বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিশ্বকাপ ১৯৮৩

কপিলদের বিশ্বজয়

মেজবাহ্-উল-হক

কপিলদের বিশ্বজয়

চার বছর আগে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার ক্ষত নিয়ে ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ খেলতে যায় তারকায় ভরপুর ভারত। আসরের প্রথম ম্যাচেই টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে মিশন শুরু। তারপর ফাইনালে সেই ক্যারিবীয়দের হারিয়েই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসে ভারত।

ওই আসরে ভারত দুই ম্যাচে হেরেছিল। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জয়ে যেমন ভারতীয়রা আত্মবিশ্বাসে উড়ছিলেন তেমনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৬২ রানের হার তাদেরকে আচমকা মাটিতে নামিয়ে দেয়। পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফিরতি ম্যাচেও হেরে যায় ভারত। হারতে পারতো টানা তৃতীয় ম্যাচেও। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৭ রানে ৫ উইকেট নেই। এরপর অধিনায়ক কপিল দেবের মহাকাব্যিক ১৭৫ রানের ইনিংস এবং মদন লাল ও রজার বিনির ক্যারিশমেটিক বোলিংয়ে জিতে যায় ভারত।

গ্রুপ-বি থেকে রানার্স আপ হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে কপিল দেবরা। গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আরেক গ্রুপ থেকে আসে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। শেষ চারের লড়াইয়ে ভারত ইংল্যান্ডকে হারায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে যায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ঐতিহাসিক ফাইনালে ৬০ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৮৩ রান করেও অমরনাথ- মদন লালদের দুরন্ত বোলিংয়ে বিশ্ব জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে ভারত।

কপিল দেবের ১৭৫*

১৯৮৩-র বিশ্বকাপের কথা উঠলেই সবার আগে চলে আসে কপিল দেবের নাম। বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই নয়! জিম্বাবুয়ের সঙ্গে অপরাজিত ১৭৫ রানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন কপিল। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৭ রানেই প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারায় ভারত। এরপর আর কত দূরই বা যাওয়ার কথা! কিন্তু ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে বাইশগজে গিয়ে খেললেন ১৭৫ রানের ইনিংস। যে ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ২২ রান রজার বিনির।

রজার বিনির ১৮ উইকেট

৮৩-র বিশ্বকাপে সেরা অলরাউন্ডার। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল রজার বিনির। ১৮ উইকেট নিয়ে ওই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারের পুরস্কার জিতেছেন। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার গ্রায়েম ফাওলার ও ক্রিস তাভারেকে আউট করে ভারতকে জয়ের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ফাইনালে বিনির একমাত্র শিকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড।

হ্যাটট্রিক ফাইনাল

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৮৩তে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে। ক্লাইভ লয়েডের দল শিরোপার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও গিয়েছিল। বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জিততে পারেনি ক্যারিরীয়রা।

ফরম্যাট

আটটি দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়। গ্রুপ পর্বে প্রতিটি দল অন্য তিন দলের সঙ্গে দুবার করে খেলেছে। তারপর প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুটি করে দল সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেমিফাইনালে বিজয়ী দুই দল ফাইনাল খেলে। ৬০ ওভারের ওয়ানডে। খেলোয়াড়দের পোশাক ছিল সাদা এবং বল লাল।

 

চ্যাম্পিয়ন ভারত দল

১. কপিল দেব (অধিনায়ক), ২. মহিন্দর অমরনাথ, ৩. কীর্তি আজাদ, ৪. রজার বিনি, ৫. সুনীল গাভাস্কার, ৬. সৈয়দ কিরমানি (উইকেটরক্ষক), ৭. মদন লাল, ৮. সন্দ্বীপ পাতিল, ৯. বলউইন্ডার সান্ধু, ১০. ইয়াসপাল শর্মা, ১১. রবি শাস্ত্রী, ১২. কৃষ্ণ মাচারি শ্রীকান্ত, ১৩. সুনীল ভালসন, ১৪. দিলীপ ভেঙ্গসরকার

 

 

এক নজরে

♦          প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পায় জিম্বাবুয়ে

♦          দলীয় সর্বোচ্চ রান পাকিস্তানের- ৩৩৮/৫, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে, সোয়ানসিতে।

♦          এককভাবে সর্বোচ্চ রান করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেভিড গাউয়ার (৩৮৪)।

♦          ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের স্কোর ভারতের কপিল দেবের (১৭৫*)।

♦          সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ ১৭২*, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেশমন্ড হাইন্স ও ফাউড বাকাস।

♦          সর্বাধিক উইকেট শিকার করেন ভারতের রজার বিনি (১৮টি)।

♦          সেরা বোলিং ফিগার ৭/৫১, উইন্সটন ডেভিস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

♦          সবচেয়ে বেশি ডিসমিশাল করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেফ ডুজন (৮টি)।

♦          সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেন ভারতের কপিল দেব (৪টি)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর