সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার মিলবে কবে?

রাশেদুর রহমান

নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার মিলবে কবে?

দাবা ফেডারেশন টিমটিমে আলোর নিচে কোনোরকমে বেঁচে ছিল। সেখান থেকে নিয়াজ মোর্শেদের গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পর রাতারাতি ফেডারেশনের কদর বেড়ে যায়। দাবাড়ু দের মধ্যে নতুন উন্মাদনা দেখা দেয়। জিয়া, রিফাতরা নতুন উদ্যোমে দাবায় মনোযোগী হন। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার নেশায় পেয়ে বসেছিল যেন ওদেরকে। তিন দশকেরও বেশি আগে ১৯৮৭ সালে নিয়াজ মোর্শেদ গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন করার পর সারা দেশে সে কী উৎসব হয়েছিল। দাবা খেলাটা সেই সময় জনপ্রিয়তার চূড়ায় উঠেছিল। এরপর বহু বছরের ব্যবধানে আরও চার জন গ্র্যান্ডমাস্টারের দেখা পায় বাংলাদেশ। জিয়াউর রহমান ২০০২, রিফাত বিন সাত্তার ২০০৬, মোল্লা আবদুল্লাহ আল রাকিব ২০০৭ এবং এনামুল হোসেন ২০০৮ সালে গ্র্যান্ড মাস্টারের খেতাব অর্জন করেন। সেই থেকেই বন্ধ্যত্ব। সর্বশেষ দিন কয়েক আগে এশিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছেন ফাহাদ রহমান। ফাহাদের আগে ২০১২ সালে মিনহাজ আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছেন। ১১ বছর ধরে গ্র্যান্ডমাস্টারের দেখা নেই। ফাহাদ কী এই অবস্থা দূর করতে পারবেন!

দাবার আন্তর্জাতিক বিচারক মো. হারুন অর রশিদ এবং সর্বশেষ গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পাওয়া এনামুল হোসেন দাবায় খরার কারণ জানালেন। এক সময় দাবা ফেডারেশনকে খুব সক্রিয় একটা ফেডারেশন বলে আখ্যা দেওয়া হতো। তবে এই অবস্থা বদলে যায় ২০০৯ সালের পর। যেসব টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাস্টার ও গ্র্যান্ড মাস্টারের নর্ম অর্জন করা যায় তা বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশে গিয়ে এসব আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পরিমাণটাও কমে যায়। এর ফলে মেধা থাকার পরও নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেননি বাংলাদেশের দাবাড়ুরা।

গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন বলেন, ‘২০০৯ সালের আগে বছরে অন্তত একটা করে জিএম টুর্নামেন্ট হতো। আর ২০০৯ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত কেবল দুটো জিএম টুর্নামেন্ট হয়েছে। স্পন্সরশিপের অভাবে দেশের বাইরে গিয়েও আমাদের দাবাড়ুরা খেলতে পারেন না। দেশে বসে খেললে তো আর যোগ্যতা বুঝা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে মেধা ছিল তাতে গ্র্যান্ডমাস্টার আরও অনেক বেশি হওয়া উচিত ছিল। ২০১০ সালের কমিটি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম, এই কমিটি এলে দাবার ক্ষতি হবে। তাই হয়েছে।’ এখনো অবস্থার উন্নতি হয়নি। বর্তমান কমিটি আসার পর পতনটা ঠেকেছে বলে মনে করেন এনামুল। তবে অবস্থার উন্নতি হতে হলে আরও অনেক কাজ বাকি।

দাবার আন্তর্জাতিক বিচারক হারুন অর রশিদের কিছুটা ভিন্ন মত রয়েছে। তিনি বলছেন, ‘আমাদের টুর্নামেন্ট নাই, স্পন্সর নাই এসব ঠিক আছে। কিন্তু আরও একটা বিষয় মনে রাখতে হবে। এখনকার দাবাড়ুদের মধ্যে আগের মতো সাধনাও তো নেই।’ দাবায় কেন আগ্রহ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘আমাদের এখানে দাবার ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো নয়। ভারতের দিকে তাকালেই দেখবেন, ওখানে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া মানেই ভালো একটা সরকারি চাকরি পাওয়া। আমাদের এখানে এমন কিছু নেই। দাবাড়ু হয়ে লাভ নাই। এই কারণে অনেকে এগিয়ে আসে না।’

বর্তমানে ফিদে রেটিংয়ের হিসেবে বাংলাদেশে সক্রিয় ফিদে মাস্টার আছে ১১ জন। ৯ জন আছে ক্যান্ডিডেট মাস্টার। মহিলা ফিদে মাস্টার আছে ৪ জন। ৪ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার আছেন। কিন্তু সহসা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার সম্ভাবনা নেই কারোরই। ফিদে রেটিংয়ে বাংলাদেশের সবার উপরে থাকা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার পয়েন্ট ২৪৮৯। আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ মিনহাজের রেটিং পয়েন্ট ২৫০০ স্পর্শ করতে দেরি আছে। তাছাড়া তিনটি গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মও সংগ্রহ করতে হবে তাদেরকে। এ দুজনের সহসাই গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার সুযোগ নেই। সবমিলিয়ে আরও দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে নতুন গ্র্যান্ডমাস্টার পাওয়ার জন্য।

সর্বশেষ খবর