রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কিছু প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশের হকির ইতিহাস লিখতে হলে কিংবদন্তী আবদুস সাদেকের নামই আসবে সবার আগে। স্বাধীনতার পর দেশের হকি নিয়ে যখন ক্রীড়ামোদীরা শঙ্কিত ছিলেন, সেই সময় সাদেকসহ আরও কজনার প্রচেষ্টায় প্রথম বিভাগ লিগ মাঠে গড়ায়। শুধু কি তাই হকির আকর্ষণ বাড়াতে আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালকে বুঝিয়ে হকি লিগে নতুন দল হিসেবে আবাহনী নামও লেখায়। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন সাদেকই। ১৯৭২ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের অভিষেক হয় সাদেকের নেতৃত্বে। বিশ্ব হকিতে পাকিস্তানের দাপট যখন তুঙ্গে। তখন জাতীয় দলে কোনো বাঙালি খেলোয়াড়ের সুযোগ পাওয়াটা স্বপ্নেই ভাবা যেত না। সেই পাকিস্তানিদের চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাদেক সুযোগ পেয়ে বুঝিয়ে দেন যতই ষড়যন্ত্র করো না কেন বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সাদেকই একমাত্র বাঙালি খেলোয়াড় যিনি যোগ্যতা দেখিয়ে পাকিস্তান জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিলেন। যা বাঙালিদের গর্ব হয়ে আছে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক সাদেকই। শাহবাজ বা ধনরাজ পিল্লাইরা যখন ঢাকায় খেলে গেছেন তাদেরও মুখে ছিল সাদেকের নাম। কেননা ছোট বেলায় থেকে শুনে এসেছেন বাংলাদেশে একজন বিখ্যাত খেলোয়াড় রয়েছেন যার নাম সাদেক। হকির প্রয়োজনে সাদেক সব সময় নিবেদিত প্রাণ। তাইতো বয়স হলেও সবার অনুরোধে নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন। একথা কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে না যে ফেডারেশনে আসার পর সাদেক, খাজা রহমতউল্লাহ্ ও অন্যদের পরিশ্রমে হকিতে এসেছে নতুনত্ব। কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা লিখে শেষ করা যাবে না। অবাক লাগে এই সাদেককে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিতে হচ্ছে।  নির্বাচন  করাটা গণতন্ত্রের অধিকার। যে কেউ যে কোনো পদে প্রার্থী হতেই পারেন। আগামীকালই হকি ফেডারেশনের নির্বাচন। সাধারণ সম্পাদক পদেও নির্বাচন হচ্ছে। হকির বৃহত্তর স্বার্থে এই খেলার চাকা সচল রাখতে অনেকেই চেয়েছিলেন সাদেককে  সাধারণ সম্পাদকের পদে রেখে হকির ঐক্যের কমিটি। যাক শেষে তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনেই ফয়সালা হবে কারা আগামীতে হকি পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন।  নির্বাচন হচ্ছে এনিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। তবু এই নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্ক ও সমালোচনার শেষ নেই। বিশেষ করে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় যা ঘটেছে তা লজ্জাকর। এতেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। কিন্তু যখন অভিযোগ উঠে কাউন্সিলরদের ভয়ভীতি প্রদর্শন তখন নির্বাচন কমিশনারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। নির্বাচন মানে উৎসব বা উদ্দীপনা। এখন যে অবস্থা তাতেতো মনে হচ্ছে ঝুঁকিতেই পড়ে গেছে হকি। অন্য কেউ ভয় বা লোভনীয় উপহার দিক না কেন সাদেক বা তার সহযোগীরা নীরবভাবে আচরণ মেনেই প্রচার চালিয়ে গেছেন। সাদেকদের একটাই কথা যোগ্য মনে করলে ভোট দেবেন। সাদেকের যোগ্যতাতো শুধু হকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনিতো ক্রীড়াঙ্গনের একজন সাহসী সৈনিক। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আবাহনীকে ধ্বংস করে দেওয়ার কমতো চেষ্টা চালানো হয়নি। প্রাণের ভয়ে আবাহনী ফুটবলাররা যখন ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না। তখন সাদেকই সাহসের সঙ্গে সবাইকে এক করে আবাহনীকে মাঠে নামান।  বিখ্যাত ফুটবলার প্রয়াত অমলেস সেন এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন সাদেক ভাই সাহস না জোগালে হয়তো ১৯৭৫ সালেই আবাহনী শেষ হয়ে যেত। যে সাদেকের সাহসী ভূমিকায় শেখ কামালের আবাহনী এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার তুলনা কি কারও সঙ্গে চলে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর