শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাহমুদুল্লাহর হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির হাতছানি

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত প্রথম দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মাহমুদুল্লাহর হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির হাতছানি

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেট বৃষ্টিতে বাধাগ্রস্ত হয়নি- এমন নজির খুবই কম। দেশটিতে এবার পঞ্চমবার সফর করছে বাংলাদেশ। প্রতিটি সিরিজের কোনো না কোনো টেস্ট বিঘ্নিত হয়েছে বৃষ্টিতে। গতকাল ওয়েলিংটন টেস্ট মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির স্রোতে ভেসে গেছে প্রথম দিনটি। টস করতে পারেননি বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। তাই পরিত্যক্ত হয়েছে প্রথম দিনটি। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আজ দ্বিতীয় দিন খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে। সাধারণত সেখানে টেস্ট শুরু হয় বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়। বৃষ্টি বাধায় পড়লেও টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে হাতছানি দিচ্ছে অনন্য এক রেকর্ড। ওয়েলিংটনে যদি তিন অঙ্কের জাদকুরী ইনিংস খেলতে পারেন তিনি, তাহলে তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়বেন মাহমুদুল্লাহ। নাম লেখাবেন স্যার গ্যারি সোবার্স, সুনীল গাভাস্কারদের মতো গ্রেটদের তালিকায়।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে নিউজিল্যান্ড যদি হয় ভীতিকর এক নাম, তাহলে মাহমুদুল্লাহর কাছে সুখের আরেক নাম। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা তিন সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড হয়েছে এই ব্যাটিং শিল্পীর। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরির পর ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেন। এরপর চলতি সিরিজের গত টেস্টে আবারও খেলেন তিন অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারের এমন কীর্তি নেই। অবশ্য দেশ সেরা ব্যাটসম্যান তামিমের যে রেকর্ডটি রয়েছে, সেটা আবার নেই কারও। একমাত্র টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নাম লিখেছেন গাভাস্কার, সোবার্স, হাবার্ট সাটক্লিফ, ওয়ালি হ্যামন্ডদের মতো গ্রেটদের কাতারে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানটি ৫৭টি টেস্টের ১১০ ইনিংসে ৩৮.৯৮ গড়ে রান করেছেন ৪২৪৯। সেঞ্চুরি ৯টি। যার একটি আবার ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১০ সালে লর্ডসে ১০৩ রানের ইনিংস খেলার পর ম্যানচেস্টারে করেছিলেন ১০৮ রান। টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেও হ্যাটট্রিক করতে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে আরও চার বছর। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিলের মধ্যে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করেন বাঁহাতি ওপেনার। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। খুলনায় প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ রান করেন। মিরপুরে পরের টেস্টে ফের ১০৯ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৫ রান। বিশ্বকাপের পর খুলনায় খেলেন অতিমানবীয় ২০৬ রানের ইনিংস। পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ও ইমরুল উদ্বোধনী জুটিতে গড়েন ৩১৩ রানের রেকর্ড। যা এখন পর্যন্ত প্রথম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। বাঁহাতি ওপেনার সেঞ্চুরি করেছেন হ্যামিল্টনেও। ওয়েলিংটনে সেঞ্চুরি করলে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করবে।

হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য সরকারও। সৌম্যর অভিষেক সেঞ্চুরি এবং মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা। দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিটি আবার তার ৪৪ টেস্ট ক্যারিয়ারের চার নম্বর। টাইগার অধিনায়ক প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০১০ সালে, হ্যামিল্টনে। এরপর দ্বিতীয় সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ৮ বছর। ২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ব্যর্থতার খোলস ভাঙেন। চট্টগ্রামে পরের টেস্টে সেঞ্চুরি পাননি। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরের পরে টেস্টে ফের মেতে ওঠেন সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাসে। ১৩৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে সেঞ্চুরির ট্রাকে উঠে আসেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে। প্রথম থেকে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির জন্য যেখানে অপেক্ষা করতে হয়েছে আট বছর। সেখানে শেষ তিন সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন চার টেস্টে। ওয়েলিংটনে এবার সেঞ্চুরি করলেই নাম লিখবেন গ্রেটদের কাতারে। নিউজিল্যান্ড যেহেতু মাহমুদুল্লাহর পয়মন্ত দেশ, তাহলে স্বপ্ন দেখতেই পারেন!

সর্বশেষ খবর