রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহের মহসিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহের মহসিন

মোহাম্মদ মহসিন (জন্ম : ১৯৪৮, মৃত্যু : ২০১৯)

হকির মাঠে কি দুর্দান্ত দাপট না দেখিয়েছেন। জাদুকরি স্টিক ওর্য়াকে প্রতিপক্ষদের দাবিয়ে দলকে কতই না জয় এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশের যে কজন হকি তারকা ছিলেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদ মহসিনের নৈপুণ্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাইট ব্যাক পজিশনে খেলে দর্শকদের মন জয় করেছেন। হকির অকুতোভয় সৈনিক শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন। দীর্ঘদিন জটিল রোগের ভুগে মহসিন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। হকির কারিগর প্রতিষ্ঠান বলে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী আরমানীটোলা স্কুল থেকে মহসিনের হকিতে হাতে খড়ি। সেই থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ঢাকা লিগে কম্পাউন্ড স্পোর্টিং থেকেই তার ক্যারিয়ার শুরু। মাহুতটুলির পর সত্তর দশকে ঢাকা আবাহনীর শুরু থেকেই খেলেছেন মহসিন।

বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কিংবদন্তি খেলোয়াড় আবদুস সাদেক, ইব্রাহিম সাবের ও মহসিনকে বলা হতো হকির ত্রিরত্ন। মহসিন রাইট হাফ, সাদেক সেন্টার হাফ, ইব্রাহিম সাবেরর পজিশন ছিল লেফট হাফে। তিন জনার জাদুকরি নৈপুণ্যে দর্শকরা এতটাই মুগ্ধ হয়ে যেতেন যে বলা হতো তিন জন এক দলে খেললে বাকিদের আর প্রয়োজন পড়ে না।

সাদেক বন্ধু মহসিনের স্মৃতিচারণ করে বললেন, ‘এখনো আমার চোখে ভাসে মহসিনের জাদুকরি স্টিক ওয়ার্ক। বন্ধু বা দীর্ঘদিন এক সঙ্গে খেলেছি বলে বলবো না। ওর মানের খেলোয়াড় আমি খুব কমই দেখেছি। ওপাশে ছিল বলে আমার পক্ষে খেলাটা সহজ হয়ে যেত। যথেষ্ট পরিশ্রম করে খেলতো, এক সঙ্গে অনেক ক্লাব পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলেছি। মহসিন শুধু বড় মানের খেলোয়াড় ছিল না ওর বিনয়ী স্বভাব সবাইকে মুগ্ধ করে ছাড়তো। মহসিন নেই আমি ভাবতেই পারছি না। ওর মৃত্যুতে বাংলাদেশের হকির বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’

মহসিন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব আদরের। খেলার মাঠ থেকে ডেকে বঙ্গবন্ধু তার নিরাপত্তার রক্ষীর দায়িত্ব দেন। মহসিন চমৎকার গাড়ি চালাতেন। তাই বঙ্গবন্ধু যেখানে গেছেন অধিকাংশ সময় ড্রাইভ করতেন মহিসন। বঙ্গবন্ধু সেই স্নেহের মহসিন চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

মহসিনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। দীর্ঘদিনের সুখ-দুখের সঙ্গী আবাহনী ক্লাবে বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয় মানুষটিকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে জানাজায় ঢল নেমেছিল।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক অভিজ্ঞ সংগঠক হারুনুর রশিদ, আবদুস সাদেক, বশির আহেমদ, ইব্রাহিম সাবের, এহতেশাম সুলতান, নুরুল ইসলাম, প্রতাপ শংকর হাজরা, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, সাজেদ এ এ আদেল, মো. ইউসুফ আলী, মনিরুজ্জামান পিনা, মাজেদ, আয়েস, লুলু, গাফফারসহ ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই এসেছিলেন আবাহনী ক্লাবে। বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে মহসিনের দাফন সম্পন্ন হয়।

মহসিনের পরিবারকে বলা হয় হকির পরিবার। বড় ভাই লাইম, ছোট ভাই এহসান নাম্মি ছিলেন তারকা খেলোয়াড়। নাম্মি আবাহনী ছাড়াও জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেন। আয়েস, কায়েস, লুল, টুক্কু চপল হলেন মহসিনের আপন মামাতো ভাই। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে মহসিন ছিলেন জাতীয় দলের প্রশিক্ষক। ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান মহসিন। স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১  মেয়ে রেখে যান মহসিন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট কমিউনিটি, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ক্রীড়া লেখক সমিতি, গোপীবাগ ফ্রেন্ডর্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শোক প্রকাশ করেছে।

সর্বশেষ খবর