রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

টাইগারদের শক্তি মিডলঅর্ডার

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের শক্তি মিডলঅর্ডার

কার্ডিফে সাকিব মাহমুদুল্লাহর ২২৪ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ -ফাইল ছবি

ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিকাংশ সাফল্যই এসেছে ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে। বোলাররা ছিলেন সহায়ক ভূমিকায়। আর টাইগারদের ব্যাটিংয়ের মূল শক্তি মিডলঅর্ডার। যেদিন মিডলঅর্ডার ভালো খেলে সেদিন বড় স্কোর হয়। দলও জয় পায়! মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের দাপুটে পারফরম্যান্সেই ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছার পেছনেও প্রধান ভূমিকা ছিল মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের।

ইংল্যান্ডের উইকেটগুলো হচ্ছে ব্যাটিং স্বর্গ। তাই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ভালো খেলার বিকল্প নেই।

কিন্তু কারা খেলবেন মিডলঅর্ডারে? তিন নম্বরে সাকিব আল হাসান, চারে মুশফিকুর রহিম, পাঁচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ছয়ে মোহাম্মদ মিথুন -এই চারজনই ভরসা। ইংল্যান্ডের মাটিতে সবশেষ অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মিথুন খেলেননি। কিন্তু সাকিব-মুশফিক-রিয়াদের দুরন্ত ব্যাটিংয়েই সাফল্যের মুখ দেখেছিল বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ যে চারটি ম্যাচ খেলেছিল সেখানে দলীয় মোট রানের শতকরা ২৮.৭৫ ভাগ এসেছিল তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। জাদুকরি ব্যাটিং করে টুর্নামেন্টেই তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন বাংলাদেশের এই ড্যাসিং ওপেনার। ওই আসরে ৫টি করে ম্যাচ খেলে ভারতের শিখর ধাওয়ান ৩৩৮ রান করে শীর্ষে, রোহিত শর্মা ৩০৪ রান করে দ্বিতীয় এবং এক ম্যাচ কম খেলে তামিম ২৯৩ রান করেছেন।

বাংলাদেশের দলীয় মোট রানের ১৬.৪৯ ভাগ এসেছিল সাকিবের ব্যাট থেকে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ৪২.০০ গড়ে করেছিলেন ১৬৮ রান। মুশফিকুর করেছিলেন ১৬৩ রান, যা মোট রানের ১৬.০০ ভাগ। এছাড়া দলীয় রানের ১৩.৪৪ ভাগ এসেছিল মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে। তামিমের পরই সবচেয়ে বেশি গড় ছিল এই ক্লাসিক ব্যাটসম্যানের, ৬৮.৫০।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগারদের মিডলঅর্ডার আসল ক্যারিশমা দেখিয়েছিল কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে। কিউইদের দেওয়া ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকেই গিয়েছিল মাশরাফি। কিন্তু পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ মিলে ২২৪ রানের মহাকাব্যিক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে উপহার দেন নাটকীয় এক জয়। ওই ম্যাচে ১১৫ বলে ১১৪ রানের রোমাঞ্চকর এক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন সাকিব। মাহমুদুল্লাহ খেলেছিলেন ১০৭ বলে ১০২ রানের অপরাজিত এক ইনিংস।

বাংলাদেশ দলের প্রাণ যে সাকিব, তা অনেকবারই প্রমাণ করেছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার। তবে বিশ্বকাপে টাইগারদের সবচেয়ে বড় তারকা কিন্তু মাহমুদুল্লাহই। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি আছে এই কø্যাসিক ব্যাটসম্যানের। তা ছাড়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র মাহমুদুল্লাহই সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। এবার তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে দেশ।

মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। নির্ভরতার প্রতীক। টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপের ‘নিউক্লিয়াস’ বলা হয় তাকে। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মিস্টার ডিপেন্ডেবল সেঞ্চুরি করতে না পারলেও চার ম্যাচে তিনি দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ক্যারিয়ারের ২০১ ওয়ানডেতে মুশফিকের ব্যাটিং গড় ৩৪.৫৬, কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে তার গড় ৩৭.০০।

জাতীয় দলে মিথুনের ক্যারিয়ার লম্বা নয়। মাত্র ১৫ ওয়ানডে খেলেছেন। কোনো সেঞ্চুরি না থাকলেও চারটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। আর অর্ধশত চার ইনিংসই দেশের বাইরে। দুটি গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে, বাকি দুটি নিউজিল্যান্ডে। সব শেষ খেলা দুই ম্যাচে কিউইদের মাটিতে হাফ সেঞ্চুরি করে যেন অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মিথুন। দলের কঠিন সময়ে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখে যেভাবে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা ছিল প্রশংসনীয়। লোয়ার মিডলঅর্ডারে তিনি দলে আস্থার প্রতীক হয়ে গেছেন।

চার ব্যাটসম্যান সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মিথুনের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে দলের ভাগ্য। মিডলঅর্ডারের ব্যাটে রান না থাকলে ধুঁকবে টাইগাররা আর রানের ফোয়ারা ফুটলে হাসবে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর