বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

তাদের চোখে দেশের স্বপ্ন

মেজবাহ্-উল-হক

তাদের চোখে দেশের স্বপ্ন

তখন ‘ফ্রন্ট-৯’ হোল-এ খেলা শেষ করে ‘ব্যাক-৯’ হোল-এর দিকে খেলার জন্য যাচ্ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। তপ্ত রোদে ঘামে ভিজে গেছে তার শার্ট। কিন্তু মুখচ্ছবিতে ক্লান্তির ছাপ নেই। দেখে বেশ উজ্জীবিতই মনে হচ্ছিল।

খবর কী? জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, ‘ওয়ান আন্ডার’!

পরিষ্কার করে বললে, একদিনে সব মিলে যে ১৮ হোল-এ খেলা হয় তার মধ্যে অর্ধেক খেলা শেষ করতে পারের চেয়ে মাত্র ১ শট কম খেলেছেন! তারপরও দেশসেরা গলফারের চোখে-মুখে প্রশান্তি। কারণ, কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ‘ফ্রন্ট-৯’ খেলাই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। সেখানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে খেলেছেন। আর এই আত্মবিশ্বাস থেকেই কিনা ‘ব্যাক-৯’ এ ‘৪ আন্ডার’ খেলেছেন। প্রথম রাউন্ডে সব মিলে ‘৫ আন্ডার’ খেলে প্রথম দিনে যৌথভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছেন।

প্রথম দিনে বাংলাদেশি গলফারদের মধ্যে সেরা কিন্তু সাভারের মুয়াজ মোহাম্মদ। তিনি পারের চেয়ে কাল ৬ শট কম খেলেছেন। যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তবে প্রথম দিনে বঙ্গবন্ধু কাপ গলফ ওপেনে শীর্ষে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা গলফার মেভরিচ অ্যান্টক্লিফ। তিনি খেলেছেন ‘৮ আন্ডার’।

সব মিলে বাংলাদেশি গলফারদের জন্য দিনটা ভালোই ছিল। মুয়াজ ও সিদ্দিকুর ছাড়াও শীর্ষ দশে ছিলেন স্থানীয় আরেক গলফার মোহাম্মদ সজীব আলী। তিনিও সিদ্দিকুরের মতো পারের চেয়ে ৫ শট কম খেলেছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশকে যারা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আকবর হোসেন, মোহাম্মদ নাজিম। উভয়েই পারের চেয়ে ৪ শট খেলে যৌথভাবে ১২তম স্থানে রয়েছেন। শিরোপা লড়াইয়ে ফেরার সুযোগ আছে আবদুল মতিন কিংবা এম সায়ুমেরও। দুজনেই ‘৩ আন্ডার’ খেলে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।

সুযোগ আছে অন্য তিন স্থানীয় গলফার বাদল হোসেন, শাহ আলম ও মো. রাসেলেরও। তিন গলফারই প্রথম দিনে পারের চেয়ে দুই শট করে কম খেলে যৌথভাবে ৩২তম স্থানে রয়েছেন। তবে দিনটা খুবই বাজে গেছে তারকা গলফার জামাল হোসেন মোল্লাহ, সাখাওয়াত হোসেন সোহেল ও দুলাল হোসেনের। আজ খুব ভালো করতে না পারলে ‘কাট’ পাওয়াই তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

প্রথম রাউন্ডের পারফরম্যান্সে ভীষণ খুশি মুয়াজ। এর আগে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে কখনই একদিনে তিনি ‘৬ আন্ডার’ খেলতে পারেননি। নিজের পারফরম্যান্সে নিজেই অবাক, ‘বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি এত ভালো করেছি। আমি শুধু চেষ্টা করেছি মোমেন্টামটা ধরে রাখতে। আজ (গতকাল) সব কিছুই আমার ফেভারে ছিল। যা করতে চেয়েছি তাই হয়েছে।’

সব শেষ আসরে একটুর জন্য শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল সিদ্দিকুর রহমানের। তাই এবার প্রথম দিনে খুবই সাবধান ছিলেন। কোনো ঝুঁকি নেননি। প্রতিটি হোলেই তিনি ছিলেন রক্ষণাত্মক। সে কারণেই কোনো বগি খেতে হয়নি দুবারের এশিয়ার ট্যুর শিরোপা জয়ী এই তারকাকে।

নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমি খুবই চমৎকারভাবে প্রথম দিন পার করলাম। বগি ছাড়া ৫টি ‘বার্ডি’ নিয়ে প্রথম দিন শেষ করতে পারায় খুবই ভালো লাগছে। আমার পাটিং হয়েছে, তবে আরও ভালো হলে বেশ কয়েকটি বার্ডি পেতাম। তারপরও আমি খুশি। খুবই ভালো লাগছে শেষ হোলে আমি ১৫ ফুট দূর থেকে বার্ডি করেছি। পরের দিনও একই ছন্দে খেলতে চাই।’

সিদ্দিকুরের মতো সজীব আলীও প্রথম দিনে কোনো ‘বগি’ খাননি। ৫ বার্ডিতে দারুণ একদিন পার করেছেন। প্রতিক্রিয়ায় সজীব আলী বলেন, ‘এটা আমার ঘরের কোর্স। সব কিছুই আমার নখদর্পণে। দ্বিতীয় হোলে আমি ৩০ ফুট দূর থেকে বার্ডি করেছি। যা আমাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে দিয়েছিল। এই কোর্সে একদিন আমার ৯ আন্ডার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। দেখা যাক, পরের তিন রাউন্ডে কেমন হয়? তবে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সে আমি খুশি।’

গলফে সবচেয়ে কঠিন বিষয় ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। একটুখানি এদিক-সেদিক হলেই হতে পারে বড় বিপর্যয়। প্রথম দিনে তার বড় উদাহরণ দুলাল ও জামাল। দ্বিতীয় হোলে দুলাল ‘ট্রিপল বগি’ এবং জামাল ‘ডাবল বগি’ খেলে আর খেলায় ফিরতেই পারেননি।

সব কিছুর পরও প্রথম রাউন্ড শেষে শিরোপার আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। মুয়াজ, সিদ্দিকুর, সজীব, আকবর, নাজিমের চোখেই এখন বাংলাদেশের স্বপ্ন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর