শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভূকম্পের শহরে শেষ টেস্ট

মেজবাহ্-উল- হক

ভূকম্পের শহরে শেষ টেস্ট

ক্রাইস্টচার্চে ফিরছেন মুশফিকুর রহিম

ভূ-কম্পন নামটা শুনলেই যেন আঁতকে ওঠেন ক্রাইস্টচার্চবাসীরা! ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুঃস্বপ্নের ভোরের কথা কি কখনো ভুলতে পারবেন তারা? কাক ডাকা ভোরে শহরবাসী গভীর ঘুমে বিভোর। ঘড়ির কাঁটায় যখন ৪টা বেজে ৩৫ মিনিট ঠিক তখনই আঘাত হানে ৭.১ মাত্রার মরণঘাতী ভূমিকম্প। মুহূর্তের মধ্যে বাড়ি-ঘর মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

বিভীষিকাময় সেই ভোরের ক্ষত পূরণ হতে না হতেই ৬ মাসের মধ্যে আরেক ধাক্কা! ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আবারও মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে হাজির আরেক ভূ-কম্প। এবার মাত্রা খুব বেশি নয়- ৬.৩। দিনের আলোয় বলে (বেলা ১২টা ৫১ মিনিট) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তুলনামূলক কম। তবে প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধাক্কায় যেন রীতিমতো নিঃস্ব করে দেয় ক্রাইস্টচার্চবাসীকে।

দুই ভূমিকম্পে মোট ১৮৫জন মানুষ প্রাণ হারায়। ছোট-বড় দেড় হাজার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোড়া ভূমিকম্পের চিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রাইস্টচার্চবাসী।

এরপর ২০১৭ সালের সেই ফেব্রুয়ারিতে আরেক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় নগরবাসী। এবার আঘাত হানে দাবানল। শহরের ২,০৭৬ হেক্টর জমি পুড়ে যায়। সাত বছরের মধ্যে ভয়াবহ তিন দুর্যোগের পর ক্রাইস্টচার্চ হয়ে যায় আতঙ্কের নগরী। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিউজিল্যান্ডের এই শহরে এখনো আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করছেন মানুষ। তবে বৃত্তশালীরা আর আতঙ্কের এই শহরে থাকতে চান না। তারা বসবাসের জন্য নিউজিল্যান্ডের অন্য শহর বেছে নিচ্ছেন।

শুধু নিউজিল্যান্ডের কাছে নয়, বাংলাদেশ দলের কাছেও যেন ক্রাইস্টচার্চ এখন আতঙ্কের নগরী হয়ে গেছে। এই শহরেই ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে হেরে সিরিজ হাতছাড়া! এর আগের সফরে (২০১৭ সালে) এই শহরেই শেষ টেস্টে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরে হোয়াইটওয়াশ নিশ্চিত হয়েছিল টাইগারদের। সেই ক্রাইস্টচার্চেও এবারও টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এবার হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে লাল-সবুজরা?

কী ওয়ানডে, কী টেস্টের আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো ম্যাচেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ! এই সফরেও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। আর টেস্ট সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে হ্যামিল্টন ও ওয়েলিংটনে ইনিংস ব্যবধানে হার। তাই ক্রাইস্টচার্চে ড্র করতে পারাটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য।

অবশ্য টাইগারদের যে পারফরম্যান্স তাতে ড্র-তো দূরের কথা টেস্ট পঞ্চম দিন পর্যন্ত গড়াবে কিনা তা নিয়েই সংশয় থাকার কথা! কেন না আগের ম্যাচের প্রথম দুই দিন বৃষ্টির কারণে কোনো বলই মাঠে গড়ায়নি। তারপরও বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। বাকি তিন দিনও ঠিকমতো খেলতে পারেননি টাইগাররা। ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে ব্যর্থতার খাতায় নাম লিখিয়েছেন বোলাররাও।

তবে ক্রাইস্টচার্চে খানিকটা আশাবাদী হতেই পারে বাংলাদেশ! ক্রাইস্টচার্চে খেলা একমাত্র টেস্টে টাইগাররা ‘তুলনামূলক’ লড়াই করেছিল। নিউজিল্যান্ড জিতলেও তাদের খেলতে হয়েছিল চতুর্থ দিন পর্যন্ত। সেই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন সৌম্য সরকার। প্রথম ইনিংসে তিনি ৮৬ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও করেছিলেন ৩৬ রান। তবে আতঙ্ক দুই পেসার টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে। দুজনে মিলেই সেই টেস্টে নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট। এবারও তারা ফর্মের তুঙ্গে। তবে খুশির খবর হচ্ছে, ফর্মে ক্রাইস্টচার্চে ফিরছেন সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। এখন দেখা যাক, ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ এর সঙ্গে বাংলাদেশের ভাগ্যও ফেরে কিনা!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর