব্যবধান ২-০ করেন কলিনড্রেস।    

কী দৈন্য চেহারা ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম সফল ক্লাব মোহামেডানের! কোটি কোটি সমর্থকের প্রাণের ক্লাবের কোনো কোচ নেই। এমন যাচ্ছেতাই অবস্থার সাদাকালো শিবির এখন রেলিগেশন এড়াতে মাঠে নামছে। গতকাল বৃষ্টিস্নাত বিকালে খেলতে নেমেছিল প্রতিপক্ষ চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে। দেশের ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল আবাহনী বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভেজা মাঠে হেসে খেলে ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মোহামেডানকে। বড় ব্যবধানে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আকাশি হলুদ শিবির জিতেও আক্ষেপে পুড়ছে ৪৫ বছর আগের বড় ব্যবধানে হারের প্রতিশোধ নিতে না পেরে। ১৯৭৫ সালে আবাহনীকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান। সেই সাদাকালো শিবিরের বিপক্ষে গতকাল প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও সফলতা পায়নি ধানমন্ডিপাড়ার দলটি। অবশ্য ২০০৬ সালে স্বাধীনতা কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৫-১ গোলে মোহামেডানকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল আবাহনী। দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে আবাহনী উচ্ছ্বাসে মাতে ৩৭ মিনিটে। ডি-বক্সের মাথা থেকে নাবিব নেওয়াজ জীবনের মাটি কামড়ানো শট গোলরক্ষক সারোয়ারকে পরাস্ত করলেও সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে আবাহনীকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে চিজোবা। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই একাধিক পরিবর্তন করে খেলতে নামে। ৫৭ মিনিটে দারুণ ভলিতে ব্যবধান ২-০ করেন কোরিয়ান মিডফিল্ডার মিনহিওক কো। ৬৭ মিনিটে রুবেল মিয়ার কর্নার বেলফোর্ট বুক দিয়ে ঠেকিয়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো সানডেকে দেন। সানডে কালবিলম্ব না করে ব্যবধান ৩-০ করেন।

এদিকে সিলেটে নিজ ভেন্যুতে জিতেই চলেছে আরেক ফেবারিট শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। গতকাল সন্ধ্যায় তারা সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে পরাজিত করে নোফেলকে। এ জয়ে ৮ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে তৃতীয় স্থানে আছে তারা। বিজয়ী দলের রাফায়েল উদোরা ও আজিজভ গোলগুলো করেন। বসুন্ধরা কিংসের মতো শেখ রাসেলও এখন পর্যন্ত লিগে কোনো ম্যাচ হারেনি। শেখ জামাল ও সাইফ স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে ড্র করে মূল্যবান ৪ পয়েন্ট নষ্ট করেছে। ম্যাচ জিতলেও শেখ রাসেলের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে, আগামী ম্যাচে তাদের খেলোয়াড় অ্যালেক্স রাফায়েল মাঠে নামতে পারবেন না। গতকাল ৭০ মিনিটে দুই হলুদ কার্ড দেখানোয় তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। বাকি সময়ে শেখ রাসেল ১০ জন নিয়ে খেলে।

সর্বশেষ খবর