বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিরোপার প্রতীক্ষায়...

মেজবাহ্-উল-হক

শিরোপার প্রতীক্ষায়...

দুপুরে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে যখন শিলাবৃষ্টি হচ্ছিল তখন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের ড্রাইভিং রেঞ্জে গল্পে মুশগুল জামাল হোসেন মোল্লাহ, বাদল হোসেনসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন তারকা গলফার। তাদের মধ্যে টেনশনের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। গলফাররা বেশ নির্ভার। বঙ্গবন্ধু কাপ গলফ ওপেনের প্রসঙ্গ তুলতেই তাদের মুখ থেকে যেন কথা নয় বরং আত্মবিশ্বাসের ফুলকি ঝড়ে পড়লো।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জামাল বললেন, ‘বাইরে খেলতে খেলতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই ঘরের কোর্সে কত বড় তারকা খেলবে তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমি শিরোপার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তবে খেলাটা গলফ বলেই আগে থেকে কিছু বলা যাচ্ছে না। দেখা গেল একটা শট খুবই বাজে হলে যে কারণে দিনটাই বাজে যেতে পারে।’

আবহাওয়ার কথা ইঙ্গিত করতেই, বাদল হোসেন বললেন, ‘এটা নিয়ে মোটেও ভাবছি না। কেন না আগের এশিয়ান ট্যুরেও আমরা এমন পরিস্থিতিতে খেলেছি। তবে ঘরের কোর্সে শুষ্ক মৌসুমে খেলা হলে আমাদের জন্য বেশি ভালো হতো। তারপরও মন বলছে এবার আমাদেরই কেউ চ্যাম্পিয়ন হবে।’

বাদল কয়েক দিন আগেই এই এশিয়ান ট্যুরের টুর্নামেন্টের জন্য সাভার গলফ ক্লাবে যে প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট হয়েছিল সেখানে রেকর্ড ‘১৯ আন্ডার পার’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আর জামাল তো পিজিটিআই ট্যুরের আসর বেঙ্গল ওপেনে বাজিমাত করে দিয়েছেন সপ্তাহ দুয়েক আগেই।

সব শেষ প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল সকালে পেশাদার ও অপেশাদর গলফার মিলে একদিনের দলীয় একটি টুর্নামেন্ট (প্র-এম) খেলেছেন বাংলাদেশের গলফাররা। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জামালের দল। রানার্সআপ সাখাওয়াত হোসেন সোহেলরা।

‘প্র-এম’ টুর্নামেন্টের পর পরই কথা হয় সোহেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে একদম প্রস্তুত। কোনো বাড়তি চাপ নিচ্ছি না।’ গত বছর মালয়েশিয়ার মাটিতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ট্যুরের শিরোপা জিতেছেন সোহেল। তারপর থেকেই নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কাপ গলফ ওপেনের প্রস্তুতি। এবার তিনি যেকোনো মূল্যে শিরোপা জিততে চান।

আরেক তারকা গলফার দুলাল হোসেনের কণ্ঠ বেশ আত্মবিশ্বাসী শোনাল, ‘এই কোর্সে আমরা সারা বছর খেলি। সেদিক দিয়ে এগিয়ে থাকব আমরাই।’

শিরোপার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত মনে হলো সিদ্দিকুর রহমানকে। সেই ২০১০ সালে প্রথম শিরোপা এবং ২০১৩ সালে দ্বিতীয় এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জিতেছেন দেশসেরা গলফার। তারপর দীর্ঘ বিরতি। তবে এই সময়ের মধ্যে অনেকবারই শিরোপার কাছাকাছি গিয়েছিলেন। ইউরোপিয়ান ট্যুরেও তিনি ক্যারিশমা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু শিরোপার দেখা পাননি। কুর্মিটোলায় অনুষ্ঠিত সব শেষ এশিয়ান ট্যুরের আসরেও তিনি একটুর জন্য শিরোপা জিততে পারেননি। তবে এবার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ছটফট করতে চান না। সিদ্দিকুর বলেন, ‘আসলে কাট পেয়ে প্রাইজমানি জিতেছি অনেক। কিন্তু শিরোপা জিততে না পারার কষ্টটা আছেই। এবার আমি অনেক বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি। আমার সব কিছুই ভালো। এখন দেখা যাক।’ সিদ্দিকুর খুব ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশের প্রত্যাশার ফানুসটা তাকে ঘিরেই। তাই বাড়তি চাপও আছে। ‘ঘরের কোর্সে খেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রত্যাশার চাপ। এটা থাকবেই। তবে আমি মনে করি, এই কোর্সে যদি আমি আমার সেরাটা দিয়ে খেলতে পারি, অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব। এবার আমি আশাবাদী।’

বাংলাদেশের গলফারদের জন্য সমস্যা হচ্ছে আবহাওয়া এবং কুর্মিটোলা কোর্সের ৩ ও ৪ নম্বর হোল। আত্মবিশ্বাস থাকলেও এটা উপেক্ষা করার উপায় নেই যে, বৃষ্টির মধ্যে সচরাচর খেলেন না জামাল-সোহেলরা। আর এশিয়ান ট্যুরের জন্য ৩ নম্বর হোলে ‘এক পার’ কমিয়ে দেওয়ার কারণে মানসিকভাবে অস্বস্তি থাকবে। ৪ নম্বর হোলে থাকতে হয় খুবই সতর্ক। ড্রাইভ শটে একটু এদিক সেদিক হলেই বল অন্য হোলে গিয়ে পড়বে। তখন নিশ্চিত দুই শট পেনাল্টি। আর এই হোলে বেশি সতর্ক থাকতে গিয়েই বেশি ভুল করে বসেন স্থানীয়রা।

সব কিছুর পরও সিদ্দিকুর -জামালদের চোখে-মুখে যে আত্মবিশ্বাস, তাতে অতুক্তি হলেও একথা বলাই যায় ‘এবার কিছু হতে চলেছে!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর