সোমবার, ৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মারিয়াদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মারিয়াদের বিশ্বকাপের স্বপ্ন

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে রানার্স আপ বাংলাদেশ নারী দল -বাফুফে

পুরুষ ফুটবলে কোনো সুখবর নেই। জুনিয়ররা মাঝে মধ্যে ঝলক দেখালেও জাতীয় দল অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোনো টুর্নামেন্টেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা চার আসরে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কি হতে পারে। মেয়েরাই দেশের ফুটবলে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। আন্তর্জাতিক আসরে মেয়েদের পদার্পণ বেশিদিনের নয়। অথচ একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছে। উড়াচ্ছে লাল সুবজের বিজয়ের পতাকা।

সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ বা ১৮ টুর্নামেন্টে উপহার দিয়েছে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। যদিও এখনো মূল চ্যাম্পিয়নশিপে নারী জাতীয় দল ট্রফি দিতে পারেনি। এবার সেই স্বপ্ন পূরণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সাফ কেন, মারিয়া, আঁখি, তহুরা খাতুন, সামসুন্নাহার, মনিকা চাকমাদের চোখ বিশ্বকাপে। মিয়ানমারের অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। চলতি বছর সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডে বসবে চূড়ান্ত পর্বের আসর। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে চূড়ান্ত পর্বে খেলাটা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। এর আগেও মারিয়াদের খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে এবারে লড়াইটা ছিল বড় কঠিন। গ্রুপে চীন, মিয়ানমারের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তারপর আবার অচেনা ফিলিপাইনের সঙ্গে কী করে দুশ্চিন্তায় ছিল ফুটবল প্রেমীরা। সত্যি বলতে কি গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের পক্ষে তা অসম্ভবই বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। চীন ও মিয়ানমার দুটো দলই চ্যাম্পিয়ন রানার্স হওয়ার সম্ভাবনায় ছিল বেশি।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের অভিধানে অসম্ভব বলে কিছু নেই তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল। চ্যাম্পিয়ন না হোক রানার্স আপ হয়ে মারিয়ারা ঠিকই থাইল্যান্ডে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়ে গেলেন। এর ফলে মারিয়া, আঁখি চোখ বিশ্বকাপের দিকে। কেননা চূড়ান্ত পর্বের সেরা তিন দল ২২২০ সালে অনুষ্ঠিত ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে। এশিয়ার সব শক্তিশালী দল চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। সেখানে সেরা তিনে থাকাটা কঠিনই। তবে মারিয়ার নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে এই অসম্ভবকেও সম্ভবে রূপান্তারিত করতে পারবে।

মিয়ানমারের বাছাই পর্বে প্রথম ম্যাচে ফিলিপাইনকে ১০-০ গোলে বিধ্বস্ত করে তহুরারা জানিয়ে দেয় চূড়ান্ত পর্বে খেলার সামর্থ্য তাদের আছে। মিয়ানমারকে ১-০ গোলে হারিয়ে তা বাস্তবে রূপ দেয়। মেয়েদের যতই অগ্রগতি হোক না কেন মিয়ানমারের মতো শক্তিশালী দলকে হারাবে বিশ্বাসই করা যায়নি। অনেকে বরং শঙ্কায় ছিল মারিয়ারা গোলের বন্যায় ভেসে যায় কি না। পুরুষ জাতীয় দলের যে মান তাতে এখন মিয়ানমারকে হারাবে তা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সেখানে কি না কিশোরীরা বিরল রেকর্ড গড়ল। এই জয় বাংলাদেশের ফুটবলে বিশাল প্রাপ্তিই বলা যায়।

আশ ছিল চীনের প্রাচীর ভেঙে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বেন তহুরারা। গড়বে নতুন এক ইতিহাস। না তা আর হলো না। ভাঙা গেল না চীনের প্রাচীরের মতো শক্ত রক্ষণভাগ। ০-৩ গোলে হেরে মাঠ ছেড়েছে লাল-সবুজের দল। তবে লড়াই করেছে সমান তালে। সুযোগ হাত ছাড়া করায় গোলের দেখা মেলেনি বাংলাদেশের। মিয়ানমারে এই সাফল্য মারিয়াদের অনুপ্রাণিত করবে মূল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে।

সর্বশেষ খবর