রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

উইন্ডিজের টানা দ্বিতীয়

মেজবাহ্-উল-হক

উইন্ডিজের টানা দ্বিতীয়

১৯৭৫ বিশ্বকাপের মতো ১৯৭৯ সালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা উপহার দেন অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড

১৯৭৫ সালে প্রথম আসরে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৭৯ সালে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবারও ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন ক্লাইভ লয়েড। ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৯২ রানে হারিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন ক্যারিবীয়রা। ৭৫-এর মতো ৭৯-এ একই ফরম্যাটে খেলা হয়। ৬০ ওভারের ম্যাচের এই টুর্নামেন্টে আটটি দল অংশগ্রহণ করে। এই আসরেও এখনকার দিনের টেস্ট ক্রিকেটের মতো খেলোয়াড়দের জার্সির রং ছিল সাদা এবং বল ছিল লাল রঙের।  

 

ভিভ রিচার্ডসের ক্যারিশমা

এখনকার মতো তখন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দিলে নিশ্চিতভাবে তা পেতেন ভিভ রিচার্ডস। দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে করেছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৭ রান। ক্যারিবীয় তারকা বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত। তবে ফাইনাল ম্যাচটির জন্য ভিভকে আলাদাভাবে মনে রেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ১৯৭৯ সালের ২৩ জুন শিরোপা আশায় লর্ডসে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন ইংলিশরা। কিন্তু তাদেরকে দেখতে হলো ভিভের ক্যারিশমা। বাইশগজে ব্যাট হাতে নেমে খেললেন অপরাজিত ১৩৮ রানের ইনিংস। তারপর দাপটের সঙ্গে করলেন ১০ ওভার বোলিং। যদিও ফাইনালে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন গার্নার। তবে ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ের জন্যই ‘ম্যান অব দ্য ফাইনাল’ পুরস্কার জেতেন ভিভ।

 

সর্বকালের সেরা দল

বিশ্বকাপের প্রথম আসরেও শিরোপা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ৭৯-এর বিশ্বকাপ দলটি সর্বকালের সেরা। যে দলে প্রত্যেক সদস্যই এক একজন মহাতারকা। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন সেরা দল আর দেখা যায়নি। নেতৃত্বে ছিলেন ক্লাইভ লয়েডই। ব্যাটিংয়ের টপ অর্ডারে গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হাইন্ডস, ভিভ রিচার্ডস, কালিচরণ। মিডল অর্ডারে ছিলেন ক্লাইভ লয়েড নিজে, এছাড়া কলিস কিং এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ডেরিশ মারে। দলের চার বোলার হচ্ছেন- অ্যান্ডি রোবার্টস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং ও কলিন ক্রফট। 

 

সেরা গর্ডন গ্রিনিজ

বাংলাদেশের ক্রিকেটামোদীদের কাছে অতি পরিচিত নাম গর্ডন গ্রিনিজ। ১৯৯৭ সালে ক্যারিবীয় এই তারকার কোচিংয়েই টাইগাররা মালয়েশিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। তবে ক্রিকেটবিশ্বের কাছে গ্রিনিজ নিজেকে ব্যাপকভাবে উপস্থাপন করেছেন ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে দুরন্ত ব্যাটিং শৈলী দেখিয়ে। সে আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটসম্যান। ৪ ম্যাচে ৮৪.৩৩ গড়ে করেছিলেন ২৫৩ রান। এই চার ম্যাচের মধ্যে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

 

হেনড্রিকের ১০ উইকেট

আসরে সেরা বোলার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন ইংল্যান্ডের মাইক হেনড্রিক। ৫ ম্যাচে তিনি ১৪.৯০ গড়ে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশ। এই আসরে ৯টি করে উইকেট নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সেরা হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের ব্রায়ান ম্যাককেইন, পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল ও ইংল্যান্ডের আরেক বোলার ক্রিস ওল্ড। তবে আসরে সবচেয়ে বেশি দাপট ছিল ক্যারিবীয় বোলারদের।

 

নতুন দল কানাডা

প্রথম আসরে খেলেছিলেন পূর্ব আফ্রিকা। কিন্তু ১৯৭৯ সালে তারা বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। ছয় টেস্ট খেলুড়ে দল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান) ছাড়া বাকি দুই দলকে আইসিসি ট্রফিতে খেলে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করতে হতো। সেবার আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা, আর রানার্সআপ হয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন কানাডা। পূর্ব আফ্রিকা সুযোগ না পাওয়ায় ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে আফ্রিকা মহাদেশের কোনো প্রতিনিধি ছিল না।

উপমহাদেশের প্রথম দল নকআউটে

বিশ্বকাপের প্রথম আসরের মতো এই আসরেও উপমহাদেশের তিন দল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অংশগ্রহণ করেছিল। তবে প্রথমবারের মতো নকআউটপর্ব নিশ্চিত করে পাকিস্তান। আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে নবাগত কানাডাকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে ৮৯ রানে হারিয়ে গ্রুপ-এ থেকে রানার্সআপ হয়েই নিশ্চিত করে নকআউট। গ্রুপ-বি তে ভারতকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল শ্রীলঙ্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় বাড়তি পয়েন্টও পেয়েছিল। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় গ্রুপে তৃতীয় হয়েই বিদায় নিতে হয়। ভারতের নামের পাশে কোনো পয়েন্টই ছিল না। উপমহাদেশের একমাত্র দল হিসেবে পাকিস্তান উঠে যায় নকআউটে।

 

শ্রীলঙ্কার ভারতবধ

তারকা সমৃদ্ধ দল নিয়েই ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপে অংশ নিতে ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছিল ভারত। কিন্তু বিধি বাম! প্রথম ম্যাচ থেকেই ধুঁকতে থাকে ভারতীয়রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তারা হেরে যায় ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সামনেও দাঁড়াতে পারেনি। তবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে সবচেয়ে বড় লজ্জাটা পেয়েছিল সুনীল গাভাস্কার ও কপিল দেবের ভারত। আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোনো রকমে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা শ্রীলঙ্কার কাছে তারা হেরে যায় ৪৭ রানে। সেই ম্যাচে লঙ্কানদের হয়ে ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন দীলিপ মেন্ডিস। ৫৭ বলে খেলেছিলেন ৬৪ রানের ইনিংস। হাঁকিয়েছিলেন তিনটি বিশাল ছক্কাও। 

 

এক নজরে

♦ পূর্ব আফ্রিকা সুযোগ না পাওয়ায় আসরে আফ্রিকা মহাদেশের কোনো প্রতিনিধি ছিল না।

♦ দলীয় সর্বোচ্চ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের- ২৯৩/৬, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, ওভালে।

♦ এককভাবে সর্বোচ্চ রান করেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রিনিজ (২৫৩)।

♦ ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের স্কোর ক্যারিবীয় তারকা ভিভ রিচার্ডসের (১৩৮*)।

♦ সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ ১৬৬, পাকিস্তানের মজিদ খান ও জহির আব্বাস।

♦ সর্বাধিক উইকেট শিকার করেন ইংল্যান্ডের মাইক হেনড্রিক (১০টি)।

♦ সেরা বোলিং ফিগার ৫/২১, অ্যালান হারস্ট (অস্ট্রেলিয়া)।

♦ সবচেয়ে বেশি ডিসমিশাল করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেরিক মারে (৭টি)।

♦ সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেন পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল (৪টি)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর